সুদীপ দে: পৌষ মাসের শীত যতটাই জাঁকিয়ে পড়ে, একটা সময় ঠিক ততটাই জাঁকিয়ে বসত এই মেলা। এখন বাড়তে থাকা দূষণ আর উষ্ণায়নের প্রভাবে শীতের প্রভাবও অনেকটা ফিকে হয়েছে আর বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চাপে আর আধুনিকতার প্রভাবে এই মেলাও হারিয়েছে তার কৌলিন্য। কিন্তু জরাজীর্ণ অযত্নে পড়ে থাকা বনেদি বাড়ির মতোই এই মেলাও এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে শতাব্দি প্রাচীন বঙ্গ মেলার ঐতিহ্য। মেলার নাম মুড়কির মেলা। উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার সেন বাজার সংলগ্ন এলাকায় এখনও বসে মেলার আসর।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই মেলাটি দুশো বছরেরও বেশি পুরনো। শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় হিন্দু-মুসলমানদের যৌথ উদ্যোগেই এই মেলার সূচনা হয়। সেই সময় একটি মাজারকে কেন্দ্র করে বসত এই মেলা। তখন এ মেলার নাম ছিল পীরের মেলা। শোনা যায়, একটা সময় এই মেলা এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, এই মেলা উপলক্ষে ব্রিটিশ সরকার শিয়ালদা থেকে একটি বিশেষ ট্রেন চালু করেছিল।


সে সময় এই মেলায় পাওয়া যেত স্থানীয় মানুষের হাতে বানানো ঘরোয়া খাবারদাবার। জিবে গজা, মুড়কি, মোয়া, মট ইত্যাদি নানা মুখরোচক খাবার-দাবার মিলত এই মেলায়। এর সঙ্গে সঙ্গেই এই মেলায় মিলত বাহারি বিদেশি পুতুল, তামাকের মশলা, রান্নার মশলা-সহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রি। নিপুন হাতে বোনা শাল, চাদর-সহ বিভিন্ন শীতবস্ত্রও মিলত এই মেলায়।



কিন্তু স্বাধীনতার লড়াই, হিন্দু-মুসলমান বিভেদ, দেশভাগ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ‘মহামারি’র প্রকোপে এই মেলার জাঁকজমক ও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকে। বছর খানেক আগেও কারিগররা এই মেলায় বসেই গরম গরম কদমা বানাতেন। গরম, নরম কদমার সেই রুপোলি ঝিলিক আজও অনেকের চোখে ভাসে। কিন্তু এখন আর মেলায় গরম গরম কদমা বানাতে দেখা যায় না। একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে মেলার পরিচিত অনেক কিছুই। তবে স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও নানা ঝড়ঝাপটা সামলে এই মেলাকে আজও চালিয়ে যাচ্ছেন আগরপাড়া সেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি।


বেড়েছে জন সংখ্যার চাপ, আর সেই চাপে কমেছে মেলার আয়তন। তবে মেলার উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় মানুষের উত্সাহ এতটুকু কমেনি। ঘরোয়া খাবার-দাবার, মুড়কি, মোয়া, নিমকি, জিবে গজা, মট, রান্নার মশলা ও আরও নানান টুকিটাকি জিনিসের পসরা সাজানো এই মেলায় আজও ঐতিহ্যের গন্ধ ভেসে বেরায়। মেলে আন্তরিকতার স্বাদ। আর দেখা মেলে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য ইচ্ছা।


ছবি: সুদীপ দে।