৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্য, অথচ সাহসী হতে পারলেন না মোদী
বাজেটে ৫ বছরে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার স্বপ্ন ফেরি। কিন্তু, সেজন্য সংস্কারে যতটা সাহসী হওয়া দরকার, ততটা সাহস কি দেখাতে পারলেন অর্থমন্ত্রী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুযোগ হাতছাড়া করল সরকার।
শহরের দল, ব্যবসায়ী মহলের সমর্থনে পুষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে এটাই ছিল বিজেপির পরিচিতি।বাজেটে ইঙ্গিত, সেই পরিচিতি ঝেড়ে ফেলে গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য এখন গ্রাম। বিজেপির বিপুল জয়ের পেছনে যে গ্রাম ভারতের বড় অবদান। তাই, অতি ধনীদের ওপর কর বসিয়ে গ্রামাঞ্চলে নিজেদের জনভিত্তি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে বিজেপি। কিন্তু, সে জন্য তো চাই উন্নয়নে আরও সরকারি খরচ। তা আসবে কোথা থেকে? ভরসা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ। বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এবার ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা। আরও বেশি বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংজ্ঞা বদলের কথাও বলা হয়েছে। বাজেটে প্রস্তাব, সরকারি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা গেলে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারের ৫১শতাংশ শেয়ার থাকার নিয়ম থেকে সরে আসা হবে।
বাজেটে ৫ বছরে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এজন্য আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটার কথা বলেছেন তিনি। বলা হয়েছে, বিমা ও বিমানে আরও বেশি বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্রের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে কেন্দ্র। বিমা ব্যবসায় মধ্যস্থতার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলিতে ১০০% বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা হবে। সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে বিদেশে লগ্নির জন্য স্থানীয় স্তরে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করা হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ, আরও বেশি বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়া। নির্মলা সীতারমনের বাজেটে, সংস্কারমুখী ইঙ্গিত থাকলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিগ ব্যাং রিফর্মের কোনও ছোঁয়া এ বাজেটে দেখা যায়নি। যদিও ৫ বছরে পরিকাঠামোয় ৫০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যে, কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বাজার থেকে টাকা তোলার ওপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য,ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেট ফান্ডে বিদেশি লগ্নির নিয়ম শিথিলের কথা বলেছেন তিনি। ২০৩০ সাল পর্যন্ত রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫০ লক্ষ কোটি টাকা জোগাড়ে পিপিপি মডেল, স্পেশাল পারপাস ভেহিকল তৈরির কথা বলা হয়েছে। গঙ্গায় পণ্য পরিবহণ বাড়াতে চলতি অর্থবর্ষেই হলদিয়া এবং সাহেবগঞ্জে নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। ফরাক্কায় তৈরি হবে নেভিগেশনাল লক। এর ফলে, আগামী ৪ বছরে গঙ্গায় পণ্য পরিবহণের পরিমাণ ৪ গুণ বাড়বে বলে বাজেটে দাবি করা হয়েছে।
২৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায় কর্পোরেট করের হার কমিয়ে ২৫% করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে খুশি হলেও শিল্পমহল কিন্তু বলছে, হিন্দু গ্রোথ রেট থেকে পরের ধাপে পৌছতে নয়ের দশকে যে পদক্ষেপ করা হয়েছিল, এবার বিপুল জয়ের পরও সংস্কারে সে সাহস দেখাতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন- শ্যাম ও কূল রেখে 'সাবধানী বাজেট' পেশ নির্মলা সীতারমনের