নিজস্ব প্রতিবেদন: এক সপ্তাহ অতিক্রম করে ফেলা কৃষক বিক্ষোভ আজ কি শান্ত হবে? এমনই অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কেননা, আজ, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার বিক্ষুব্ধ  কৃষকনেতাদের সঙ্গে বসেছে যথেষ্ট নরম মনোভাব নিয়ে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নতুন কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ আটদিন হল। এর মধ্যে তিন বার কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্র। কিন্তু কোনও বৈঠক থেকেই সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। আজ, বৃহস্পতিবার চতুর্থ দফার বৈঠক। বৈঠকটির দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।


নতুন যে কৃষি আইন কেন্দ্রীয় সরকার এনেছে তার বিরুদ্ধে পঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরাই মূলত প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে অন্যান্য রাজ্যের কৃষকরাও বিরোধিতায় নামেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিক্ষোভের সূত্রপাত পঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে। নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সঙ্গে বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণও। থাকছেন অমিত শাহ।


কৃষকরা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, আজকের বৈঠকে শেষ সুযোগ দেওয়া হবে কেন্দ্রকে। সরকার যদি নতুন আইন প্রত্যাহার না করে, তা হলে তাঁরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।


তবে বৈঠকটি নিয়ে সব পক্ষই আশাবাদী। সূত্রের খবর, বৈঠকে কৃষক নেতাদের কিছু প্রস্তাব দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আইন তারা বদলাবে না, তা কেন্দ্র আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তবে আইনের কোথায় কোথায় কৃষকদের আপত্তি সেটা জেনে সেই মতো একটা বিকল্প ব্যবস্থা তারা করবে।


কী সেই প্রস্তাব? 


কৃষকদের মূল আপত্তি এমএসপি (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) এবং এপিএমসি (এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটি) নিয়ে। কেননা, কৃষকদের দাবি,  ন্যূনতম দাম (এমএসপি) ও কিসান মান্ডির (এপিএমসি) ব্যবস্থা গোটা দেশে যে ভাবে কার্যকর হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। ফলে সব রাজ্যের কৃষক এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন না। যেখানে যেখানে এই দু'টি ব্যবস্থা যথাযথ সেখানে ধনী চাষিরাই সমস্ত সুবিধা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। প্রান্তিক চাষিরা প্রায় কোনও সুবিধাই পাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার এই অসুবিধার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে, তারা এ ক্ষেত্রে সংশোধনী আনতে তৈরি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র 'এফআরপি' (ফেয়ার অ্যান্ড রেমুনারেটিভ প্রাইস)ও আনতে পারে। এই ব্যবস্থা এখন শুধু উত্তর প্রদেশে আখ চাষের ক্ষেত্রে আছে। চিনিকলের মালিকেরা আখচাষিদের যাতে ন্যূনতম দাম দিতে বাধ্য থাকেন, সেজন্যই এ ব্যবস্থা। আরও একটি ভাবনা আছে কেন্দ্রের। কৃষকদের স্বার্থের দিকে চেয়ে তারা রাজ্যগুলিকে 'এসএপি' (স্টেট অ্যাডভাইসরি প্রাইস) চালু করার অনুমতিও দিতে পারে। এর বলে কেন্দ্র যে 'এফআরপি' ঠিক করবে, প্রয়োজনে রাজ্য কৃষকদের তার চেয়েও বেশি লাভ পাইয়ে দিতে চাইলে সেটা পারবে।


কৃষিক্ষেত্রে ফসল কেনার যে পদ্ধতি (প্রকিওরমেন্ট প্রসেস) এখনও পর্যন্ত বহাল, তাতে কৃষকেরা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু কৃষকদের সন্দেহ, নতুন আইনে তাঁরা তা পাবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে, এই পদ্ধতি আগের মতোই থাকবে। আসলে জুন মাসে কেন্দ্র 'ফার্মাস প্রডিউসড ট্রেড  অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অর্ডিন্যান্স ২০২০' এনেছিল। যা থেকে এই সন্দেহ দানা বাঁধে কৃষকদের মনে। সোজা কথায়, যে পরিমাণ ফসল কেন্দ্র কেনে এবং যে পরিমাণ ভরতুকি দেয়, সেটা আগামী দিনেও দেবে কিনা , এই নিয়েই শঙ্কা। কেন্দ্র এই বিষয়েও আশ্বস্ত করতে পারে কৃষকদের। 


চুক্তিচাষে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসের সঙ্গে কাজ করতে হয় কৃষকদের। কাজ করতে গিয়ে যদি কর্পোরেট হাউসের সঙ্গে কোনও সংঘাত বাধে, তবে কোথায় তা জানাবেন কৃষকেরা? এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র আইন করেছে। তারা বলেছে, সিভিল কোর্টে নয়, হাইকোর্টে গিয়েই মামলা করতে হবে কৃষককে। কিন্তু কৃষকদের মত হল, সত্যিই ক'জন ছোট চাষির পক্ষে হাইকোর্টে গিয়ে অভিযোগ জানানো সম্ভব? এ বিষয়েও এখন নতুন করে ভাবছে কেন্দ্র। এখন থেকে সিভিল কোর্টেও চাষিরা মামলা করতে পারবেন, এই মর্মে অনুমতি দেওয়া হতে পারে। 


এতদিন চাষের ক্ষেত্রে যে  বিদ্যুৎ খরচ হত সে বিষয়ে কিছু ছাড় পেতেন চাষিরা। নতুন কৃষি আইনে সেটা পাবেন কিনা, তা নিয়েও তাঁদের সন্দেহ জেগেছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, তারা আপাতত বিদ্যুতের বিষয়ে নতুন নিয়ম স্থগিত রাখবে।


কৃষিকাজ করতে গিয়ে চাষিরা যদি পরিবেশ দূষণ করেন সেটা রোখার জন্য গত অক্টোবরে 'কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট' সংক্রান্ত একটি অর্ডিন্যান্স এনেছিল কেন্দ্র। এতে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা বা পাঁচ বছরের জেল হতে পারে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের। এটা নিয়েও চাষিদের আপত্তি প্রবল। কেন্দ্র এমন আভাস দিয়েছে, প্রয়োজনে তারা এটাও স্থগিত রাখতে পারে।


অনেকটাই নরম মনোভাব নিয়ে বৈঠক করে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শেষ পর্যন্ত কতটা শান্ত করতে পারে তারা, সেটাই এখন দেখার। 


আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি বরিস জনসন! ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ মোদীর