অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শান্তি ওঁরাও। বয়স ৪৭ বছর। ২৯ সন্তানের মা! এমনটাই মনে করেন তিনি। শুধু ২৯ সন্তান বলাটা ভুল, তিনি গত ২৮ বছর ধরেই অসংখ্য সন্তানকে নিজে হাতে লালন পালন করেছেন। একা শান্তি ওঁরাও নন, একই রকম ভাবে বাতাসী হেমব্রম, সোনামণি ইক্কারাও যুগের পর যুগ ধরে এরকমভাবেই সন্তানদের লালন পালন করে আসছেন। তবে তাদের কাউকেই শান্তি, বাতাসী বা সোনামণিরা পেটে ধরেননি, এমনকি দত্তকও নেননি। 
ভাবছেন, সেক্ষেত্রে কীভাবে এই কাজ করছেন তাঁরা? 


এ এক অন্য মায়ের কথা! বিশ্ব মাতৃ দিবসে (ভাষা নির্বিশেষে যার এখন পোশাকি নাম মাদার্স ডে) আজ আপনাদের বলব এই 'অন্য' মায়ের গল্প। 


কথায় বলে, মায়ের আবার জাত হয় নাকি? কথাটা হয়তো সত্যিই। উত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্সে রয়েছে একাধিক চা-বাগান। পাহাড়েও রয়েছে একাধিক চা-বাগান। আর সেখানেই রয়েছেন শান্তি, বাতাসী বা সোনামণির মতো 'অন্য' মায়েরা। সেখানে কী করেন তাঁরা?



সকালের ঘণ্টা বাজতেই বাগানের শ্রমিক লাইন থেকে পুরুষ ও মহিলা কর্মীরা ছোটেন চা-বাগানে কাজ শুরু করতে। পুরুষরা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন, অন্য দিকে মহিলা কর্মীরা মূলত পাতা তোলার কাজে নিযুক্ত। কিন্তু, সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন পরিবারের দুই সদস্যই কাজে ব্যস্ত তখন তাদের শিশু সন্তানরা কোথায় যাবে? কিছু ক্ষেত্রে মায়েরা এক-দু'বছরের শিশুদের বিশেষ পদ্ধতিতে কোটরে বেঁধে কাজ করেন। তবে, তা আর সম্ভব হয় না, যখন তাদের বয়স ২ বছরের বেশি হয়ে যায়। ফলে তাদের রাখার ক্ষেত্রে দেখা দেয় একাধিক সমস্যা। 


এর থেকে রেহাই পেতে, কর্মীরাই সংশ্লিষ্ট সংস্থার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বাগানেই একটি জায়গা বেছে নেন। সেখানে ছাউনি তৈরি করে শিশুদের রাখার কাজ করা হয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সারাদিন শিশুরা সেখানে থাকলেও তাদের দেখাশোনা কে করবে? আর এখানেই শান্তি, বাতাসী বা সোনামণির মতো 'অন্য' মায়ের ভূমিকা উঠে এসেছে। এক একটি ছাউনিতে তাঁরাই এই শিশুদের সন্তানস্নেহে লালন পালন করেন। খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো থেকে একটি শিশুর প্রাথমিক সমস্ত শিক্ষাই দেন তাঁরা। এমনকি, প্রয়োজনে মায়ের মতোই শাসন করেন। চা-বাগানের ওই শিশুরা জীবনের সূচনাপর্বে শান্তি, বাতাসী বা সোনামণিদেরই 'মা' বলে চিনতে শুরু করে। কারণ দিনের বেশিরভাগ সময়টাই তো তারা থাকে এই 'অন্য' মায়েদের সঙ্গেই।



কিন্তু, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এমনকি যুগ পেরিয়ে গেলেও, মন খারাপের বিকেলে শান্তি, বাতাসী বা সোনামণিদের বাড়িতে ঘর আলো করার মতো কেউ থাকে না। কারণ, 'মা'য়ের চাকরি করতে করতেই তাদের সময় কেটে যায়। ফলে সংসারটাই তো আর করা হয় না। তবু, আজও তাঁরা ওই চা-বাগানের ছাউনিতেই বেঁচে থাকেন। বেঁচে থাকেন রাজেশ টোপ্পো, শুক্রা ওঁরাও, গোপাল টুডুদের 'অন্য মা' হয়েই।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)