সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সাধারণত মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটি 'মাতৃদিবস' হিসেবে পালিত হয়। সেই হিসেবে ৮ মে 'মাদার্স ডে'। দিনটি মায়েদের জন্য উৎসর্গীকৃত। মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানানোর দিন। সন্তানের তো মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা শ্রদ্ধার কোনও শেষ থাকতে পারে না, কোনও বিধি থাকতে পারে না, কোনও দিন-তিথিও থাকতে পারে না। মা সারা বছরের, সারা দিনের, প্রতিটি মুহূর্তের। মা এমন এক অস্তিত্ব যাকে বাদ দিলে সন্তানের অস্তিত্বই নড়বড়ে হয়ে যায়। তবুও মা'কে নিয়ে মানুষ ভাবেন, একটা বিশেষ দিন খুঁজে নিয়ে মা'কে আলাদা করে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানান। সেটারও একটা নিভৃত আনন্দ আর উদযাপনের তাৎপর্য আছে। এ দিনে লক্ষ্য রেখেই চলে আসছে 'মাদার্স ডে'র উৎসব।


'মাদার্স ডে' হালের ব্যাপার হতে পারে, তবে 'মা' বিষয়টি নিয়ে যুগে যুগে লেখক কবি-সাহিত্যিকরা নানা রকম ভাবে ভেবেছেন। নিজেদের লেখায় মাকে নিজেদের মতো করে এঁকেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্যে মা এসেছেন, এসেছেন শরৎচন্দ্রের রচনায়, মা'কে বিচিত্র ভাবে পাওয়া গিয়েছে বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাতেও। 


রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং অবশ্য বলেছেন তিনি যেহেতু তাঁর জীবনে মা'কে সেভাবে পাননি (অতি অল্প বয়সেই মাতৃহারা হন কবি), তাই তাঁর লেখাতেও তিনি 'মা' চরিত্রকে তেমন করে আঁকতে পারেননি। কিন্তু তিনি তো রবীন্দ্রনাথ। তাঁর পারসেপশন তো অন্য মাত্রার। ফলে ভালো করে আঁকতে না পারার কথা বলেও তিনি তাঁর বেশ কিছু লেখায় দারুণ সব মাতৃচরিত্রের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে উজ্জ্বল সম্ভবত 'গোরা' উপন্যাসের 'আনন্দময়ী' চরিত্রটি। গোরা বিনয় এই দুই চরিত্র তাঁকে ঘিরেই যেন নানা দ্বন্দ্ব-ভালোবাসার টানাপড়েনে ভেসে চলে আর উপন্যাসও এগিয়ে চলে।  


নারীচরিত্রের স্মরণীয় শিল্পী শরৎচন্দ্র। তাঁর কলমেই বাংলার নারীরা প্রথম সর্বাধিক উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেয়, অনপনেয় ছাপ ফেলে যায় পাঠকমনে। কত কত চরিত্র যে তিনি সার্থক ভাবে এঁকেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তাঁর 'মেজদিদি' চরিত্রটি 'দিদি' হলেও যেন সাক্ষাৎ মাতৃত্বেরই প্রতিমূর্তি। তাঁর 'রামের সুমতি'র নারায়ণী বা 'বিন্দুর ছেলে'র বিন্দুবাসিনী চরিত্র দু'টি অসাধারণ মাতৃত্বের নিদর্শন। শ্রীকান্ত উপন্যাসের 'অন্নদাদিদি' চরিত্রটিও কি কম গভীর ও ব্যাপক? এই নারীচরিত্রটিও মাতৃত্ববোধে অন্যরকম ভাবে জাগ্রত, দীপিত। 


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যচর্চায় নানা স্মরণীয় মাতৃমূর্তি অঙ্কন করেছেন। কিন্তু তাঁর একটি মাতৃচরিত্র যেন সর্বোচ্চ শিখরে আসীন। চরিত্রটি হল 'সর্বজয়া', অপুর মা তিনি। এই একটি আটপৌরে মাতৃচরিত্র এত জীবন্ত এত মর্মস্পর্শী এত রিয়েল যে তাকে যেন ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়, যেন মনে হয়, এই মা তো আমরা আমাদের ঘরেই দেখি। অপুর বাবা ছোট বয়সেই মারা যান। তারপর ছোট্ট অপুকে নিয়ে সর্বজয়ার দীর্ঘ রক্তঝরানো লড়াই। কত কষ্ট, কত বঞ্চনা, কত লাঞ্ছনা, কত অপমান সহ্য করে যে তিনি ধীরে ধীরে অপুকে বড় করে তোলেন! 'পথের পাঁচালী' এবং 'অপরাজিত' পড়তে পড়তে অপুর জার্নির সঙ্গে যখন মর্মে-মর্মে পাঠক জড়িয়ে পড়েন তখনও তঁদের মনে সর্বজয়ার জন্যও একটা দারুণ কষ্ট যেন গলার ভিতরে দলা পাকিয়ে ওঠে! এখানেই লেখকের চরিত্রসৃষ্টির সার্থকতা, মহত্ত্বও!


আর এক মাতৃচরিত্র আমরা পাই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'জননী' উপন্যাসে। এক বালিকাবধূ থেকে জননী হয়ে ওঠার কাহিনি এই 'জননী'। এক কিশোরীবধূ থেকে তরুণীমায়ের আত্মত্যাগের কাহিনি 'জননী'। মানিকের প্রথমদিকের রচনা এই উপন্যাসে শ্যামা চরিত্রটি দারুণ ভাবে মাতৃরূপে বিকশিত হয়ে ওঠে, যার বৈভব পাঠককে আদ্যন্ত আদৃত রাখে। 


আরও পড়ুন- Mother's Day 2022: এ এক 'অন্য' মায়ের গল্প!


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)