বিলকিস বানোর ধর্ষকরা `ভালো সংস্কারের ব্রাহ্মণ`, বিস্ফোরক দাবি বিজেপি বিধায়কের
২০০২-এর গোধরায় বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা গত ১৫ আগস্ট গোধরা সাব-জেল থেকে বেরিয়ে আসে। সেই সময় ২১ বছর বয়সী, বিলকিস বানো পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। সেই সময় তিনি এবং তার পরিবার ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গার হিংসার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় তাকে গণধর্ষণ করা হয় এবং তার তিন বছরের মেয়েকেও অন্য ছয় জনের সঙ্গে খুন করা হয়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বৃহস্পতিবার গুজরাটের গোধরা থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বর্তমান বিধায়ক বলেছেন যে বিলকিস বানো মামলায় ১১ ধর্ষকের ভাল মূল্যবোধ অথবা 'সংস্কার' রয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁরা ব্রাহ্মণ এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ তাদের শাস্তি দিয়েছে। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির বিষয়ে দেশব্যাপী ক্ষোভের মধ্যেই, গুজরাটের শাসক শিবিরের একজন বিধায়ক, সিকে রাউলজি এই বক্তব্য জানিয়েছেন। ১১ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়া ধর্ষকের শাস্তি মুকুব করার জন্য গঠিত পর্যালোচনা প্যানেলের অংশ ছিলেন এমন দুইজন বিজেপি নেতার মধ্যে একজন ছিলেন রাউলজি। তিনি ধর্ষকদের সমর্থন করেছেন। ১১ জন বন্দিকে জেল থেকে মুক্তির পরে মিষ্টি এবং মালা দিয়ে বরণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাউলজি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ছিল। দোষীদের মধ্যে একজন ক্ষমা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাওয়ার পরে এই বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোর পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সিকে রাউলজি বলেন, ‘তারা কোনও অপরাধ করেছে কি না তা আমি জানি না। তবে অপরাধ করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে’। বিধায়ক আরও বলেন যে দোষীদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে।
‘তারা ব্রাহ্মণ ছিল এবং ব্রাহ্মণদের ভাল সংস্কারের মানুষ বলে পরিচিত। তাদের কোণঠাসা করা এবং শাস্তি দেওয়া কারোর খারাপ উদ্দেশ্য হতে পারে’ বলেও জানিয়েছেন ওই বিধায়ক। ওই বিধায়কের বক্তব্যের ভিডিওটিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি আরও বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় আসামিদের আচরণ ভালো ছিল।
সমালোচনার মুখে, গুজরাট সরকার তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। তারা জানিয়েছে যে তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ১৯৯২ সালের নীতি অনুসারে মুক্তির আবেদন বিবেচনা করেছে। এই পদক্ষেপটি অনেক বিরোধী দলের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির সোশ্যাল মিডিয়া আহ্বায়ক, ওয়াই সতীশ রেড্ডি এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। মাইক্রো-ব্লগিং ওয়েবসাইটে ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি টুইট করেছেন, ‘তারা ব্রাহ্মণ, ভাল সংস্কারের পুরুষ। জেলে তাদের আচরণ ভালো ছিল’: বিজেপি বিধায়ক #সিকেরাউলজি। বিজেপি এখন ধর্ষকদের 'ভালো সংস্কারের পুরুষ' বলে অভিহিত করছেন। একটি দল এর থেকে বেশি নিচে নামতে পারেনা!’
এর আগে, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীও টুইট করেছিলেন যে এই মুক্তি মহিলাদের প্রতি বিজেপির মানসিকতা প্রদর্শন করে। তিনি লেখেন, ‘উন্নাও - বিজেপি বিধায়ককে বাঁচাতে কাজ করেছে। কাঠুয়া - ধর্ষকদের পক্ষে মিছিল। হাথরস - ধর্ষকদের পক্ষে সরকার। গুজরাট - ধর্ষকদের মুক্তি ও সম্মান। অপরাধীদের সমর্থন মহিলাদের প্রতি বিজেপির নিম্ন মানসিকতা প্রদর্শন করে। আপনি এই ধরনের রাজনীতির জন্য লজ্জিত নন, প্রধানমন্ত্রী জি’।
পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এই ঘটনায় কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। টিএমসি সাংসদ কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বকে আক্রমণ করে বলেছেন যে দোষীদের অকাল মুক্তি ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়ে। মহুয়া মৈত্র এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘কীভাবে যে কোনও নারীর জন্য এভাবে বিচার শেষ হতে পারে? অমিত শাহ? নরেন্দ্র মোদী? ভারত? ভারতীয়রা?’
আরও পড়ুন: Bengaluru: শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে রাজি হননি স্ত্রী! রাগের মাথায় চরম পদক্ষেপ যুবকের
অন্যদিকে, ২০০২-এর গোধরায় বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা গত ১৫ আগস্ট গোধরা সাব-জেল থেকে বেরিয়ে আসে। সেই সময় ২১ বছর বয়সী, বিলকিস বানো পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। সেই সময় তিনি এবং তার পরিবার ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গার হিংসার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় তাকে গণধর্ষণ করা হয় এবং তার তিন বছরের মেয়েকেও অন্য ছয় জনের সঙ্গে খুন করা হয়।