জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো:  মৃত্যুপুরী বালেশ্বর। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা একনিমেষে কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। শয়ে শয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে দেহাংশ। কোথাও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে উঁকি দিচ্ছে হাতের খানিকটা অংশ তো কোথাও পরিজনকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে বাড়ির লোকেরা। আবার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সাড়ে ছ’শোরও বেশি মানুষ। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে জখম যাত্রীদের পাশে দাঁড়ালেন স্থানীয়রা। আহতদের রক্তের জোগান দিতে দাঁড়ালেন রক্তদানের লাইনে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বালেশ্বর এবং তার আশপাশের নানা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনায় আহতরা। রক্তের অভাবে যাতে তাঁদের প্রাণ না যায়, সেই চেষ্টাই করছেন স্থানীয়রা। তাই স্বেচ্ছায় পৌঁছে গিয়েছেন হাসপাতালে। লাইনে দাঁড়িয়ে রক্তদান করছেন যাতে রক্ত সরবরাহে সমস্যা না হয়। এর পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে যাতে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় আহতদের, তার জন্য তৈরি ২০০ অ্যাম্বুল্যান্স। কাজ করছে ৪৫টি ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা টিম। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ৫০ জন চিকিৎসক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিষেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও ভ্রাম্যমান ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের দলও জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে কাজ চালাচ্ছেন।


শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় চার ঘণ্টা পরে ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ কামরার ট্রেনটি।



আরও পড়ুন: Coromandel Express Accident: LHB কামরা ছিল না বলেই কি দেশলাইয়ের বাক্সের মতো উড়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস?


আরও পড়ুন: Coromandel Express Accident: ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা, বিপর্যস্ত মানুষদের পাশে বলিউড থেকে টলিউড, সমবেদনা জানালেন জুনিয়র এনটিআর-সলমান-অক্ষয়-জিত- ঋতুপর্ণা-সৃজিত


তবে দুর্ঘটনা কী করে ঘটেছে, তার একাধিক বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেসই তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে আগে চলতে-থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে। দুর্ঘটনার অভিঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। ২৩টি কামরার মধ্যে ১৫টি কামরা লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে ও নয়ানজুলিতে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলি গিয়ে পড়ে ডাউন লাইনের উপর। বেঙ্গালুরু-হাওড়া ডাউন ট্রেনটি সেই বেলাইন কামরাগুলির উপর এসে পড়ে। হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। তবে শনিবার ভোর পর্যন্ত যে ৮৮ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল রেল, তাঁরা প্রত্যেকেই করমণ্ডলের যাত্রী বলেও জানানো হয়েছিল।


রেল সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মালগাড়িটি খড়্গপুর থেকে ছাড়ে। তার ১৩ মিনিট পরে খড়্গপুর স্টেশন ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। মালগাড়ি এবং করমণ্ডল এক্সপ্রেস একই লাইনে চলছিল ১৩ মিনিটের ব্যবধানে। বালেশ্বর স্টেশন ছাড়িয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার যাওয়ার পরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক অনুমান, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক যে ওই ১৩ মিনিটের গতির ব্যবধান কমিয়ে ফেলেছেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তার কারণ সিগন্যালের ত্রুটি হতে পারে। হতে পারে সিগন্যাল দেওয়া হলেও চালক তা খেয়াল করেননি। অথবা একই লাইনে যে মালগাড়িটি রয়েছে, তা তিনি খেয়াল করেননি।


তবে দুর্ঘটনার কোনও কারণই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে এর সঠিক কারণ জানা যাবে। আপাতত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে হতাহতদের উদ্ধারে এবং ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উপর। কারণ, ওই দুর্ঘটনার ফলে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন শুক্রবার বাতিল করতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শনিবারের কিছু ট্রেনও। খড়্গপুর থেকেও ওড়িশাগামী কিছু ট্রেন বাতিল হয়েছে।


দুর্ঘটনার পরই একাধিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর - ০৩৩ ২৬৩৮২২১৭, খড়গপুরের হেল্পলাইন নম্বর - ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯, বালেশ্বরের হেল্পলাইন নম্বর - ৮২৪৯৫৯১৫৫৯, ৭৯৭৮৪১৮৩২২, শালিমারের হেল্পলাইন নম্বর - ৯৯০৩৩৭০৭৪৬, চেন্নাইয়ের হেল্পলাইন নম্বর - ০৪৪ ২৫৩৩০৯৫২/০৪৪-২৫৩৩০৯৫৩/০৪৪-২৫৩৫৪৭৭১, ভদ্রক- ৮৪৫৫৮৮৯৯০০, কেওনঝড় রোড- ৮৪৫৫৮৮৯৯০৬, কটক- ৮৪৫৫৮৮৯৯১৭, ভুবনেশ্বর- ৮৪৫৫৮৮৯৯২২, খুরদা রোড- ৬৩৭০১০৮০৪৬\



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)