সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মহালয়া আমাদের পুরাণ, ধর্ম, কাব্য-- সব কিছুতেই জড়িয়ে রয়েছে। যেমন 'মহাভারত'। 'মহাভারতে'র অতি বর্ণিল চরিত্র কর্ণের নাম এই মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। 'মহাভারত' অনুসারে, মৃত্যুর পরে কর্ণকে ফিরতে হয়েছিল পৃথিবীতে। ফিরতে হয়েছিল এই পিতৃপক্ষেই। কেন? এর পিছনে একটি কাহিনি রয়েছে। কুরুক্ষেত্রযুদ্ধে মৃত্যুর পরে কর্ণ স্বর্গে গেলেন। সেখানে কর্ণকে সোনা এবং বিভিন্ন রত্ন ইত্যাদি খেতে দেওয়া হল। খাবার দেখে তো কর্ণ বেজায় আশ্চর্য! কর্ণ এর কারণ জানতে চাইলেন! তখন তাঁকে বলা হল, কর্ণ কোনও দিনই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য বা জল দান করেননি। তিনি সকলকে শুধু সোনা এবং রত্নই দান করেছেন। সেই কারণেই স্বর্গে আসার পর তাঁকেও সোনা বা রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। সব শুনে কর্ণ স্বীকার করলেন, তিনি পিতৃপুরুষ সম্পর্কে সত্যিই অবহিত ছিলেন না। তাই পিতৃপুরুষকে অন্ন এবং জল দান করেননি তিনি। তা হলে এখন কী করা যায়? কর্ণকে তখন এক পক্ষকাল সময় দেওয়া হল। বলা হল, এই সময়-পর্বে পিতৃপুরুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তিনি মর্ত্যলোক তথা পৃথিবীতে গিয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্য়ে জল দান করবেন। যে-সময়ে কর্ণকে পৃথিবীতে পাঠানো হল সেই সময়কালটি ছিল এই পিতৃপক্ষ। ফলে পিতৃপক্ষ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: রবিবার মহালয়া! জেনে নিন কেন দিনটি এত বিশিষ্ট, কী এর তাৎপর্য...


ফলে পিতৃপক্ষ এবং পিতৃপক্ষের অবসানলগ্ন ভারতীয় জনজীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাৎপর্যপূর্ণ বঙ্গজীবনেও। কেননা, এই মহালয়া থেকেই মোটামুটি পুজোর আবহের শুরু বাংলায়। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিতে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠ শোনার মধ্যে দিয়েই মনের ভিতরে পুজো-পুজো ভাবের শুরু। মহালয়া হল পিতৃপক্ষ দেবীপক্ষের সন্ধিদিন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত (যা আশ্বিন মাসে পড়ে) সময় পিতৃপক্ষ। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ক'দিন মনুষ্যলোকের নিকটে আসেন। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করাই রীতি। লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়। এই বিশ্বাস থেকেই গোটা (পিতৃ)পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তর্পণ করা হয়। মর্ত্যে ১৫ দিন ধরে এই স্মরণ-তর্পণ করার জন্যই পাঠানো হয়েছিল কর্ণকে। যে-সময়কালের চূড়ান্ত দিন বা মহা লগ্ন হল মহালয়া। অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিন হল দেবীপক্ষ।


শাস্ত্রমতে, মহালয়া হল একটি অমাবস্যা তিথি, এ তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ-তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান বলে বিশ্বাস। তাঁরা এই প্রাপ্তিতে আমাদের আশীর্বাদও করেন। এছাড়া মহালয়ার দিনে অনেক জায়গায় দেবী দুর্গার বোধনও হয়। 'বোধন' অর্থে জাগরণ। মহালয়ার পরে দেবীপক্ষের তথা মাতৃপক্ষের তথা শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সুচনা করা হয়।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)