জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আগামীকালই মহালয়া। এবার ২ অক্টোবর মহালয়া পড়েছে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে মহালয়া ওতপ্রোত জড়িত হলেও দুর্গাপুজোর সঙ্গে এর সরাসরি কোনও যোগ নেই। শাস্ত্রমতে, মহালয়া অমাবস্যা তিথি, এ তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ কিংবা তর্পণ করা হয়। বিশ্বাস, এদিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান। তাঁরা এদিন জল পেয়ে খুশি হয়ে তাঁদের উত্তরপুরুষদের আশীর্বাদও করেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মহালয়া হল পিতৃপক্ষ দেবীপক্ষের সন্ধিদিন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত (যা আশ্বিন মাসে পড়ে) সময় হল পিতৃপক্ষ। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ক'দিন মনুষ্যলোকের নিকটে আসেন। এই সময়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করাই রীতি। লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়। এই বিশ্বাস থেকেই গোটা (পিতৃ) পক্ষকাল (১৫ দিন) ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তর্পণ করা হয়। 


১৫ দিন ধরে এই স্মরণ-তর্পণ করার জন্যই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পাঠানো হয়েছিল কর্ণকে। সে এক দারুণ চিত্তাকর্ষক ঘটনা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর কর্ণ স্বর্গে গেলেন। তাঁকে সেখানে খাদ্য-পানীয়ের বদলে খেতে দেওয়া হল সোনা-রুপোর-মণি-রত্ন ইত্যাদি। বিস্মিত কর্ণ প্রশ্ন করলেন, এ কী? খাদ্যের বদলে তাঁকে এসব কেন? তাঁকে জানানো হয়, তিনি আজীবন শুধু এইসবই দানধ্যান করেছেন, কখনও নিজের পূর্বপুরুষের কথা স্মরণ করেননি, তাঁদের আত্মার প্রতি খাদ্যপানীয় নিবেদন করেননি। তাই পুণ্যফলে তিনি স্বর্গে আসতে পারলেও খাদ্যপানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হননি।


কর্ণ জানান, এতে তাঁর কোনও দোষ নেই, তাঁর জন্ম-মুহূর্তেই মা তাঁকে ত্যাগ করেছেন। অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী রাধা তাঁকে প্রতিপালন করেন। দুযোর্ধন তাঁকে আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরুর আগের দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে কুন্তী এসে তাঁর জন্ম ও বংশ পরিচয় জানান। এরপরই যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তারপর মাত্র ষোলো-সতেরো দিন তিনি বেঁচে ছিলেন। পিতৃপুরুষকে জল দেবার সময় পেলেন কখন?


তাহলে এখন কর্ণ কী করবেন? কর্ণকে জানানো হয়, তাঁকে আবার মর্ত্যে ফিরতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জলদান করতে হবে। তাহলেই স্বর্গে এসে তিনি খাদ্যপানীয় পাবেন। তখন যমের বা ইন্দ্রের নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে আসেন। সেখানে এক পক্ষ কাল (১৫ দিন) থেকে পিতৃপুরুষকে জল দান করেন তিনি। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জলদান করে স্বর্গে ফিরে যান কর্ণ। আর এই বিশেষ পক্ষকালকেই শাস্ত্রে 'পিতৃপক্ষ' বলা হয়েছে, পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল 'মহালয়া'।


মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। মহালয়া দিনটি দেবীপক্ষের সূচনা।  পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিন দেবীপক্ষ। প্রসঙ্গত, মহালয়ার দিনে অনেক জায়গায় দেবী দুর্গার বোধনও হয়। 'বোধন' অর্থে জাগরণ। মহালয়ার পরে শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। এবার ২ অক্টোবর মহালয়া। ওইদিন ভোর থেকেই পিতৃপুরুষদের প্রতি জল অর্পণ করবেন মানুষ। তিথিটি পড়ে যাচ্ছে আগের রাত থেকেই, মানে, মঙ্গলবার রাত থেকেই। তবে ভোরের দিকেই পালিত হয় এ সংক্রান্ত রিচুয়্যালস। গঙ্গাজল, তিল, সাদা ফুল, কুশ ইত্যাদি দিয়ে তর্পণ অনুষ্ঠান হয়। তবে, অনেক সময়েই অনেকের পক্ষে তর্পণ করার জন্য গঙ্গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে, তাতে কোনও অসুবিধা নেই, কেননা, বাড়িতেই একজন সুব্রাহ্মণ ডেকে তর্পণ করা যেতেই পারে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, একটা ধারণা ছিল, মেয়েরা নাকি তর্পণ করতে পারেন না। তবে পরবর্তী কালে এই সব ট্যাবু অচল হয়ে গিয়েছে। এখন মেয়েরাও তর্পণ করতে পারেন।  


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)