গুজরাটের সেই জুটির প্রত্যাবর্তন, স্বরাষ্ট্রে অমিত বসতেই বিরোধী শিবিরে শীতল স্রোত?
চার দশক আগে গুজরাটে একইসঙ্গে দু`জনের রাজনৈতিক জীবন শুরু। মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অমিত শাহ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্ব নিলেন অমিত শাহ। যথার্থ অর্থেই ফিরে এল গুজরাটের সেই জুটি। অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় শুরু হয়েছে জল্পনা। কোন পথে হাঁটবেন মোদীর সেনাপতি? বিরোধী শিবিরের সঙ্গে কি ফের সংঘাতে জড়াবে সরকার? শাহকে মন্ত্রিসভায় নাম্বার-টু হিসাবে নিয়ে এসে নরেন্দ্র মোদী কি দেশবাসীকে নিজের উত্তরসূরি চিনিয়ে দিলেন? চলছে এমন হাজারো জল্পনা।
চার দশক আগে গুজরাটে একইসঙ্গে দু'জনের রাজনৈতিক জীবন শুরু। মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অমিত শাহ। ৮ বছর ধরে সামলেছিলেন গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অমিতকে দিল্লি নিয়ে আসেন মোদী। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হন গুজরাটের বিশ্বস্ত সঙ্গী। এবার মোদীর মন্ত্রিসভায় সামিল হলেন অমিত শাহ। দলের সম্ভাব্য সভাপতি হতে চলেছেন জেপি নাড্ডা।
রাজনাথ না জেটলি? গত মন্ত্রিসভায় নাম্বার-টু কে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও ধন্দ ছিল। এবার আর তা রইল না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই সাধারণত নাম্বার টু বলে ধরা হয়। আর মোদীর মন্ত্রিসভায় সেই পদে যদি অমিত শাহ আসেন, তাহলে তো আর বলার কিছুই থাকে না।
সব কা সাথ, সব কা বিকাশের স্লোগানের সঙ্গেই হিন্দুত্বের মিশেল। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের হাত ধরে প্রচারে জাতীয়তাবাদ। ফের কুর্সিতে নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা মসৃণ হয়েছে অমিত শাহর নেপথ্য-কৌশলে। কড়া ধাঁচের সংগঠক বলেই পরিচিতি অমিতের।
রাজনৈতিক মহল বলছে, তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া অ-বিজেপি শাসনে থাকা রাজ্যগুলির কাছে স্পষ্ট বার্তা। বিশেষত গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন অমিতের ট্র্যাক রেকর্ড সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী দিনে কী করেন, সেদিকেই এখন নজর গোটা দেশের। প্রায় সব বিরোধী নেতানেত্রীর দুর্নীতির ফাইল এখন অমিতের হাতে। ২০২৪ সালের আগে বিরোধীদের যে ছেড়ে দেবেন না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। ঠিক তেমনভাবেই ২০২১ সালে বাংলাকে টার্গেট করেছেন অমিত। ফলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা যে এবার গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে, এবিষয়ে একমত রাজনৈতিক কারবারিরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় সন্ত্রাস দমন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ, অনুপ্রবেশ সমস্যা মোকাবিলার দায়িত্ব এবার অমিত শাহর হাতে। নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইন সংশোধন এবং জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৫এ ধারা বাতিল করা নিয়ে, অমিতের আমলে বাংলার সঙ্গে দিল্লি এবং উপত্যকার সঙ্গে রাজধানীর সম্পর্ক কোন পথে যাবে? এসব নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জল্পনা।
আরও পড়ুন- প্রথম দিনেই ৪টি ভোটের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দম দেখালেন মোদী
গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন অমিত শাহর আমলেই পাস হয় সংগঠিত অপরাধ দমন ও ধর্মান্তরণ প্রতিরোধ বিল। ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় গ্রেফতার হলেও সব অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে যান তিনি। পাঁচ বছর পর ৭৫ বছর বয়স হয়ে যাবে মোদীর। আর শাহ এখন ৫৪ বছরের। প্রশ্ন উঠছে, অমিত শাহকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নাম্বার টু-র জায়গা দিয়ে কি এখনই নিজের উত্তরসূরিকে চিনিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?
ভোটের ফল বেরনোর পরও গোরক্ষার নামে হিংসা, গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটে চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ার থেকে এসব বন্ধে কী বার্তা দেবেন অমিত শাহ? আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কি এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত বাধবে? শুরু হয়ে গেল উত্তরের অপেক্ষা। এদিনই হায়দরাবাদকে সন্ত্রাসীদের আখড়া বলে বিতর্কিত মন্তব্য করে ফেলেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডি। তাঁর লাগাম টেনে ধরেছেন অমিত শাহ। মোদীকে ছাড়িয়ে কার্যত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন বিজেপির 'চাণক্য'।
আরও পড়ুন- ভিডিয়ো: Jio-র ডেটা-সনিয়ার বেটা, ভাইরাল সেই ট্রেনের হকারকে গারদে পুরল আরপিএফ