ওয়েব ডেস্ক: জুতোর ইতিহাস। এও এক নিঃশব্দ বিপ্লবের ইতিহাস। অবাক হচ্ছেন, মনে হচ্ছে তো জুতোয় আবার কিসের বিপ্লব? শুনতে অবাক লাগলেও, এই জুতোয় একসময় ছিল রাজা-রাজড়াদের অধিকার। আমআদমির এই জিনিস পায়ে গলালেই ছিল গর্দানের হুকুম। আজ সেই জুতোই আমআদমির চলাফেরার অপরিহার্য অঙ্গ। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কহিলা  হবু ,শুন গো গোবুরায় 
কালিকে আমি ভেবেছি সারারাত্র
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী-মাঝে চরণ ফেলা মাত্র!
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এক করিব প্রতিকার,
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।


রেগে আগুন তেলে বেগুন রাজার নির্দেশে থরহরি কম্পমান মন্ত্রী,পাত্র,মিত্র উজির সবাই। সবাই লেগে পড়ল সেই আশ্চর্য বস্তুর খোঁজে। রাজার  ফতোয়ায় আবিষ্কার হল জুতো। মানুষের প্রথম পা- জামা। কিন্তু এই পাদুকা পুরাণের ইতিহাস বহু প্রাচীন। কালে  বদলেছে তার রূপ, স্টাইল, ফ্যাশন।


পাদুকা-পুরাণ


স্পেনের  প্রাচীন গুহায় ১৫০০০ হাজার বছর আগের কিছু গুহাচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। সেই গুহাচিত্রে দেখতে পাওয়া যায় আদিম মানুষদের পায়ে পশুর চামড়া জড়ানো ছিল।


৫০০০ বছর আগে  হিমযুগের মানুষরা খড়যুক্ত চামড়ায় মোড়া জুতো পরত।


এশিয়াতে কাঠের জুতোর প্রচলন ছিল।



রাজতন্ত্রে জুতো


ইউরোপে কিছু অঞ্চলে জুতো পরার অধিকার ছিল শুধু  রাজাদের । কোনও প্রজা যদি জুতো পরত তাকে রাজার আদেশে হত্যা পর্যন্ত করা হত। 


হাইহিল জুতোর প্রথম প্রচলন শুরু হয় ফ্রান্সে। 


ষোড়শ লুই প্রথম হাইহিল জুতোর প্রচলন করেন।


রাজতন্ত্রে জুতো ছিল বনেদিআনা আর বিত্তশালীদের পরিচয়।


স্যান্ডেলের প্রথম ব্যবহার শুরু করে মিশর।


মিশরের ফারাও রাজারা স্যান্ডেল পরে রাজকার্য পরিচালনা করতেন।


মিশরেও ফারাও ছাড়া রাষ্ট্রের অন্য কারো জুতো পরা নিষিদ্ধ ছিল।


উত্তর আমেরিকার ইন্ডিয়ান জাতিগোষ্ঠী ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য একপ্রকার জুতো তৈরি করে। যার নাম ছিল মোকাসিন।


জুতো তৈরিতে আইনও তৈরি করেছিলেন রানী এলিজাবেথ।  রানীর ফতোয়া ছিল জুতো শুধু রাজপরিবারের জন্যেই তৈরি করতে হবে।


১৮৫০ সালের আগে পর্যন্ত জুতো আমদানি বা রফতানি করা নিষিদ্ধ ছিল।


জুতো গবেষকরা বলছেন, ৫ হাজার ৫০০ খৃষ্টপূর্বে পূর্ণাঙ্গ জুতো তৈরি হয়।


আর্মেনিয়ার এরিনিয়া-১ নামক গুহায় ইতিহাসখ্যাত ওই জুতোর সন্ধান মিলেছে।


গবেষকদের অনুমান, বিশ্বের প্রথম জুতো তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের ইরানের সীমান্ত এলাকায়। পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রথম জুতো তৈরি হয়েছিল। 



ভারতেও জুতোর সুপ্রাচীন ইতিহাস আছে। রামায়নে উল্লেখ আছে রামের অনুপস্থিতিতে ভরত যখন সিংহাসনে বসেন তখন সিংহাসনে তার পাদুকা যুগল সিংহাসনে রেখেই রাজ্য পরিচালনা করেন। খ্রিষ্ট জন্মের আনেক আগেই মহাকবি কালিদাস তার কাদম্বরী গ্রন্থে সন্ন্যাসীদের নারকেলের ছোবড়া দিয়ে পাদুকা ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। 


আধুনিক জুতো


পাদুকার প্রথম আধুনিকায়নে হাত দিয়েছিল ইউরোপীয়রা।


১৮০০ শতকে জাপানিরা কাঠ দিয়ে তৈরি করে ওকোবা নামে একপ্রকার জুতো। সাধারণত বৃষ্টির দিনে কাদা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এজুতো পায়ে দিত জাপানের তরুণীরা। 


ভারতবর্ষে ১৭০০ শতকে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল কাঠের খড়ম।


ডান ও বাম পায়ের আলাদা জুতো তৈরির ইতিহাস খুব বেশি প্রাচীন নয়। মাত্র দেড় হাজার বছর আগে দুই পায়ের জন্য আলাদা জুতো তৈরি হয়।


এভাবেই দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে  নিঃশব্দে ঘটে গেছে পাদুকা বিপ্লব। ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে জুতোর কনসেপ্ট। একসময় যা ছিল শুধু মাত্র আভিজাত্যের প্রতীক। আজ তা আম আদমির। জুতো ছাড়া রাস্তায় বেরনোর কথা ভাবাই যায় না। দিনযাপনের অপরিহার্য অঙ্গ। ভুতের রাজার কাছে তাই তো মনের সাধে বেড়ানোর জন্য তিন বরের মধ্যে জুতোকেই বেছে নিয়েছিল গুপি বাঘা।