ভাড়াবাড়ি

 


সবুজ  বিশ্বাস

আমাদের পাড়ার এক সিং কাকাবাবু সকালে বেড়িয়ে দুপুরে ঘরে ফেরেন। আহারবিহার সেরে সিংজী আবার বেড়িয়ে রাতে ঘরে ফেরেন। উনার প্রথম কাজ পাড়া রক বা চায়ে ঠেকে বসে তাস খেলা। দ্বিতীয় কাজ তাস খেলা এবং তৃতীয় কাজও তাস খেলা। আর থেমে থেমে পকেট  থেকে দাবি ব্রান্ডের সিগারেটটা বের করে, টান দেওয়া। অনেকে অবাক হন লোকটা করেন কী? ওই তো তাস খেলেন। তবে, ইনকাম কোথা থেকে আসে? জমিদার বাড়ির একমাত্র ছেলে বাবার যা জমিজমা ছিল ক্ষেপে ক্ষেপে তা বেঁচে দেন। একসময় সংসার চালাতে, পুরোনো আমলের বড়ো বাড়িটার কয়েকটি ঘর ভাড়া দিয়ে দেন। সেই ভাড়া থেকে যা আয় হয় তাতেই সংসার চলে। তবুও কাজ ওই একটাই, তাস...!

একদিন এমন পরিস্থিতি এলো, নিজের গোটা বাড়িটায় এক ভাড়াটিয়ার কাছে বেঁচে দেন। ইচ্ছে, কলকাতায় ছেলের কাছে গিয়ে, নাতিপুতিদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। তিনি জীবনে কিছু না করলেও একমাত্র ছেলেকে মানুষ করেছেন। ছেলে কোম্পানির উঁচু পদে চাকুরে। মেয়েকেও কলকাতায় পাত্রস্থ করেছেন। ফলে, শেষমেস কাকা বাবু তাই করলেন। চলে গেলেন কলকাতায়। কিছুদিন যেতেই শহুরে জীবনে হাঁপিয়ে উঠলেন। এদিকে, মেয়ের মন্দ ভাগ্য। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছেন। সিং কাকুও বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে এলেন। কিন্তু, থাকবেন কোথায়? তাই তিনি একটা ভাড়াবাড়ি খুঁজছেন। শুনেছি, তাঁর বিক্রি করে দেওয়া বাড়িতেই তিনি এখন বাড়িভাড়া নিয়ে থাকেন।