হিন্দু কারা? কী বলছেন গোলওয়ালকর, নেহরু, বিবেকানন্দ?
উনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজ লেখকরা হিন্দুত্ব বা হিন্দুইজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করতে শুরু করেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, হিন্দুইজম শব্দটি ১৮৩০ সালে প্রথম ব্রিটিশ লেখকরা ব্যবহার করেন
নিজস্ব প্রতিবেদন: দেশে ৪৬-র অচলাবস্থা ফিরিয়ে এনেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। হিন্দু-মুসলিমে দ্বন্দ্বে ফের একবার ভারত ভাগের ভয় দেখাচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা। অথচ RSS প্রধানের দাবি সবাই হিন্দু।
অখন্ড হিন্দুরাষ্ট্র ও সনাতন ধর্ম। RSS-এর পুরনো অবস্থান। সংঘের প্রাণপুরুষ এম এস গোলওয়ালকর লিখেছেন, হিন্দুস্তানে বিদেশি জাতিগুলির অবশ্যই হিন্দু ভাষা ও সংস্কৃতি আপন করে নেওয়া উচিত। নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুধর্ম পালন করা উচিত। হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতির গরিমা ছাড়া অন্য কোনও ভাবধারাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। পৃথক সত্ত্বা ত্যাগ করে তাঁদের হিন্দু জাতির সঙ্গে মিশে যাওয়া উচিত। অথবা কোনও দাবি, কোনও সুবিধা, এমনকি নাগরিক অধিকারটুকুও না চেয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করে তাঁরা এ দেশে থাকতে পারেন। এম এস গোলওয়ালকর তাঁর উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড বইয়ের ১০৫ নম্বর পাতার প্রথম অনুচ্ছেদে একথা লিখেছেন।
তবে হিন্দুত্বের ব্যাখ্যা শুধু সংঘের একচেটিয়া অধিকার নয়। সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই হিন্দু শব্দের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। পণ্ডিত নেহরুর মতে, হিন্দু শব্দটি অষ্টম শতাব্দীর এক তন্ত্রে প্রথম দেখা যায়। একটি জাতিকে ব্যবহার করতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু, ধর্মের বর্ণনায় এই শব্দের ব্যবহার কখনও হয়নি। ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়ার ৭৪ ও ৭৫ পাতার নেহরুর এই বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে।
উনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজ লেখকরা হিন্দুত্ব বা হিন্দুইজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করতে শুরু করেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, হিন্দুইজম শব্দটি ১৮৩০ সালে প্রথম ব্রিটিশ লেখকরা ব্যবহার করেন। খ্রীস্টধর্মের বাইরে ভারতে যে বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ রয়েছেন, তাঁদের বোঝাতেই এই শব্দপ্রয়োগ হয়। ঐতিহাসিকদের একাংশ বলেন সিন্ধু উপত্যকায় বসবাসকারী প্রাচীন ভারতীয়দের মুসলিম আক্রমণকারীরা হিন্দু বলত। কিন্তু, তাদের হিন্দুত্ব ও সনাতন হিন্দুধর্মের সঙ্গে বর্তমানের মিল নেই। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, হিন্দু শব্দটি যথার্থ নয়। শব্দটি হওয়া উচিত বৈদান্তিন। অর্থ যে ব্যক্তি বেদ অনুসরণ করেন।
আরও পড়ুন- মোদীকে বার্তা দিতেই রবীন্দ্রনাথকে 'হাতিয়ার' মোহন ভাগবতের!
সুলতানি ও মুঘল আমলে শাসকরা অ মুসলিম সকল জাতিকেই হিন্দু বলত। আবার ব্রিটিশরা আসার পর হিন্দু বলা হত, অমুসলিম ও অক্রিশ্চিয়ানদের। কিন্তু, নির্দিষ্ট কোন ধর্ম বা মতের অনুসরণকারী হিন্দু হবেন, তা কেউ কখনও নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি। জাতিগতভাবে হিন্দুদের একটা পরিচয় রয়েছে বটে। কিন্তু, ধর্মীয় পরিচয় স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট করে বলা নেই বলেই বোধহয় সকলে নিজের মতো ব্যাখ্যা করেন। এবং একের পর এক বিতর্কের জন্ম হয়।