G20 Summit: জি২০-র ঘোষণাপত্রে নতুন অধ্যায়! বাকি সদস্যদেশ কী ভাবে নেবে ইউক্রেন-প্রসঙ্গ?
G20 Summit: বিশ্ব জুড়ে একটা বিশ্বাস রটে গিয়েছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি কেউ থামাতে পারেন, তবে তাঁর নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেওছিলেন, এটা যুদ্ধের কাল নয়, `দিস ইজ নট অ্যান এরা অফ ওয়ার`! জি২০-তে এই নিয়ে কথা তুলে কোন অবস্থানে ভারত?
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিশ্বে একটা বিশ্বাস রটে গিয়েছিল মাসকয়েক আগে যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি কেউ থামাতে পারেন, তবে তাঁর নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, এই যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই মেরুবিভাজিত বিশ্বে রাশিয়া বা ইউক্রেন কাউকেই একপাক্ষিক ভাবে সমর্থন জোগায়নি ভারত। বরং নিজে এক নিরপেক্ষ অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে দুটি দেশের সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রেখে সে এগিয়েছে। দুটি দেশকেই যুদ্ধ বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে। ভারতের সেই অববস্থানেরই আর একটা মুখ দেখা গেল আজ, শনিবার, জি২০ বৈঠকের মঞ্চে।
আরও পড়ুন: G20 Summit| Modi-Biden Meet: মোদী-বাইডেন হাইভোল্টেজ বৈঠকে হঠাৎই উঠল কলকাতা-প্রসঙ্গ! কেন?
আমেরিকা এবং পশ্চিমি দুনিয়ার ধারাবাহিক চাপ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রসংঘ-সহ কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব সমর্থন করেনি ভারত। মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগও ছিন্ন করেনি। আবার ইউক্রেনকেও দূরে ঠেলে দেয়নি। আগাগোড়াই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে সে।
তবে জি২০-ভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা সমবেত হয়েছেন নিউ দিল্লিতে, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই রাশিয়া বা ইউক্রেন কোনও একটি দেশকেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন করেছেন, অন্য দেশকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু জি২০-র হোস্ট ভারতের তরফে শনিবার সকালে মূল বৈঠকের আগেই খসড়া যৌথ ঘোষণাপত্রে ইউক্রেন সংকট সংক্রান্ত একটি অংশ যুক্ত করা হয়। জি২০-র শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রনেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেন। তবে এ ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে স্পষ্টতই মতের অমিল রয়েছে চিনের। ফলে শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নে ঐকমত্য আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
বস্তুত, কূটনৈতিক বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে ভারত যেভাবে কথা বলতে পারে বা যেমন আচরণ করতে পারে, যুদ্ধের প্রশ্নে মেরুবিভাজিত দেশগুলি অত সহজে অত স্পষ্ট ভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারবে না, বা সেটা করা তাদের পক্ষে কঠিন হবে, বা তারা তাদের নিজস্ব বাধ্যবাধকতার সেটা করতেও চায় না। কিন্তু, জি২০ ঘোষণাপত্রে এটা থাকা মানে, সেটায় ঐকমত্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা এদিক থেকেও তৈরি হবে। এবং ঐকমত্য না এলে জি২০-র সাফল্য নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে যাবে। এই প্রেক্ষিতে ভারত আসলে বাকি দেশগুলিকে একটা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে পরীক্ষার ফলাফল সরাসরি প্রভাব ফেলবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন এটা যুদ্ধের কাল নয়, 'দিস ইজ নট অ্যান এরা অফ ওয়ার'! তখনই মোদী তথা ভারতের এই পরামর্শ নিয়ে বহির্বিশ্বে আলোচনা হয়েছিল। সকলে প্রশংসাই করেছিল ভারতের এই অবস্থানের।
তবে এখানে একটা ছোট্ট 'কিন্তু' আছে। জি২০ যে ভূরাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের কোনও মঞ্চ নয়, এটা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে ভাষার সামান্য মারপ্যাঁচেই। জি২০ ডিক্লারেশনে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে 'ওয়ার আগেইনস্ট ইউক্রেন'-এর বদলে লেখা হচ্ছে 'ওয়ার ইন ইউক্রেন' শব্দবন্ধ। দৃষ্টিভঙ্গির বদল বা কড়া অবস্থান থেকে সরে আসার এই প্রক্রিয়া আসলে পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে, জি২০-র লক্ষ্য ভিন্ন। এই মঞ্চ কোনও দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ, লড়াই সংঘর্ষ নিয়ে বা কোনও বিশেষ দেশের সুরক্ষার পক্ষে সরাসরি কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করবে না বা তা আলোচনা করবে না। জি২০ একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েই আলোচনা উপজীব্য।