অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে করোনা! ৩ দিনে দেড়শো কিমি পথ হেঁটেও বাড়ি ফেরা হলো না বালিকার
শনিবার রাতে জামলোকে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় বমি, প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি
নিজস্ব প্রতিবেদন: তেলেঙ্গানা থেকে বিজপুর। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার রাস্তা। দ্বিতীয় পর্বে লকডাউন শুরু হওয়ার পরই আর স্থির থাকতে পারেনি ১২ বছরে মেয়ে জামলো মাকদাম। ভিনরাজ্যে লঙ্কা ক্ষেতে কাজ করে সে। পনেরো দিন যে কোনওভাবে কাটিয়ে দিলেও ভিনরাজ্যে থাকার মতো টাকা আর তার কাছে নেই। তাই গ্রামের আরও কিছু মানুষের সঙ্গে হেঁটেই বাড়ির যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জামলো। কিন্তু কে জানত তার ওই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হাঁটা বাড়ি যাওয়ার আগেই থেমে যাবে!
তিন দিন। প্রায় না-খাওয়া। দেড়শো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলে জামলো। ১৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ১১ জনের একটি দলের সঙ্গে। তারাও লঙ্কা ক্ষেতে কাজ করে। জাতীয় সড়ক দিয়ে হাঁটার উপায় ছিল না। পুলিসকে এড়াতে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়। ওই দলের এক ব্যক্তি জানান, জামলো সে ভাবে খাওয়া-দাওয়া করেনি। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আর ১৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে বাড়ি পৌঁছতে পারতো জামলো। কিন্তু সম্ভব হয়নি। ক্লান্ত পা দুটোর তার ওই ছোট্ট শরীরকে আর ধরে রাখার সামর্থ্য ছিল না। লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।
আরও পড়ুন- করোনা আবহে কালবৈশাখির স্বস্তির বার্তা, আজ থেকে টানা ৪দিন ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস
শনিবার রাতে জামলোকে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় বমি, প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, শরীরে জলশূন্য এবং অপুষ্টি জনতি কারণে জামলোর মৃত্যু হয়েছে। করোনা পরীক্ষাও করা হয়েছিল। তাতে, নেগেটিভ আসে। সরকারি খাতায় করোনায় মৃত্যু তালিকায় হয়ত তার নাম থাকবে না, কিন্তু এই মৃত্যুর কারণ যে করোনা, বিলক্ষণ জানে মারণ ভাইরাসটিও। করোনার জেরেই লকডাউন। স্তব্ধ যান চলাচল। দিন যত গড়ায় উত্কণ্ঠা বাড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের। দিল্লি, মুম্বই, গুজরাট থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা অপেক্ষায় না থেকে বাড়ির পথে হাঁটা লাগায়। কেউ হয়তো শেষ পর্যন্ত গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পেরেছিল। জামলো কিংবা মধ্য প্রদেশের রণবীর সিংয়ের মতো অনেক মানুষের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। পথই তাঁদের জীবন কেড়ে নেয়। জামলোর পরিবারকে এক লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছে ছত্তিসগঢ় সরকার।