আইভি চট্টোপাধ্যায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাসে উঠতেই চোখ পড়েছিল। জানলার পাশে বসে মেয়েটা। একটাও বসার জায়গা খালি নেই, মেয়েটার পাশে লেডিস-সিটের জায়গাটা খালি। দৃষ্টির একটা তরঙ্গ আছে, মেয়েটা মুখ ফেরালো।


‘আরে’, একসঙ্গেই বলে উঠল তারপর।


‘কবে এলে?’


‘এই তো, কিন্তু তুমি এখানে? শুনেছিলাম অবশ্য যে কাকু বদলি হয়ে এসেছেন। ভেবেছিলাম কাকু একাই...’


হেসে উঠল রূপশ্রী, ঝরঝরে হাসিটা কতদিন পরে। ঘোর লেগে গেল রাহুলের। ছোটবেলায় সাইকেলের সামনে, কলেজবেলায় মোটরসাইকেলের পেছনে। ছোটবেলায় ননীদার দোকানের ঝাল ঝাল চানাচুর, কলেজবেলায় কফি হাউস। আইনক্স থেকে নন্দন, অ্যাকাডেমী, বইমেলা। ঝরঝরে হাসি, আর অনর্গল কথা।


‘এখনও আমাদের খবর শুনতে পাও তুমি? ঝাঁ-চকচকে শহরের রোশনাই, কত হৈ-হট্টগোল, আইপিএল সিনেমা ডিস্ক...’ এই হল রূপশ্রী। সর্বদাই উছলে পড়া, সারা অবয়ব জুড়ে আনন্দ। তবে কেন মিতাকাকিমা দু:খ করেছে মায়ের কাছে যে, রূপু আজকাল হাসে না?


‘আপনাদের আলাপটা বসে বসে হয় না?’ পাশের দাঁড়িয়ে থাকা সহযাত্রী বিরক্ত, ‘আমার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছেন কেন?’


‘চেনা যখন, বসেই পড়ুন’, আরেকজন ফুট কাটলেন।


তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়িয়েছে রূপশ্রী, ‘আমি নামব।‘ নেমে পড়ল দুজনেই।


‘শুনলাম, বিদেশ যাচ্ছ?’


‘ও, তার মানে তুমিও এই অধমের কথা একটু আধটু শুনতে পাও।‘


‘পাব না কেন? শিপ্রা কাকিমা আর মা তো এখন ফেসবুক-বন্ধু‘, হেসে গড়িয়ে পড়ল প্রায়।


‘আর তুমি? তুমি কেন ফেসবুকে নেই? জানো, কত খুঁজেছি তোমায়?’


‘কেন? আমাকে খুঁজে তোমার কি? কত সুন্দর সুন্দর বন্ধু তোমার, প্রোফাইলে হাত ধরে ছবি…’


‘দাঁড়াও, দাঁড়াও। প্রোফাইলে ছবি তো কুমায়ুন বেড়াতে গিয়ে তোলা, পাহাড়ের ছবি।‘


‘তাই বুঝি? পাহাড়ের সামনে তোমার পাশে লাল স্কার্ফ মেয়েটা তোমার হাত ধরে নেই? ফেসবুক-স্ট্যাটাস কমিটেড, আমি বুঝি না কিছু?’


‘হ্যাঁ, তোমার মতো বুদ্ধিমতী তো সারা দুনিয়ায় নেই। স্টুপিড। চিরকালের স্টুপিড। আমি কি আজ থেকে কমিটেড? ক্লাস ইলেভেনে আমাকে একটা মেয়ে...’ গলা ধরে এল। আহা, পুরুষ বলে কি কান্না আসতে নেই?


‘বাইরে পড়তে গেলাম, আর তুমি সব সম্পর্ক ভুলে গেলে। ফোন ধরতে না, নম্বর বদলে নিলে। সবাইকে বারণ করেছ আমায় নম্বর দিতে। ল্যান্ড-লাইনে ফোন করলেও ধরোনি, মিতা কাকিমা বলেছে তুমি বাড়ি নেই। ফেসবুকে ব্লক করেছ, নাকি ফেসবুক-অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছ।’


‘তুমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলে, নতুন শহরে নতুন জীবন কাটাবে। শ্রেয়াকে বলেছিলে, রূপু স্টুপিড, ওর সঙ্গে থাকা যায় না।’


‘স্টুপিড তো তুমি বটেই।’


‘আবার? আবার তুমি আমাকে স্টুপিড বললে?’


‘বললাম তো, এখন চলো। কাকু-কাকিমার সঙ্গে দেখা করে যাই। মা-বাপী আসবে কাল। তিনবছরের জন্যে যাচ্ছি, তোমাকে আর সুযোগ দেব না।‘


‘কিসের সুযোগ?’


‘ওই যা যা করেছ এই ক’বছর । বিয়ে নাহয় ছুটি নিয়ে এসে করব, কিন্তু পাসপোর্ট ভিসা এসব কাজ এগিয়ে রাখতে হবে না? রূপু পাগলী এত জানো আর এটুকু বোঝো না যে, স্টুপিড কথাটার মানে তোমায় ভালোবাসি?’ (আরও পড়ুন- অঙ্কের কোচিং)