অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: এ যেন মহারাষ্ট্রের মধুর প্রতিশোধ। শুধু প্রেক্ষাপট আলাদা। এবার পালাবদল বিহারের রাজনীতিতে (Bihar Politics)। মঙ্গলবার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেন নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। এরপরেই আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে সঙ্গে নিয়ে ফের সরকার বানানোর জন্য দাবি পেশ করেছেন রাজ্যপালের কাছে। নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। কার্যত এক ধাক্কায় বিজেপির বিহার-স্বপ্নকে বেশ কিছু বছর পিছিয়ে দিল মহাগঠবন্ধন। কিন্তু নীতীশ কুমার এই সুযোগ পেতেন না, যদি বিরোধী আরজেডি এবং তাঁর জোটসঙ্গীরা ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের একটা শক্ত জমির উপর দাঁড় করানোর সুযোগ পেত। বিহার রাজনিতির অন্যতম অনুঘটক সিপিআইএম লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (Dipankar Bhattacharya) জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে জানালেন মহাজোট ২.০ সরকারের সম্ভাবনার বিষয় নিজের ভাবনাচিন্তার কথা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শতাংশের হিসেবে সবথেকে বেশি ভোট পায় একদা বিরোধী আরজেডি। ২৩.০৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫। এরপরেই ছিল বিজেপি। ৭৪ টি আসন সহ তাদের ভোট ছিল ১৯.৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি জেডিইউ পায় ৪৩ আসন এবং কংগ্রেস পায় ১৯ আসন। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হল এই নির্বাচনে আরজেডি-র জোটসঙ্গী সিপিআই পায় ২টি, সিপিআইএম পায় ২টি এবং সিপিআইএম-এল পায় ১২টি। ফলত বর্তমানে যে মহাজোট সরকার তৈরি হতে চলেছে সেখানে অন্যতম শক্ত খুঁটি হতে চলেছে লিবারেশনের ১২টি আসন।


জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে জেডিইউ এবংআরজেডি-র একসঙ্গে সরকার গড়া আসলে বিজেপি-র রণনীতির ফল। তিনি আরও বলেন যে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে বিজেপি স্লোগান তোলে ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ এবং এরপরেই বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মীদের জেলে পাঠানো হল। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন বিহারে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এখানে ক্রাইম সহ অন্যান্য সমস্যা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের মত বিহারেও গণ প্রহারের ঘটনা ঘটছে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন এই ধরণের ঘটনা এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাঁরা থাকবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, সরকার চলুক তার পাশাপাশি এই সামাজিক দাবিগুলি আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা।  


এর পাশাপাশি বিরোধীশাসিত রাজ্যের সরকার ফেলে দেওয়া থেকে শুরু করে বিরোধী দলের পার্টি অফিসে পুলিস পাঠানো পর্যন্ত সবই করেছে বিজেপি। তিনি দাবি করেন যে, বিজেপি-র জোটসঙ্গীরাও তাদের রোষানল থেকে ছাড় পায়নি। এর সব থেকে বড় উদাহরণ হিসেবে বিহারের ভিআইপি পার্টির কথা তুলে ধরেন তিনি। এই ভিআইপি-র তিন বিধায়ক ধিরে ধিরে বিজেপিতে যোগ দেয় এবং কালক্রমে দলটির অস্তিত্ব কার্যত মুছে যায়। এর পাশাপাশি সেই দলের এক মন্ত্রীকেও মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেওয়া হয়।


আরও পড়ুন: Bihar Politics: পদত্যাগ করলেন নীতীশ কুমার, সঙ্গে তেজস্বী! বিহারে ব্রাত্য বিজেপিদীপঙ্কর ভট্টাচার্য মনে করিয়ে দেন পটনার সভা থেকে বলা জেপি নাড্ডার কথা। যেখানে নাড্ডা বলেন যে, ভারতে আঞ্চলিক দলগুলির সময় শেষ হয়ে এসেছে এবং আগামিদিনে দেশে একটাই পার্টি থাকবে। বিজেপি-র সর্বগ্রাসী এবং আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই নীতীশের মত পুরনো জোটসঙ্গীও বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।


কিন্তু এর আগেও মহজোট সরকার তৈরি হয়েছে এবং নীতীশ সেই জোট ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছেন। তাঁর এই পদক্ষেপের কারণে বিভিন্ন সময় তিনি অন্যান্য দলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই প্রসঙ্গে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে, বিধায়কদলের বৈঠকে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। যদিও তাঁর মতে নীতীশ কুমার বেশি গুরুত্বপুর্ণ নয়। মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিহার এবং বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবিজেপি সরকার তৈরির সম্ভাবনা। তিনি আরও জানিয়েছেন এই অবিজেপি সরকার তৈরি হলে লিবারেশন সেই সরকারে যোগ না দিলেও তাঁকে বাইরে থেকে সমর্থন করবে। তাঁরা মন্ত্রিসভায় যাবেন না বলেও জি ২৪ ঘণ্টাকে জানিয়েছেন তিনি।


বিজেপির প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি নীতীশ কুমারের আবার দল বদল করার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেননি তিনি। এরপরেও তিনি জানিয়েছেন যে বিজেপি-র রণনীতি এবং বিরোধীশূন্য ভাবে আরও ৫০ বছর সরকার চালানোর প্রচেষ্টা এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিহারের এই ঘটনা বিরোধী শিবিরের পুনর্বিন্যাস বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর আরও মত উত্তর ভারতে যে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ভোটে জেতার প্রচেষ্টা করা হয় তাঁর বিরুদ্ধেও এই ঘটনাকে একটি সামাজিক পুনর্বিন্যাস হিসেবে মনে করছেন তিনি। এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারলে তা ২০২৪-এর নির্বাচনেও গুরুত্বপুর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মত দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের। বিহারের বাইরেও হিন্দি বলয়ের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই জোটের এটাই দাবি তাঁর।   


সবশেষে অন্যান্য বামদলগুলির জোটের প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে না চাইলেও তিনি মনে করিয়ে দেন যে একটি অভূতপূর্ব পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতের রাজনীতি। তাঁর দাবি দেশ একটি বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং আগামিদিনে দেশ থেকে গণতন্ত্র হারিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাংবিধানিক সংস্থাগুলির কোনও মানে থাকবে কিনা সেই বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এই সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সরকারের ভিতরে-বাইরে সব জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলাকে ‘সময়ের দাবি’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। সব প্রশ্নের উপরে এই ‘সময়ের দাবি’-কে রেখেই আগামির লড়াই করার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।   


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)