MLA-মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতিকে নালিশ BJP-র, তদন্ত-রিপোর্ট নিয়ে যাচ্ছেন ডেরেকরা
রাজনৈতিক শিবির বলছে, একুশের আগে এই মৃত্যুকে ঘিরে তৃণমূল-বিরোধী জনমত গঠনে নেমে পড়েছে বিজেপি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পুলিসি তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, দু'পক্ষের দাবিই নস্যাৎ করছে BJP। BJP বিধায়ক (MLA) দেবেন্দ্রনাথ রায়ের আত্মহত্যার তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে তারা। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, পুলিস, সিআইডি সব দলদাসে পরিণত হয়েছে। তাই রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, বলছে পদ্মশিবির। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলে নতুন করে ময়নাতদন্ত করা হোক, বলছেন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের। একধাপ এগিয়ে বাবুলে দাবি, এই সুইসাইড নোটটাও জাল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও গোলমাল আছে। নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি। পাল্টা দাবি ফিরহাদ হাকিমের। এদিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা। এহেন পরিস্থিতিতে বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল।
রাজনৈতিক শিবির বলছে, একুশের আগে এই মৃত্যুকে ঘিরে তৃণমূল-বিরোধী জনমত গঠনে নেমে পড়েছে বিজেপি। হেমতাবাদকাণ্ডে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এদিন দেখা করে বিজেপির প্রতিনিধি দল। বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন,''খুনকে ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার গল্প সাজানো হচ্ছে। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই। বাংলার তদন্তকারীদের উপরে ভরসা নেই। রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছে, এই সরকারের থাকার কোনও অধিকার নেই।''
একুশের আগে বিধায়ক-মৃত্যুকে কেন্দ্রকে জমে উঠেছে শাসক-বিরোধী তরজা। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করতে চলেছে তৃণমূলও। বুধবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন ডেরেক ও'ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, বিধায়ক মৃত্যু নিয়ে পুলিসি তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবেন ডেরেকরা।
দেবেন্দ্রনাথের শেষকৃত্যে দেখা মিলেছে বঙ্গ বিজেপির গোটা ব্রিগেডকে। ছিলেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু, দেবশ্রী চৌধুরীরা। উপস্থিত হন রাজ্য বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতারাও রায়গঞ্জে হাজির ছিলেন। দলের তরফে হুইপ জারি করে সব রাজবংশী নেতাদেরও ডাকা হয়।
তবে, খুন নয়। চূড়ান্ত হতাশা থেকে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। হেমতাবাদ কাণ্ডের তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে পুলিসের হাতে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, গলার ফাঁসেই মৃত্যু হয়েছে হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের। ঘাড়ে কালসিটের দাগ এবং বাঁ-হাতে ক্ষতচিহ্নের উল্লেখ রয়েছে। ফলে, পুলিসের দাবি আত্মহত্যার তত্ত্বই জোরদার হচ্ছে। এই মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হবে, বলছেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিস বলছে, মৃত বিধায়কের পকেটে একটি নোট পাওয়া গিয়েছে। যাতে তাঁর হাতে লেখা কিছু তথ্য, দুটি ছবি এবং দুটি ফোন নম্বর রয়েছে নিলয় সিনহা ও মাবুদ আলি নামে ওই দুই ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু মন্তব্যও করা আছে। নিলয়কে আটক করেছে পুলিস। তবে মাবুদ এখনও ফেরার। পুলিসের তদন্তে উঠে এসেছে প্রচুর টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সেই হতাশাতেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বিধায়ক।
আর কী বলছে তদন্ত?
বাম আমল থেকে মোহিনীগঞ্জ মিনি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন মৃত বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। চালকলের ব্যবসা শুরুর জন্য মাবুদ আলির মাধ্যমে নিলয় সিনহাকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দেন। ২০১৬ সালে দেবেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে মোহিনীগঞ্জ ব্যাঙ্ক থেকে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ ওঠে। রায়গঞ্জে সম্পত্তি বন্ধক রেখে নাবার্ডের থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন দেবেন্দ্রনাথ। মোটা টাকা চলে যাওয়ায় গত ৫-৬ মাস ধরে চরম হতাশায় ভুগছিলেন বিধায়ক। টাকা উদ্ধারের জন্য মাবুদই তখন হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসা। বিধায়কের কললিস্ট খতিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর দিনও একাধিকবার দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় মাবুদের। সূত্রের খবর, ধারের টাকাই নিলয়দের ধার দিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। তার জেরেই আত্মহত্যা বলে মনে করছে পুলিস। তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং হাতে আসা তথ্য প্রমাণে আরও জোরদার হচ্ছে আত্মহত্যার তত্ত্ব।
আরও পড়ুন- ব্যবসার মতো প্রশাসন চালাত কংগ্রেস, ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে: জ্যোতিরাদিত্য