১৯৮৭, ১৯৭১ না ২০১৪ কোনটা ঠিক? নাগরিকত্বের শর্তে ঘেঁটে ঘ মোদীর সরকারই
ভারতীয় নাগরিক প্রমাণে জন্মের শংসাপত্র বা জন্মস্থানের প্রমাণের নথিই যথেষ্ট বলে দাবি সরকারের। কিন্তু ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা পাসপোর্টকে নাগরিক পরিচয় হিসেবে গ্রাহ্য করতে চাইছে না সরকার।
সব্যসাচী চক্রবর্তী: নাগরিকত্ব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের টুইটে নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়াল ভারতের নাগরিক কারা, তাই নিয়ে নয়া নিয়মের আমদানি!
মূলত তিনটি শর্তের কথা বলা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। কী শর্ত?
১. যাঁরা নিরক্ষর যাঁদের হাতে শংসাপত্র সেভাবে নেই। স্থানীয়দের পরিচিতি, বয়ান ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাঁদের নাগরিকত্ব মিলতে পারে।
২. কারোর ১৯৭১ সালের আগে জন্ম হলে তার পূর্বপুরুষদের নথি প্রয়োজন নেই
৩. ভারতীয় নাগরিক প্রমাণে জন্মের শংসাপত্র বা জন্মস্থানের প্রমাণের নথিই যথেষ্ট।
প্রথম শর্তে গোঁজামিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। নিরক্ষরকে মৌখিক চিহ্নিতকরণের মতো বিষয়টি নিয়ে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। কারা চিহ্নিত করবে কে নাগরিক? যদি রামের সঙ্গে মধুর শত্রুতা থাকে, তাহলে মধু তো বলতেই পারেন, রাম বছরখানেকের বান্দা! এছাড়াও নাগরিক যদি বা চিহ্নিত হল, তারপর কী প্রক্রিয়া? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছে এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাঁর নাগরিকত্ব ঠিক হবে? সেই যথাযথের যথার্থতা কোনখানে, তা প্রশ্নের মুখে।
১৯৭১ সাল নিয়েও বিভ্রান্তি। নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ ও পরবর্তী কালে যে সব আইন সংশোধন হয়েছিল, তাতে কিছু শর্তের কথা বলা আছে। আইন অনুযায়ী কেউ যদি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি বা তার পর ১৯৮৭ সালের পয়লা জুলাইয়ের আগে ভারতে জন্মান, তিনি এ দেশের নাগরিক। এবং কেউ যদি ১ জুলাই, ১৯৮৭ বা তারপর ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ বা তার আগে ভারতের জন্মান, এবং তাঁর বাবা বা মায়ের মধ্যে কেউ যদি ভারতীয় নাগরিক হন, তাহলে তিনিও এ দেশের নাগরিক। তাই যদি হয়, তাহলে বছরের সীমা কোনটা, ১৯৮৭ না ১৯৭১! আবার নাগরিকত্ব আইন বলছে, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব পাবেন। বিনা শর্তে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে তাঁদের। তাহলে সালের বিভ্রান্তি কেন?
অসমের NRC-র ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালটিকে সময়সীমা ধরা হয়েছিল। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন তো আলাদা। তাছাড়া অসমের ক্ষেত্রে যা নিয়ম তা গোটা দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে সরকারও দাবি করেছিল। তাহলে আবার এই ৭১-এর জিগির উঠছে কেন? ৭১-এর আগে কে কীভাবে এসেছেন, তার প্রমাণ কীভাবে হবে?
ভারতীয় নাগরিক প্রমাণে জন্মের শংসাপত্র বা জন্মস্থানের প্রমাণের নথিই যথেষ্ট বলে দাবি সরকারের। কিন্তু ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা পাসপোর্টকে নাগরিক পরিচয় হিসেবে গ্রাহ্য করতে চাইছে না সরকার। আর এখানে ছড়িয়েছে আরও বিভ্রান্তি। পাসপোর্ট তো ভারতীয় নাগরিককেই দেওয়া হয়।সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়? তাহলে তো বলতে হয়, ভারতের নাগরিক নয়, এমন ব্যক্তিকেও পাসপোর্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে সরকার। অথচ কদিন আগেই মুম্বইয়ের একটি আদালত রায় দিয়েছিল, ভোটার কার্ড আর পাসপোর্ট ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ। তাহলে?সূত্রের খবর, সরকার চাইছে, কেউ নাগরিক প্রমাণ হলে, তাঁকে দেওয়া হবে বিশেষ নাগরিক কার্ড। আবার এক কার্ড! চোখ কপালে উঠছে অনেকের। অনেকেই বুঝতে পারছেন না, সরকার আসলে ঠিক কী বলতে চাইছেন? মুখ্যমন্ত্রীও প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে আধার কার্ড করাতে গেল কেন সরকার? পাসপোর্ট যদি গ্রাহ্য না হয়, তাহলে তো অন্য দেশও বলতে পারে, আপনি ভারতের নাগরিক তার প্রমাণ কী?
ফলে দিনের শেষেও, কী করলে ভারতের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেল।
আরও পড়ুুন- এ কেমন প্রতিবাদ? প্রধানমন্ত্রীর ছবির উপর দিয়ে জুতো পরে হাঁটছেন SFI সদস্যরা