সাম্যব্রত জোয়ারদার: কোথায় কী ঘটে চলে নিরন্তর। কে কার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। হাত ছেড়ে দেয় কেউ ঘুমের ভিতর। ঘুম ভেঙে বাইরের আকাশে মেঘের বাটি উপুড় করা। বিসর্জনের ডুবে যাওয়া মুখ। সম্পর্কের ছিন্ন চাঁদমালা। অবিরাম মন খালি করা এক বাদ্যি। খুব ভোরবেলা দশমীর সকালে ঠাকুর মণ্ডপ পার করে সেই বাদ্যি গলি ধরে এগিয়ে আসে। বাজাতে বাজাতে দূরে সরে যায়। শেষ শরতের হিম-গন্ধে ঝরে পড়ে মনোবেদনার পালক। একদিন খুঁজেছিনু যারে বকের পাখার ভিড়ে বাদলের গোধূলি-আঁধারে, মালতীলতার বনে, কদমের তলে...


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গড়িয়াহাটের দিক থেকে শরতের মেঘ ইউ টার্ন করে। ভিজিয়ে দেয় এক পশলা। হই-হই রাস্তা পার হয় হরিণীর দল। সেই দৃশ্য কতদিন স্থির হয়ে থাকে গুগলের ক্লাউডে। বার বার ঘুরে ফিরে আসে ডাউন মেমোরি লেনের গলি, তস্য-গলির ভিতর। একটা ছাতিম গাছের আঘ্রাণে। ছোট চা-দোকানের হেলান দেওয়া সাইকেলে। কপালের উপর পড়ে থাকা অন্যমনস্ক চুলের দলছুট টিপে।


ছেলেবেলার চোরকাঁটা ভরা মাঠ পার করে পুজোর ছুটি এসে পড়ে। পায়ের পাতায় কেমন শীত শীত ভাব। হাতের আঙুলগুলো ভিজে ভিজে মনে হয়। ঝিলের জলে শাপলা পাতার পাশে ছুটির ছায়া টলমল করে। মেঘের দল উড়ে উড়ে চলে পিছনের টানা মাঠ, ট্রেনলাইন, তার পাশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জানলা, ভাঙাচোরা টিনের শেড, একটা উঁচু গাছের মাথা ছুঁয়ে ছুঁয়ে... কোনদিকে, কতদূরে যে তার ঠিকানা এক সময় আর ঠাহর করা যায় না। রেডিয়োয় গান বাজে 'এক খানা মেঘ ভেসে এল আকাশে, এক ঝাঁক বুনো হাঁস পথ হারাল'।


আর মাত্র একটা স্টেশন। জানলার গায়ে সরে সরে যায় গাছপালা, ছোট রেলব্রিজ, কাদের একটা বাড়িতে ধোঁয়া দিয়েছে। সরু হয়ে উপরে উঠে পাক খাচ্ছে। কয়েকটা হাঁস পুকুর থেকে উঠে গা-ঝাড়া দিচ্ছে। শেষবেলায় সন্ধে নামার আগে কে যেন পুরোনো ডাক-নাম ধরে ডাকে। কারশেডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অদ্ভুত তাল আর শব্দের অনুরণন। আর মাত্র একটা স্টেশন। হাওড়া স্টেশনের আগে সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেন। হুইশল্ দিচ্ছে।


একদিন খুঁজেছিনু এইসব। রাংচিতের বেড়ার গায়ে অস্থির ফড়িংয়ের পাখায়। দেশলাই বাক্সের ভিতর টিপপোকার ছিটে। শহর চেনাল নকশার নাম পোলকা ডট। লবনহ্রদের কাশবনের ভিতর স্কুল পালানোর রাস্তায় একদিন মাথা তুলল অতিকায় আলিশান শপিং মল। মাল্টিপ্লেক্স। কাশেরজঙ্গল ছেড়ে হলুদ পাখিদের পরিবার কোথায় যে চলে গেল! কখনও কখনও শেষ শরতের হিম-গন্ধে আজও ঝরে পড়ে তার মনোবেদনার পালক।


ছুটি শেষের বেলায় কে কার হাত ধরে। হাত বাড়িয়ে দেয় নতুন বন্ধুর দিকে। হাত ছেড়েও দেয় কেউ ঘুমের ভিতর। দশমীর সকালে ঠাকুর মণ্ডপ ছেড়ে ঢাকির দল গলির পথ ধরে। আবহমান বিসর্জনের সুর পাড়ার উঠোন ছেড়ে দূরে সরে যেতে থাকে। শহর পার করে। রেলস্টেশন পার করে। শাপলার-ঝিল পার করে। হইহই রাস্তা পার করে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জানলা, ভাঙাচোরা টিনশেড, একটা উঁচু গাছের মাথা পার করে, কোনদিকে, কোথায় যে যায়... তার ঠিকানা এক সময় আর ঠাহর করা যায় না।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)