নববধূর `কুমারিত্বের` পরীক্ষা নিল পঞ্চায়েত, `ফেল` করায় লাঞ্ছিতা তরুণী!
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম রাতে নবদম্পতিকে সাদা চাদর দিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই সাদা চাদরে `রক্তের দাগ` না লাগায়, স্বামীর দাবি, তার স্ত্রী `কুমারী` নয়। আর এই `পরীক্ষার` নিয়ামক সংস্থা অর্থাৎ, গ্রাম পঞ্চায়েত নিদান দিয়েছে যে এই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হোক।
ওয়েব ডেস্ক: বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম রাতে নবদম্পতিকে সাদা চাদর দিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই সাদা চাদরে 'রক্তের দাগ' না লাগায়, স্বামীর দাবি, তার স্ত্রী 'কুমারী' নয়। আর এই 'পরীক্ষার' নিয়ামক সংস্থা অর্থাৎ, গ্রাম পঞ্চায়েত নিদান দিয়েছে যে এই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হোক।
গত ২২শে মে এই ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। মহারাষ্ট্রেরই আহমেদনগর জেলার বছর কুড়ির ওই যুবতীর সঙ্গে বিয়ে হয় নাসিকের এই যুবকের। জানা গেছে এই যুবকের এর আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের 'কনজারবাট' সম্প্রদায়ভূক্ত এই জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নাকি পঞ্চায়েতই দণ্ডমুন্ডের কর্তা।
স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফ থেকে জানা গেছে যে নববধূর 'কুমারিত্ব' পরীক্ষা করাই নাকি ওই পঞ্চায়েতর নিয়ম। প্রথম রাতে সাদা চাদর দেওয়ার পাশাপাশি পরের দিন সকালে দল বেঁধে নবদম্পতির ঘরের বাইরে তারা অপেক্ষা করেন 'পরীক্ষার' ফল জানার জন্য।
ওই নববধূ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক কর্মী কৃষ্ণা চন্দগুডেকে জানিয়েছেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং পঞ্চায়েতের কর্তাদের জানিয়েছেন যে পুলিশে চাকরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য নানা রকম শরীরিক কসরত করতে হয় তাঁকে, তাই হয়ত মিলনের সময় তাঁর রক্তপাত হয়নি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পপঞ্চায়েত সেসব কথা শুনতে চায়নি। বরং তাঁর গয়না কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
নির্যাতিতা যুবতী আরও জানিয়েছেন যে, পঞ্চায়েতের কর্তারা আর একটি প্রস্তাব দেয় তাঁকে, বলা হয় যে তাঁকে এক টুকরো কাপড় দেওয়া হবে যা দিয়ে তিনি হয় উর্দ্ধাঙ্গ নাহয় নিম্নাঙ্গ ঢাকতে পারবেন আর তাঁকে ওই অবস্থায় ছুটতে হবে এবং পঞ্চায়েতের পুরুষ সদস্যরা তাঁকে তাড়া করবে ও তাঁর শরীরের অনাবৃত অংশের দিকে ধেয়ে আসবে গরম ময়দার গোলা। নির্যাতিতা শোনামাত্র এই প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
এরপর ওই যুবতী তাঁর মায়ের সঙ্গে থানায় আভিযোগ জানাতে যেতে চাইলে, তাঁর বাবা বাধা দেন একঘরে হয়ে যাবার ভয়ে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে যে লিখিত অভিযোগ না পেলে তারা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে না।
দেশ জুড়ে খাপপঞ্চায়েতের মধ্যযুগীয় তুঘলকি শাসন নিয়ে প্রয়শই অভিযোগ আসে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কিন্তু এই ২০১৬ সালে এসেও এইসব আভিযোগ আসে এবং তার বিচার কখনও হয় বা কখনও হয় না এটাই সভ্যতার দুর্ভাগ্য। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে পঞ্চায়েতের এই ধরণের খবরদারি রোখার জন্য আইন প্রণীত হয়, কিন্তু তা এখনও রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় আটকে রয়েছে।