স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


দোলের থেকে ভালো উত্‍সব, মজার উত্‍সব আরও থাকতে পারে তর্কের খাতিরে। যুক্তির বিচারে। কিন্তু দোলের থেকে রঙিন উত্‍সব আর একটাও নেই, এই কথাটা বলব না! তাই দোলের কিছু রঙিন দিক নিয়েই ছোট্ট লেখা যেখানে কোনও রঙের অভাব থাকবে না। কে বলে ইতিহাসের পাতা সাদা-কালো? মলিন? দেখুন না, দোলের ইতিহাস, তথ্যগুলোও কেমন রঙিন আর ঝলমলে হয়ে ধরা দেবে আপনার সামনে। শুরু করা যাক, হোলি হ্যায় বলে!


১) দোল কেন এলো? - মানুষের এই প্রশ্ন মনে থাকেই। এর উত্তরও পাওয়া যায় অনেক। পূরাণ মতে এর একটি উত্তর বেশ মজাদার। প্রেমের রঙে ভরা। কীরকম? শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং কালো, এ আর নতুন করে বলার কী আছে। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের কালো রঙ নিয়ে আমি-আপনি গর্ব করতে পারি। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বড় মন খারাপ নিয়ে থাকতেন। মাকে বলেওছেন সেই কথা। ইস, রঙের জন্যই যদি রাধা তাঁকে অপছন্দ করেন! তাই নাকি নিজেকে তিনি একদিন নানা রঙে রাঙিয়ে ছিলেন। আর সেই থেকেই এলো দোল উত্‍সব! এই তথ্য বা যুক্তি মানা কিংবা না মানা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যদি আপনি তর্কের খাতিরেও কয়েক মুহূর্তের জন্য এই তথ্যটি মেনে নেন, দেখবেন, দোলেও কেমন প্রেমের ছোঁয়া পাবেন! কী তাইতো?


২) শিশুদের স্বাধীনতা - দোল উত্‍সব প্রথমবার এ দেশের শিশুদের স্বাধীনতা দেয়। কীরকম? খুব সহজ। কারণ, এ দেশের (সম্ভাবত সব দেশেরই) সব বাবা-মাই চান, তাঁদের সন্তান অন্তত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক। গায়ে-জামা-কাপড়ে দাগ লাগা চলবে না। কিন্তু দোলই হল সেই দিনটা, যে দিনটায় শিশুরা অন্তত পরিষ্কার নামক শব্দটা থেকে স্বাধীন থাকতে পারে! আর শুধু শিশুরাই কেন, আট থেকে আশি, দোলে সবাই মনের বাচ্চা। ১০০ শতাংশ রঙিন! তাই না?


৩) গরিব - বড়লোক সব সমান - দোল উত্‍সব সামাজিক পরিকাঠামোয় এক বড় ভালো উত্‍সব। অন্তত এই দিনটায় বড়লোকের পোশাক আর গরিবের পোশাকের অত ফারাক পাওয়া যায় না। সবই যে রঙে চোবা! এই দিনটায় অন্তত গরিব বুক ফুলিয়ে বলতে পারে, বড়লোকেরও গায়ে রঙ, আবার তাঁর গায়ে নানা রঙ। গরিবের বড়লোককেও 'রংবাজি' দেখানোর সেরা এবং একমাত্র দিন কী দোল উত্‍সবই নয়?


৪) মজার দোল উত্‍সব পালন - দোল তো বসন্তোত্‍সব। বসন্ত প্রেমের কাল। তাই রঙের সঙ্গে প্রেমও জড়িয়ে থাকে অনেকটা। আর প্রেম আবার একরকম হয় নাকি! প্রেম হয়তো হাজারো কিংবা লাখো। কিন্তু প্রেমের রঙ একটাই। তা হলো, রঙিন। বৃন্দাবনে কীভাবে রঙ খেলা হয়, সে সব তো আপনি জানেনইনি। এর বাইরেও দোল নিয়ে রয়েছে বেশ মজার মজার গল্প। মানে দোল উত্‍সবটা নানারকমভাবে আয়োজন করা হয়। রঙটাই শুধু কমন। আছে অনেক রীতি-নীতিও। যেমন উত্তরপ্রেদেশেরই বরসানা এলাকায় খুব অদ্ভূতভাবে দোল খেলা হয়। এখানে পুরুষরা গায়ে রঙ মাখার পর মহিলাদের হাতে লাঠি ধরিয়ে দেন। আর মহিলারা তাঁদের মুখ শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে তারপর পুরুষদের আলতো করে লাঠি পেটা করেন!


৫) মথুরার দোল - দোলের কথা বললে মথুরার দোলের কথা তো অবশ্যই বলে নিতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান বলে কথা! মথুরাতে কিন্তু দোল উত্‍সব মোটেও একদিনের নয়। বরং, এখানে দোল হয় ১৬ দিন ধরে। আর একেবারে দোলের দিন সকালে কৃষ্ণপুজো করে নিয়ে তারপর সবাই সবাইকে রঙে আর আবিরে রাঙিয়ে দেন। এভাবেই চলে মথুরার দোল উত্‍সব। বৃন্দাবনের বিধবারাও যে দোল খেলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর যে দেশে মহিলাদের মনে আর শরীরে রঙ থাকে না, এই একটা উত্‍সবের জন্য অন্তত দেশের খানিকটা অঞ্চলের বিধবারা অন্তত একটা দিনের জন্য মৃতপ্রায় জীবনটাতে রঙের ছোঁয়া পান।


৬) রাজস্থানের দোলের কথা না বললে চলে কীভাবে! -  রাজস্থান সবসময়ই দেশের আর দশটা রাজ্যের থেকে বেশি রঙিন। রাজাদের আদি বাসস্থান বলে কথা। তাই সেখানে হলুদ পটভূমিতে দোল আরও বেশি রঙিন। উজ্জ্বল মহলগুলো আরও বেশি রঙিন হয়ে ওঠে। একটা উত্‍সবের গায়ে ঐতিহ্য, ইতিহাস আর ধন লাগলে, তা তো আরও বেশি রঙিন হবেই। এ ছাড়াও আর একটা মজার কথা না বললে চলছে না। রাজস্থানের শিক্ষার মান কোনওদিনই দেশের সেরা ছিল না। কিন্তু সম্ভ্রান্ত মানুষরা এখানে বাস করেন। আর শৃঙ্খলা রাজস্থানীদের একটা 'কমন শব্দ'। কিন্তু দোলের দিন রাজস্থানের কোনও কোনও এলাকায় রীতিমতো গালাগালি করারও অনুমতি আছে! মানে, গায়ে রঙ মাখার পর, কেউ অন্যকে গালাগালও করতে পারে! বুঝুন মজাটা। এইদিনের গালাগালি দেওয়াটা অন্যদিনগুলোর মতো খারাপ কাজ হিসেবে ধরা হয় না!


৭) দোল মোটেই আর শুধুমাত্র ভারতের কোনও উত্‍সব নয় - আর একটা কথা আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে বলে নেওয়া ভালো। তা হলো, দোল মোটেই আর শুধুমাত্র ভারতের কোনও উত্‍সব নয়। বরং, দোল আজ খেলা হয় আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ড, কানাডা থেকে ফ্রান্স সর্বত্র। জার্মানিতে তো খুব বড় করে দোল খেলা হয়। বিষয়টা তো আর শুধুই হিন্দু ধর্মের মধ্যেই আবদ্ধ নেই। মানুষের ধর্ম যাই হোক, জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই কি রঙের প্রতি মানুষের ভালোলাগা বা পছন্দ থাকতে নেই? তারপর সেই রঙ যদি নিজে মাখা যায় আবার অন্যেক মাখানোও যায়, তাহলে তো মজা বাড়েই। দোলের জনপ্রিয়তা তাই দিন-দিন বেড়েই চলেছে।


হ্যাঁ, তবে এ কথাও ঠিক যে, দোল আজ তার চরিত্র বদলে ফেলেছে অনেকটাই। আজ আর দোল শুধুই বসন্তোত্‍সব নয়। আজ আর দোলের দিনে বাসন্তী শাড়ি পরাটাই কোনও মেয়ের প্যাশন নয়। বরং, ফেসবুকে কটা লাইক পড়লো তাঁর ছবিতে, এটাই বিচার্য বিষয়। বাসন্তী শাড়ি আর পটভূমিতে লাল পলাশের সেই দিন নাই বা থাকল, দোলের রঙ কিন্তু আবছা হয়নি এতটুকু। বরং, বাস্তবের সমাজে থেকেও দোল এখন 'সমাজ মাধ্যমেও' সমান প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয়। এ পৃথিবীতে যতদিন জীবন থাকবে, তার রঙও থাকবে, দোল যেন এই বার্তাটাই দিয়ে যায়। দোল নিয়ে বলার অনেক। লেখার আরও রয়েছে বিষয়। কিন্তু এত কথা বললে আর রঙ খেলবেন কখন! তাই আপনার সারা জীবন যেন রঙে রঙে ভরে ওঠে, এই কামনা নিয়ে শেষ করলাম। এ লেখা পড়ার জন্য জানালাম রঙিন শুভেচ্ছা।