নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে’!  রবিঠাকুরের সেই পংক্তি মনে আছে? আপনারই ফেলে দেওয়া জিনিস,  বিদায় করেছেন এমন জিনিস, একদিন ঘুরেফিরে ফেরত আসবে আপনারই কাছে। হয়তো আপনার নতুন তৈরি বাড়ির ভিতের নীচে, অথবা ব্যবহারযোগ্য জলের মধ্যে মিশে গিয়ে। সে দিন এড়াবেন কী করে? ভাবছেন এসব আবার কি!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কথা হচ্ছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে। মেয়েদের অতি প্রয়োজনীয় এবং 'লজ্জার জিনিস'। চোখে পড়লেই কেমন যেন একটা গা ঘিনঘিনে ব্যাপার! জানেন কি, প্রতি মাসেই ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন কী ভাবে দূষিত করছে আপনার চারপাশের পরিবেশ?


আরও পড়ুন: পিরিয়ডের কত দিন পর কম থাকে প্রেগনেন্সির ঝুঁকি, জেনে নিন কী বলছেন চিকিৎসকরা​


বাইরে থেকে দেখলেই বুঝতে পারবেন, স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপরের অংশটা তুলোর হয়। তার  নীচে থাকে আঠা লাগানো মোটা প্লাস্টিক অংশ। যেটা প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে পারে না অর্থাত্ বায়োডিগ্রেডেবল নয়। সোজা কথায় বলতে গেলে, মাটির সঙ্গে মিশে যায় না স্যানিটারি ন্যাপকিন। অবিকৃত অবস্থাতেই থেকে যায় বছরের পর বছর। 


আর স্যানিটারি ন্যাপকিনের এই অংশ কীভাবে আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে, সেবিষয়ে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান। ২০১১ সালে এবিষয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, প্রতি বছর স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে ৯ হাজার টন আবর্জনা তৈরি হয়, যা পরিবেশ দূষিত করে। এক জন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারকারী মহিলা বছরে ১২৪ কেজি আবর্জনা তৈরি করেন। শহরের থেকে মফ্ফঃস্বলে এবং গ্রামে গ্রামের পরিস্থিতি আরও করুণ।



তাহলে এখন উপায়?


বাজার চলতি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করে, পরিবেশবান্ধব ন্যাপকিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন অভিনেত্রী তথা রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘এনভায়রনমেন্ট গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’ দিয়া মির্জাও।


এবার প্রশ্ন পরিবেশবান্ধব অর্থাত্ বায়োডিগ্রেডেবল স্যানিটারি ন্যাপকিনটা ঠিক কী?


আরও পড়ুন: ‘আমি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করি না’, প্রকাশ্যে বললেন দিয়া মির্জা



এই ধরনের ন্যাপকিন গোটাটাই কাপড়ের তৈরি হয়। এতে কোনও প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। সুতির যে বিশেষ কাপড় দেওয়া হয়, তা চিকিত্সক দ্বারা অনুমোদিত। এতে কোনও রাসায়নিক বা সুগন্ধীও ব্যবহার করা হয় না। এই ধরনের প্যাডে ক্লোরিন থাকে না। সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি হওয়ায় ব্যবহারের পর এটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দামী কোম্পানি বাজারে এনেছে এমন ন্যাপকিন।


গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়তে থাকায় গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, ব্যান করা হচ্ছে প্লাস্টিক। কিন্তু এসব করে আমরা যতদূর এগোচ্ছি, তার কয়েক ধাপ পিছিয়েও যাচ্ছি। নির্মল পরিবেশ গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যান যদি করাই হয়, তাহলে বাজার চলতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্লাস্টিক কেন বাতিল করা হচ্ছে না? ফেলে দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনকে কেবলই ঘেন্নার চোখে না দেখে যদি মারাত্মক দূষিত পদার্থ হিসাবে দেখি, তাহলেই বদল আসবে। আমাদের মনে বহুদিন ধরে জমিয়ে রাখা সংস্কারগুলি থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসতে হবে, হতে হবে আরও বেশি সচেতন। তাহলেই ফিরে পাওয়া যাবে নির্মল পরিবেশ।