নিজস্ব প্রতিবেদন : ২৭ জুলাই ২০১৫। দিনটা ছিল সোমবার।  শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের হলে সেদিন ঠাসা ভিড়। মঞ্চে এপিজে আবদুল কালাম। অনুষ্ঠানের মাঝেই হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেদিন আমাদের ছেড়ে যান মিসাইল ম্যান। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চলতি মাসে চন্দ্রযান-২-এর উৎক্ষেপণের সময়ে টুইটার ঘাঁটলেই বোঝা যাচ্ছিল, মৃত্যুর চার বছর পরেও জনমানসে এখনও কতটা জনপ্রিয় তিনি। তিনি নেই। কিন্তু তাঁর ভাবনা, আদর্শকে পাথেয় করেই বিজ্ঞানের বিকাশের আনন্দে মেতে ভারতবাসী। আর তা হবে নাই বা কেন। ডিআরডিও-এর প্রধান হিসাবে দেশের স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের মূলে ছিল তাঁর  ভাবনা। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট যখন ছুটে যাচ্ছে মহাকাশে, তাঁরই অনুপ্রেরণাকে কী করে ভুলবে ভারতবাসী?


১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে তামিল মুসলিম পরিবারে জন্ম। তখন তামিলনাড়ুর এই অংশের নাম ছিল  মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি। চার ভাই ও এক বোনের পরিবারে কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন কালাম। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। কিন্তু, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাঁধাতে কখনও ভেঙে পড়েননি তিনি। বরং, হাসিমুখে অল্পের মধ্যেই খুঁজেছেন ছোট ছোট আনন্দ। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে খুব ছোট থেকেই উপার্জন শুরু করেন। বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করতেন তিনি। ভাবা যায়! দেশের অন্যতম বড় বিজ্ঞানী ও  রাষ্ট্রপতির প্রথম কাজ ছিল খবরের কাগজ বিলি করা। আসলে কোনও কাজকেই ছোট মনে করতেন না তিনি। কাজ যেমনই হোক, তাতে নিজের সবটুকু দেওয়ায় বিশ্বাস করতেন তিনি। 


আরও পড়ুন: উলটপুরাণ! বিজেপিকে বাইরে থেকে সমর্থন করবে জেডিএস! জোর জল্পনা কর্নাটকে


ছোট থেকেই যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পেছনেও অন্যতম কারণ ছিল সেটাই। সেই মত ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট নিয়োগের পরীক্ষাতেও বসেন তিনি। একটুর জন্য পাইলট হওয়া হয়নি তাঁর। কেবলমাত্র ৮টি শুন্যপদ ছিল। তাঁর নাম ওঠে ৯ নম্বরে। 


১৯৬০ সালে ডিআরডিও-তে কাজ শুরু করেন ছোট হোভারক্রাফ্ট ডিজাইনের মাধ্যমে। সেই সময়ে খুব সামান্য টাকাই বরাদ্দ করা হত বৈজ্ঞানিক গবেষণার খাতে। তবে, তিনি কোনও দিনই হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র নন। গরুর গাড়ি, এমনকি সাইকেলেই রকেটের বিভিন্ন অংশ বয়ে নিয়ে যেতেন বিজ্ঞানীরা।



১৯৬৯ সালে যোগ দেন ইসরোয়। আজ যে ভারতে তৈরী জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভিহেকলের কাঁধে চড়ে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-২, তার মূল ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন তিনিই। ১৯৮০ সালে ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভিহেকলের (SLV-III) নেপথ্য নায়ক তিনিই। এসএলভি থ্রি-তে করে রোহিণী স্য়াটেলাইট প্রেরণের অভিযানে প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন কালাম। ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গবেষণাতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অগ্নি, পৃথিবীর মত ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ব্য়ালিস্টিক মিসাইলের শক্তিতে ভারত আজ আত্মবিশ্বাসী। তারও নেপথ্য তিনিই। পোখরানের পরমাণু বোমার পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ পালন করেন তিনি। 


দেশের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই শপথ নেন কালাম। তিনি ভারতের তৃতীয় ভারতরত্ন-প্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি হিসাবে আময়িক ব্যবহার ও দৃঢ় মানসিকতার জন্য জনগণের রাষ্ট্রপতি বলে জনপ্রিয়তা পান তিনি।  যে কারণে ২০১২ তে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে রাষ্ট্রপতি করার দাবি ওঠে। কিন্তু, দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাননি তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক মহল ও দেশবাসীর ইচ্ছার কথা আমি জানি। জনগণের ভালবাসায় আমি আপ্লুত। সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।"


আরও পড়ুন: শুধু মন্দিরের প্রসাদ নয়, মুম্বইয়ের পানীয় জলে বিষ মিশিয়েও গণহত্যার ছক কষেছিল জঙ্গিরা


একাধিক উচ্চপদে কাজ। দেশের রাষ্ট্রপতি পদেও জিতে নিয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালবাসা। এই মানুষটাই ব্যক্তিগত জীবনে বরাবরই সাদামাঠা থেকেছেন। অত্যন্ত্য় সাধারণ জীবনযাপন ও স্বল্পাহার। বিয়ে-থা নিয়েও কোনও দিন মাথা ঘামাননি। একটা এসিও কেনেননি কোনও দিন। নেশা বলতে একটাই- বই। মৃত্যুর পর রেখে গিয়েছেন তাঁর ২,৫০০টি বইয়ের সংগ্রহ।  একটি হাতঘড়ি, ছয়টি শার্ট, চারটি ট্রাউজার, তিনটি স্যুট ও এক জোড়া জুতো। বই বাদে কোনও উপহারও কোনওদিন নিতেন না তিনি। টিভিও দেখতেন না। খবরের জন্য় ভরসা ছিল রেডিও ও কাগজ। 


আজ যে সবুজ পৃথিবীর কথা এত বেশি করে ভাবা হচ্ছে, তার কথা বহু বছর আগেই ভেবেছিলেন তিনি। দাদার বাড়িতে সোলার প্যানেল লাগিয়ে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন মিসাইল  ম্যান। 
 
মৃত্যুর চার বছর পরেও যেন আমাদের মধ্যেই আছেন তিনি। প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয় ও ভাবনায় জড়িয়ে তিনি। জনগণের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। মনে তো থাকবেনই।