বাজেটে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে `ফ্যান্টাস্টিক ফোর`-এর কী রণনীতি?
ডিসেম্বর থেকে প্রায় ২০০জন শিল্পোদ্যোগীর সঙ্গেও বৈঠক করেছে মোদী সরকার।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বাজেট পড়বেন নির্মলা সীতারমন। পর্দার পিছন থেকে তাঁকে সাহায্য করেছেন ৪ জন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। বিজেপির অন্দরে তাঁদের বলা হচ্ছে, ফ্যান্টাস্টিক ফোর বা ফ্যাব ফোর। ৫টি শর্ত দিয়েছেন তাঁরা। বাজারের ঘুম ভাঙাতে সেটাই নাকি সাফল্যের ফর্মুলা। নির্মলা, কী তা মানবেন? বাজেটে দেখা যাবে তার প্রতিফলন?
ব্রিফকেস ছেড়ে বহিখাতা। ইন্দিরা গান্ধীর পর প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী। দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে চমক ছিল বিস্তর। কে ভেবেছিল, অর্থনীতিও 'ভুল' বুঝে পিছনে হাঁটবে? লাল বহিখাতা যে অর্থনীতিতে রেড সিগন্যালের প্রতীক হয়ে উঠবে তা বোধহয় বিজেপির মাথারা বোঝেননি। অর্থনীতি ফিরে গেছে গরুর গাড়ির যুগে। জিডিপি নিম্নমুখী। মুদ্রাস্ফীতি চোখ রাঙাচ্ছে। ঈশান কোণে রাজস্ব ঘাটতির ইঙ্গিত। অর্থনীতিতে যে সিলেবাসের সাজেশন খাটবে না তা বেশ বুঝতে পারছেন নির্মলা সীতারমন। চিন্তার ভাঁজ গভীর হয়েছে মোদীর কপালেই। এই প্রথম অর্থনীতি নিয়ে শিল্পমহলের মতামত নিয়েছেন মোদী ও অমিত শাহ।
শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন নির্মলা সীতারমনও। সূত্রের খবর, বাজেট তৈরি করতে তাঁকে সাহায্য করছে বিজেপির বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরা কারা?
গোপালকৃষ্ণ আগরওয়াল- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর।ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রাক্তন ডিরেক্টর। বিজেপির যে অর্থনীতি শাখা ছিল তারও সদস্য ছিলেন। শিল্পমহলের সঙ্গে সেতুবন্ধের কাজটি ইনিই করছেন।
সৈয়দ জাফর ইসলাম: ডয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর। প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। এয়ার ইন্ডিয়ার অন্যতম ডিরেক্টর। নির্মলা সীতারামণের পরামর্শদাতার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
নরেন্দ্র তানেজা: BRICS বিজনেস কাউন্সিল এবং ওয়ার্ল্ড এনার্জি পলিসি সামিটের সভাপতি। মুখের ওপর অপ্রিয় সত্যি কথা বলতে পারার বদনাম রয়েছে।
অমিত মালবীয়: ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র থেকে এসেছেন। দেশের মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রকে হাতের তালুর মতো চেনেন।
বিজেপির অন্দরে এই চারজনকে ফ্যান্টাস্টিক ফোর বা ফ্যাব ফোর নামে ডাকা হচ্ছে। বাজেট তৈরি করতে এঁদের মতামতকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বর থেকে প্রায় ২০০জন শিল্পোদ্যোগীর সঙ্গেও বৈঠক করেছে মোদী সরকার। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে বাজেটের কয়েকটি ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে।
ব্যয়সঙ্কোচ নয়: আর্থিক বৃদ্ধি বাড়াতে হলে সরকারি খরচ কোনওভাবেই কমানো চলবে না। তাহলে বাজারে চাহিদা হুহু করে নেমে যাবে।
চাহিদা বাড়াও: মানুষের খরচের অভ্যাস আবার জাগিয়ে তুলতে হবে। গ্রামীণ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। গরিবের হাতে টাকা দিতে হবে।
নতুন লগ্নি চাই: বেসরকারি লগ্নি ছাড়া অর্থনীতি এগোবে না। বিদেশি লগ্নি টানতে আকর্ষণীয় অফার দিতে হবে।
রোজগারে বৈষম্য কমাও: অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ১% অতিধনীর হাতে দেশের ৪২% সম্পদ রয়েছে। অর্থের অসমবণ্টন হলে নতুন ক্রেতা তৈরি হবে কী করে?
রাজ্যগুলির ধারের সীমা বাড়াও: ধার করার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ালে রাজ্যগুলি উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ বাড়াতে পারবে। গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের ক্ষমতায়ন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য মিলিত উদ্যোগে এগোয় অর্থনীতি। সেই অর্থনীতি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শুধু দিল্লি থেকে বাঁশি বাজালে কাজ হয় না। প্রতি প্রদেশেরই ব্যয় ক্ষমতা বাড়াতে হয়। পুঁজির অভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক রাজ্য অভিযোগ জানিয়ে আসছে। তাদের আর অগ্রাহ্য করলে চলবে না, বলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
আরও পড়ুন- ঝিমিয়ে অর্থনীতি, 'হিন্দু গ্রোথ রেট'কে টেনে তোলার কঠিন লক্ষ্যের মুখে নির্মলা