`পঞ্চায়েত অশান্তি`কে ইস্যু করে বিরোধী জোটের মুখ মমতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে পথে বিজেপি
২৫ জুন দেশের সবকটি রাজ্যের রাজধানীতে বিক্ষোভে নামবে বিজেপি।
অঞ্জন রায়
তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে দেশজুড়ে বিক্ষোভে নামতে চলেছে বিজেপি। আগামী ২৫ জুন দেশের সবকটি রাজ্যের রাজধানী শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বিজেপি নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যু করতে তুলছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে দেশের অবিজেপি দলগুলিকে নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ার প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা বিজেপির জন্য রীতিমতো অস্বস্তিজনক। ফলে পাল্টা কৌশল হিসেবে খোদ মমতা রাজ্যেই আইনশৃঙ্খলার করুণ পরিস্থিতি দেশের সামনে তুলে ধরতে চাইছে গেরুয়া ব্রিগেড। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, পঞ্চায়েতের ভোটের পর প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। তাহলে এখন হঠাত্ বিক্ষোভ কর্মসূচি কেন? নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের চাপেই কি এই সিদ্ধান্ত?
বুধবার নয়াদিল্লিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে বৈঠকে বসেছিল গেরুয়া শিবির। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে গোটা দেশে জনমত গড়ে তোলা হবে। ওই বৈঠকে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু। ২৫ জুন দেশের সবকটি রাজ্যের রাজধানীতে বিক্ষোভে নামবে বিজেপি। ওই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বঙ্গ বিজেপির নেতানেত্রীদের এক জন করে থাকবেন। ২ জুলাই নয়াদিল্লির রাজঘাটে ধরনা কর্মসূচিতে থাকবেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, ও শমীক ভট্টাচার্যরা। ওইদিন পঞ্চায়েত ভোটে নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও দরবার করবে বিজেপি। এর পাশাপাশি ১৮ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও অভিযানে নামছে বিজেপি।
লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ২২টি আসনকে ইতিমধ্যে টার্গেট করেছে বিজেপি। সেই লক্ষ্য পূরণে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথ ধরতে চাইছে তারা। এই মুহূর্তে দেশে বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে জন্যই জাতীয়স্তরে মমতাকে আক্রমণ করে বিরোধী জোটকে নিশানা করতে চাইছেন শাহ-মোদী, মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। যদিও পঞ্চায়েতের ভোটগণনার মাসখানেক কেটে যাওয়ার পর বিজেপি নেতাদের এহেন কর্মসূচি আদৌ কতটা দাগ কাটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যের নিচুতলার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সমালোচনার মুখে কিছু একটা করে দেখানোর তাগিদ থেকেই কি নেতাদের এহেন সিদ্ধান্ত? জল্পনা রাজনৈতিক মহলের অন্দরে।
কেন এই প্রশ্ন উঠছে? রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কর্মীদের পাশে নেতাদের পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে দলের নিচুতলা থেকে। একইসঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে অলআউট আন্দোলনে যেতেও পারেনি রাজ্য নেতৃত্ব, সে নিয়েও ক্ষোভ তৃণমূলস্তরে। আরও একটা প্রশ্ন এক্ষেত্রে উঠছে, পঞ্চায়েত ভোটগণনা মেটার পর সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই ধরনের কর্মসূচি নিলে যে অভিঘাত তৈরি হত, তা কি এখন সম্ভব হবে? ফলে আপাতত অনেকগুলি অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে বঙ্গ বিজেপির এই রাজনৈতিক কর্মসূচি। কিন্তু তা কি ফের ব্যর্থ হবে? নাকি দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়দের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করতে সমর্থ হবে, তার জবাব দেবে ভবিষ্যত্।
আরও পড়ুন- 'নরম হিন্দুত্ব' রক্ষায় ১০ সেকেন্ডের 'সংখ্যালঘুপ্রীতি', রাহুলকে খোঁচা বিজেপির