সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দুর্গাপুজোর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র নিয়ে কখনও কখনও কোথাও কোথাও একটু ধন্দ তৈরি হয়। তৈরি হয় সংশয়। এ বিষয়ে সাধারণত দু'রকম মত প্রচলিত। এক পক্ষের মত, একই মন্ত্র চারদিন উচ্চারণ করতে হয়। অন্য পক্ষ বলেন, চারদিন চারটি ভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণই রীতি। এই ভিন্ন মন্ত্রের দিকেই অবশ্য পাল্লা ভারী। তবে, এর বাইরেও কথা আছে। সাধারণত, মণ্ডপে-মণ্ডপে বা বিভিন্ন বাড়ির পুজোগুলিতে কখনও কখনও সংশ্লিষ্ট পুরোহিত হয়তো একটু স্বাধীনতা নেন বলে শোনা যায়। তাঁরা চণ্ডীর ভিন্ন ভিন্ন শ্লোক মন্ত্র হিসেবে অনেক সময়ে তুলে আনেন নিজের মতো করেই। আর সেই সব শুনে মনে হয়, এগুলি বুঝি ভিন্ন কোনও মন্ত্র; আরও মনে হয়, ইনি হয়তো প্রথাসিদ্ধ মন্ত্র-ঐতিহ্যে কোনও ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন, নতুবা ইনিই হয়তো ঠিক করছেন, অন্যেরা ভুল।


যাই হোক, এই সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব সংশয়-সন্দেহ ভুলে আপাতত, কালিকাপুরাণের প্রসঙ্গে আসা যাক। কিছু কিছু পুরোহিত-বর্গ পুষ্পাঞ্জলির ক্ষেত্রে কালিকাপুরাণে নির্দিষ্ট মন্ত্র ও নিয়ম-পদ্ধতির কথা বলেন। এখানে সেই অনুসারে নির্দিষ্ট মন্ত্র ও তার বাংলা অর্থ দেওয়া হল:


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: জানেন, দেবীর আশীর্বাদ পেতে ঠিক কীভাবে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া উচিত?


১) ওঁ আয়ুর্দেহি যশো দেহি। ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে। পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি সর্বান্ কামাংশ্চ দেহি মে।। 
এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ হ্রীং ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ।


২) (ওঁ) হর পাপং হর কেশং হর শোকং হরাসুখম্ হর। রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে।।
এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ হ্রীং ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ।


৩) (ওঁ) কায়েন মনসা বাচা কর্মণা যৎ কৃতং ময়া। জ্ঞানাজ্ঞানকৃতং পাপং দুর্গে ত্বং হর দুর্গতিম্।।
এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ হ্রীং ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ।


এরপর প্রণামমন্ত্র:


ওঁ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। 
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে।। 


পড়ুন আমাদের উৎসব স্পেশাল ই-ম্যাগাজিন


এবার বাংলা অর্থ:


১) হে ভগবতি! তুমি আমাকে (দীর্ঘ) আয়ু দাও, যশস্বী করো, ভাগ্যবান করো, পুত্রবান ও ধনবান করো এবং আমার সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করো। 


২) হে শিবপ্রিয়ে, আমার পাপ, ক্লেশ, শোক, অসুখ, রোগ, ক্ষোভ ও মারী নাশ করো। 


৩) জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দেহ মন বাক্য ও কর্মের দ্বারা আমি যে পাপ করেছি, হে দুর্গে, সেই পাপ তুমি হরণ করো এবং আমার সমস্ত দুর্গতি দূর করো!


দেবী দুর্গাকে পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী, কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্যে এবং আগমনীগানে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর কথা আছে। রয়েছে তাঁর বিবাহিত জীবনের বর্ণনা। রয়েছে সপরিবার পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলির কথাও। হিমালয়গৃহে বা বাপের বাড়িতে দুর্গার এই দিনগুলিই হল আমাদের এই সাধের দুর্গাপূজা। সেই পুজোয় আচারের কড়াকড়ি যেমন থাকে, তেমনই থাকে মনের স্বাভাবিক আবেগের আনন্দোচ্ছলতা। আগামী ক'দিন বাঙালি তাই যুগপৎ এই মন্ত্রে-তন্ত্রে মজে থাক! সার্থক হোক শারদীয়া উৎসব।


(ঋণস্বীকার: হাওড়া জেলার বাগনান-নিবাসী শ্রীবিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর দেওয়া তথ্য অনুসারে)


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)