জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তানের মাটি ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন রিনা ভার্মা। তারপর কুড়ি-কুড়ি বছর নয়, কেটে গিয়েছে একেবারে ৭৫টি বছর। ১৯৪৭ সালে রিনা ছিলেন ১৫ বছরের কিশোরী, আর আজ, এই ২০২২ সালে তিনি ৯০-এর বৃদ্ধা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কিন্তু স্মৃতি তো সততই সুখের নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতি বড় বেদনার। আর সেই বেদনাই এই ৭৫টি বছর ধরে মর্মে মর্মে অনুভব করেছেন রিনা। হাতড়ে বেড়িয়েছেন জন্মভিটের স্মৃতি। চেয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে অন্তত একবারের জন্য হলেও যেন জন্মভিটে ঘুরে আসতে পারেন। ২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে এই তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছিলেন রিনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া তাঁর সেই সাক্ষাৎকার, তাঁর আর্তি তখন অনেক মানুষকে আপ্লুত করেছিল।


অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হল। তিনি পাকিস্তানে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত তাঁর সেই আদি ভিটেয় পৌঁছতে পেরেছেন। জন্মভূমির মাটিতে ভিটে দেখার পর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। দেশভাগের সময়ে অসংখ্য মানুষ জন্মভিটে ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশভাগের কয়েক সপ্তাহ আগেই অবশ্য রাওয়ালপিন্ডি ছেড়েছিল রিনার পরিবার।


একটি ফেসবুক গ্রুপের কর্মীরা রাওয়ালপিন্ডিতে রিনার আদি বাড়ি খুঁজতে শুরু করেন। অবশেষে সন্ধান মেলে। ১৬ জুলাই পুণে থেকে পাকিস্তানে পৌঁছন রিনা। ২০ জুলাই রাওয়ালপিন্ডিতে নিজের আদি নিবাসে যান। রিনা সেখানে গেলে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। জন্মমাটি ছুঁতে পেরে রিনাও উচ্ছ্বসিত, কিন্তু তাঁর কষ্টও হচ্ছিল। কেননা, এ আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মতো তাঁর পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই!


রিনার এই জার্নি মোটেই সহজ ছিল না। তাঁর বয়স একটা প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তা ছাড়াও নানা ঘটনা ঘটেছিল। যেমন করোনা অতিমারী। এ কারণে ভ্রমণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ায় তিনি পাকিস্তানে যেতে পারেননি। অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরে যদিও-বা তিনি ভিসার আবেদন করলেন, পড়লেন সংকটে। চলতি বছরের মার্চে ভিসার আবেদন করেন রিনা। কিন্তু কোনো কারণ উল্লেখ না করেই তাঁর আবেদন বাতিল করা হয়। আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তাঁর মন ভেঙে পড়ে। তবু তিনি আবার ভিসার আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে দ্বিতীয় বার আবেদন করার আগেই তাঁর জীবনের এই স্বপ্নটির কথা কোনও ভাবে পাকিস্তানের এক মন্ত্রীর নজরে এসেছিল। তাঁরই হস্তক্ষেপে এ বার রিনার ভিসা-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হল। কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের ভিসা পেয়ে গেলেন তিনি। ভিসা পাওয়ার পরেও সমস্যা তাঁকে ছেড়ে যায় না। পাকিস্তানে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়ে যায়। সম্প্রতি তিনি সন্তানও হারান। সব মিলিয়ে তাঁকে আবার অপেক্ষা করতে হয়। এতদিন পরে এত কাঠখড় পুড়িয়ে একেবারে মুখের কাছে এসে এ ভাবে অপেক্ষা করা তাঁর পক্ষে দুঃসহ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তিনি অপেক্ষারই সিদ্ধান্ত নেন।


সেই দীর্ঘ অপেক্ষারই অবসান হল এই ২০ জুলাই। ৭৫ বছর ধরে দেখতে থাকা স্বপ্ন সত্যি হল রিনার। 
    
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 


আরও পড়ুন: Bhaderwahi: গানে গানে কাশ্মীরের মৃতপ্রায় ভাষাকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন ভিকি