অনির্বাণ সিনহা


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও একটি ১৮ অগাস্ট চলে গেল।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিণতি রহস্যের কিনারা এখনও হল না।


যদিও গত বছরের মত এ বছরও কেন্দ্রীয় সরকারের  একটি মন্ত্রক এই দিনটিকেই নেতাজির মৃত্যুদিনের সমান মর্যাদা দিল। টুইট  করে শ্রদ্ধা জানালেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। সামান্য একটু হইচই করলেন নেতাজির অমরত্বে বিশ্বাসী ভক্তরা। কিন্তু, ইউপিএ শাসনে এমন ঘটলে যা প্রতিক্রিয়া হতো তার তুলনায় এবারের হইচই, নিতান্তই ভূমিকম্পের পাশে হৃদকম্পের সঙ্গে তুলনীয়। গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শেষ পর্যন্ত আরেকটি টুইটে ব্য়াখ্যা দিতে বাধ্য হয়, এই দিনটিকে তারা নিশ্চিত ভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। ১৯৪৫-এর এই দিনটিতেই শেষবারের জন্য় জনসমক্ষে নেতাজিকে দেখা গিয়েছিল । সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই তাদের এই শ্রদ্ধা।এর সঙ্গে এই দিনটিকে সরকারি ভাবে মৃত্যুদিন হিসেবে মান্যতা দেওয়ার কোনও যোগ নেই। কিন্তু ,এবার?এবার আর এসব কিছুই করতে হয়নি। তবে কি লকডাউনে নেতাজি সম্পর্কে আগ্রহ হারালেন সাধারণ মানুষ? সাদা চোখে দেখলে ব্যাপারটা তেমন ঠেকলেও গভীরে গেলে মালুম হবে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের মতই এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়।


নেতাজি ১৯৪৫ এর ১৮ অগাস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনাতেই শহিদ হয়েছেন অথবা ওই দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্য়ু দূর অস্ত, কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ওইদিন তাইহোকুতে ঘটেনি--এই দুই শিবিরে মোটের ওপর বিভক্ত নেতাজির ভক্তকুল। দুটি মতের পক্ষে ও বিপক্ষেই যুক্তি আছে। ধোঁয়াশাও আছে। যেমন,মনোজ মুখার্জি কমিশনের কাছে তাইওয়ান সরকারের অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের দেওয়া চিঠি। ওইদিন তাইহোকুতে কোনও দুর্ঘটনার কথাই তাদের কাছে থাকা নথিতে নেই, জানিয়েছে তাইওয়ান সরকার। এতে উল্লসিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বে অবিশ্বাসীরা। 



কিন্তু, একটা সাধারণ জিজ্ঞাসার উত্তর মেলেনি। দুর্ঘটনার সময় জাপানের আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি চলছে। সেই সময় ওই বিমান বন্দরের সামরিক বিমান চলাচলের নথি জাপানি সামরিক কর্তৃপক্ষ কেন ভাবীকালের নেতাজি গবেষকদের কথা ভেবে সংরক্ষিত করে যাবেন, বিশেষত যে দেশ, যে বিমানবন্দর তাদের নিজেদের নয়, যুদ্ধে দখল করা,সেখানকার পরবর্তী শাসকদের হাতে তা যাবে জেনেও, এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তাই নথি না থাকা আর বাস্তবে বিমান দুর্ঘটনা না ঘটা --এ দুইয়ের সংযোগ নাও থাকতে পারে, বিশেষত বিশ্বযুদ্ধের EXTRA ORDINARY পরিস্থিতিতে। 


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: নাটক দিয়েই বিপ্লব হয়! উৎপল নিজেকে বলতেন,"আমি শিল্পী নই, প্রপাগান্ডিস্ট"


অন্যদিকে, দুর্ঘটনার তত্ত্বে খোদ ব্রিটিশ ও পরে আমেরিকান গোয়েন্দা বিভাগের অবিশ্বাস ও আলাদা তদন্ত নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য আরও গভীর করেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সব তদন্তেই সিদ্ধান্ত প্রায় এক। বিমান দুর্ঘটনাতেই সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়া সূত্রে পাওয়া কিছু অপ্রত্যক্ষ প্রমাণও অবশ্য দুর্ঘটনার পরও নেতাজির জীবিত থাকা ও সোভিয়েতে থাকা নিয়ে কৌতুহল বাড়িয়েছে। কিন্তু, যাকে বলে দিনের আলোর মত স্পষ্ট ও স্বচ্ছ কোনও প্রমাণ আজও কোনও তত্ত্বের পক্ষেই মেলেনি। যাঁরা তাইহোকুতে নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্ব মানেন না তাঁদের মোটের ওপর  ২টি মত



১) সোভিয়েত রাশিয়ায় নেতাজি চলে যান, দুর্ঘটনার মিথ্য়ে গল্প সাজিয়ে। সেখানে প্রথমে স্তালিনের আতিথ্যে ও আদরে এবং স্তালিনের মৃত্যুর পর চরম অত্যাচারে সোভিয়েত কারাগারে বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তাঁর মৃত্যু হয়। অথবা, স্তালিনের মৃত্যুর পরও নেতাজি বহাল তবিয়তে রাশিয়াতেই ছিলেন। তাসখন্দ চুক্তি সইয়ের সময়ও এক রহস্যজনক, unidentified ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে এই তত্ত্বের সমর্থকরা বলেন নেতাজি সক্রিয় ভাবে এরপরও দক্ষিণ এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদান রেখে গিয়েছেন।


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: এখনও বারুদের গন্ধ মেলে বিপ্লবীদের 'বোমা বাঁধার ঠিকানা' ২৭ নম্বর কানাই ধর লেনে


২) নেতাজি প্রথমে সোভিয়েতে থাকলেও পরে এক সাধু বা সন্ন্যাসীর বেশে ভারতে ফিরে আসেন। রাম জন্মভূমির কাছেই গুমনামি বাবা হিসেবে তাঁর জীবন কাটে। দেশে থেকে জাতীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা ঘটনা ও সঙ্কটে তিনি ভূমিকা দিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৫-তে ফৈজাবাদ শহরেই তাঁর জীবনাবসান হয়।



মুশকিল হল, যিনি যৌবনে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্য়াসী হবার আধ্যাত্মিক বাসনা ছেড়ে, দেশের সেবায় রাজনীতিকের জীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি দেশ স্বাধীন হয়েছে দেখেও এবং স্বাধীন দেশের সামনে হাজারো সঙ্কট দেখেও কীসের ভয়ে বা কোন বিতৃষ্ণায় রাজনৈতিক জীবন থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে এক 'গুমনামি' সাধুর জীবন বেছে নিলেন, সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর এই মতের  বিশ্বাসীদের কাছে পাওয়া যায় না।


ঠিক যেমন বোঝা যায় না , কোন গূঢ় কারণে জাপানি সামরিক কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর পরও সুভাষচন্দ্র বসুর ডেথ সার্টিফিকেটটি তাঁর নিজের নামে  লিখলেন না। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায়, হাসপাতালে ভর্তি করার সময় যে কোনও মুহুর্তে আমেরিকান ও ব্রিটিশ সৈন্যদের তাইওয়ানে পা রাখার আশঙ্কা ছিল। সম্ভাব্য় সেই বিপদের ক্ষেত্রে নেতাজির প্রকৃত পরিচয় ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনার কাছে গোপন রাখতেই পেশেন্ট ডিটেলস অন্য নামে (এক জাপানি অফিসারের নামে)ফিলাপ করা হয়েছিল, তাহলেও মৃত্যুর পর সেই তথ্য গোপন করার কোনও কারণ থাকতে পারে না। বিশেষত, নেতাজির তথাকথিত 'চিতাভস্ম' যখন কোনও গোপনীয়তা ছাড়াই জাপানের রেনকোজি মন্দিরে স্বনামে রাখার বন্দোবস্ত করেন জাপানি কর্তৃপক্ষ।


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: জহরের কপালে চুম্বন এঁকে দিয়ে সুচিত্রা সেন বলেছিলেন, তুমি চলে গেলে চার্লি!


তাই সুভাষচন্দ্র বসুর অফিসিয়াল ডেথ সার্টিফিকেট কেন জাপান সরকার আজও জনৈক ইচিরো ওকুরার নাম থেকে তার নামে পরিবর্তন করতে পারল না সেই সঙ্গত প্রশ্নও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কাম্য ছিল। যা আজও দ্বিপাক্ষিক স্তরে সরকারিভাবে কখনও তোলা হয়নি। অন্তত,তেমন কোনও বিবৃতি দু'দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই আজ পর্যন্ত নেই।



এখানেই ভূমিকা ভারত সরকারের। তাইহোকু দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্য়ুর পক্ষে ও বিপক্ষের সবকটি মতকে এক জায়গায় আনলে,স্পষ্ট  হয়ে যায়,নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য়ের কিনারা হতে পারে তিনটি দেশের সরকারের সাহায্য়ে। জাপান,সোভিয়েত রাশিয়া ও ভারত। জাপানে এখনও নেতাজি সম্পর্কিত দুটি ফাইল ডি-ক্লাসিফাই করা হয়নি। নেতাজির পরিবার (তাইহোকুতে মৃত্য়ুর পক্ষে ও বিপক্ষে,সব পক্ষই) বারবার এই দুটি ফাইল প্রকাশ্য়ে আনার দাবি জানিয়েছে। জাপান সরকারের তদন্ত কমিটি ১৯৫৬-তে তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্য়ুর তত্ত্বেই স্পষ্টভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এটা জেনেও নেতাজি পরিবারের সব মতের, সব পথের সদস্য়দের এই দাবি কিছুটা ইঙ্গিতবাহী। ভারত-জাপান দীর্ঘ সুসম্পর্কের সুবাদে জাপান সরকারকে নেতাজি সম্পর্কিত এই দুটি ফাইল ডি-ক্লাসিফাই করতে অনুরোধ জানানো ভারত সরকারের পক্ষে খুবই ন্যায্য ও শ্রদ্ধাপূর্ণ কূটনৈতিক আবদারগুলোর একটা হতেই পারত। কিন্তু,তা আজ পর্যন্ত হয়নি। অতীতে রেনকোজি মন্দিরের চিতাভস্ম সরাসরি দেশে নিয়ে আসার জন্য় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের যে বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তার ছিটেফোঁটাও ফাইল ডি-ক্লাসিফাই করতে জাপান সরকারের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে ছিল না।


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: নিজেকে হিন্দু না বলে, মুসলমানের সঙ্গে সমস্ত প্রভেদ উচ্ছেদ করে দিই তাহলে...


সোভিয়েত রাশিয়া আজ লুপ্ত। কিন্তু,সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা KGB-র সব নথি এখন রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা GRU-র হস্তগত। আজ পর্যন্ত ভারতের কোনও কেন্দ্র সরকার নেতাজি সম্পর্কিত কোনও নথি বা প্রমাণ পেশ করতে সোভিয়েত বা রাশিয়ার শাসকদের সঙ্গে কোনও স্তরে কথা বলেনি। মুখার্জি কমিশন এ বিষয়ে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানালেও অটল বিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ এবং মনমোহন সিং-এর ইউপিএ-১ সরকার এ প্রসঙ্গে হিরণ্ময় নীরবতা পালন করে গেছে।


জাপান ও সোভিয়েত প্রসঙ্গ সামনে এলেই দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির একটা অজুহাত সরকারি ভাবেই কেন্দ্র সরকারের তরফে বারবার সামনে আনা হয়। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ভারতীয় বিদেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এ কথা হলফনামা দিয়ে পর্যন্ত জানিয়েছে। এও আর এক অসাড় যুক্তি। স্তালিনের কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া বা তোজোর ফ্যাসিস্ট জাপানের কোনও কাজের দায়িত্ব আজকের রুশ বা জাপানি শাসকদের কাঁধে চাপানোর কথা কোনও উন্মাদই একমাত্র ভাবতে পারে। এমনিতেই এসব সিদ্ধান্ত বা আলোচনা সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নেওয়া হয়। তার ওপর,বিশ্বযুদ্ধের সময়, একনায়কদের শাসনে থাকা দেশে সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত বা কাজের দায়িত্ব কোনওভাবেই ঘটনার ৭৫ বছর পর সে দেশের জনগণের ওপর বর্তায় না। তাই কূটনৈতিক বা People-to- people, কোনও স্তরেই এই দেশগুলির সরকার বা দেশের মানুষের সঙ্গে ভারত সরকার ও ভারতীয়দের সম্পর্কের কোনও অবনতি সম্ভব নয়, নেতাজির অন্তিম পরিণতি সম্পর্কে তাদের পূর্বসূরীদের যে ভূমিকাই থাকুক না কেন।



এবার নেতাজির জন্মভূমি ভারতের কথা। ২০১৬-র ২৩ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে দু'শরও বেশি নেতাজি সম্পর্কিত ফাইল ও নথি ডি-ক্লাসিফাই করেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাজ্য আর্কাইভে থাকা ৬৪টি ফাইল ২০১৫-র অগাস্টেই প্রকাশ্যে এনেছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সরকার। তাইহোকু দুর্ঘটনার দু'দশক পরেও নেতাজির পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি এমনকি তাদের চিঠিপত্রেও নজরদারি চালানোর মত কিছু অস্বস্তিকর তথ্য সামনে এলেও নেহরু-গান্ধী পরিবারকে তার থেকে বেশি কোনও ভাবে অভিযুক্ত করতে পারে এমন কোনও ঘটনা বা তথ্য সামনে আসেনি। আজ একথা চ্যালেঞ্জ করেই বলা যায়, তেমন কিছু থাকার সম্ভাবনা নেই। নেতাজির কোনও দুঃখজনক পরিণতি সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ ভারত সরকারের গোপনীয় কোনও ফাইলে থাকলে আর সেই পরিণতিতে নেহরু-গান্ধী পরিবারকে কণামাত্র অভিযুক্ত করার সুযোগ থাকলে নরেন্দ্র মোদী যে সে সুযোগ চার বছর ধরে তার দেরাজে বন্দি করে রাখতেন না, তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: ৪৬-এর দাঙ্গা শুধু লাঠি হাতেই দমন করেছিলেন কলকাতা পুলিসের এই কিংবদন্তি অফিসার


তাহলে, শেষ পর্যন্ত কি বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বয়ান হিসেবে থাকছে?বিকল্প সব তত্ত্বকে একে একে খারিজ করার মত নিশ্চিত প্রমাণ না পেলে সে কথা বলা হঠকারিতা হবে। কিন্তু, এ রহস্যের দরজা খোলার চাবি আছে নেতাজির দেশের , তাঁর জন্মভূমির সরকারের হাতেই, এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। আগের তুলনায়, দু'কদম এগোলেও সেই সরকার এখনও পুরো পথটা হাঁটেনি। হাঁটতে আদৌ চাইছে কি? আসলে রাজনৈতিক ভাবে নেতাজি বর্তমান কেন্দ্র সরকারের শাসক দলের কাছে যতটা লোভনীয় হাতিয়ার, নেতাজির রাজনীতি যে তাদের কাছে ততটা প্রয়োজনীয় নয়। তার প্রমাণ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নতুন নামকরণেই রয়ে গিয়েছে।


আজাদ হিন্দ ফৌজের অধিকারে আসার পর নেতাজি সমগ্র আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ করেছিলেন শহীদ ও স্বরাজ। নরেন্দ্র মোদী তার খণ্ডাংশের দুটি ততোধিক ছোট দ্বীপের নাম করে নেতাজির প্রতি 'প্রকৃত শ্রদ্ধা'র দাবি জানিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি তাঁর পক্ষে সম্ভবও নয়। আন্দামান বললেই মোদী ও তাঁর দলের সাভারকরের কথা মনে পড়ে। বাজপেয়ীর আমলেই সেলুলার জেলটিকে তারা একমাত্র সাভারকরের বলিদান ভূমি বানিয়ে ছেড়েছেন। সেই তারা, নেতাজিকে গোটা আন্দামান আর নিকোবর ছেড়ে দেন কী করে?


আরও পড়ুন- গল্পস্বল্প: সে দিন মিটু থাকলে বায়োস্কোপে প্রথম যৌন হেনস্থার শিকার হয়তো কাননদেবীই


নেতাজির শেষ পরিণতি জানতে ও জানাতে তাই সরকারি ভাবে বিজেপি-র আর উত্সাহ থাকার কথা নয়। যদি না তাতে নেহরু-গান্ধীদের সরাসরি অভিযুক্ত করা যায়। তাই তথাকথিত অন্তর্ধানের ৭৫ বছর পরেও সুভাষচন্দ্র বসুর ঘরে ফেরা হল না। ১৮ অগাস্ট, ১৯৪৫-এ বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ভারতবাসী জানতে পেরেছিল ৭ দিন পর। ২৫ অগাস্ট। দেরির সেই শুরু। আজও নিশ্চিত খবরটি এসে পৌঁছল না। জাপানি নিউজ এজেন্সির সেই খবর সে দিন ভারতবাসীর কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাত। পরের ৭৫ বছর নেতাজির অস্তিত্বের খোঁজে মেঘের পর মেঘ জমেছে। স্মৃতি আর অস্তিত্বের মাঝে তাঁর ত্রিশঙ্কু অবস্থানের অবশ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি। এ দেশের একমাত্র সামরিক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে দেশবাসীর নিঃসংশয়ে 'শহীদ' সম্বোধনেরও উপায় নেই যে !