সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে বিধানসভা ভোটে লড়েছেন। ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া তিনিই প্রথম মহিলা। বারবার নিজের নানা ব্যতিক্রমী কাজকর্মের মাধ্যমে তৎকালীন চলতি সামাজিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সার্বিক ভাবেই বিচিত্র জীবন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের। 


নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেছেন। হস্তশিল্পের পুনরুজ্জীবন নিয়ে কাজ করেছেন। অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রধানতম পরিচয় হয়ে থেকে গিয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ। তবে উত্তরকাল তা ভুলতেও বিশেষ সময় নেয়নি। আজ সামগ্রিক ভাবেই কমলাদেবী এক অস্পষ্ট নাম ও বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব।


আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar: টুইটে ক্ষুদিরামকে শ্রদ্ধা রাজ্যপালের


নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও। পাশাপাশি, ভারতীয় পণ্য নিয়ে ব্রিটিশ-ভারতে আন্দোলন এবং থিয়েটার নিয়ে স্বাধীন ভারতে তাঁর আন্দোলন ভোলার নয়। আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতে মহিলাদের মানোন্নয়নেও তিনি বহু কাজ করেছেন। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে দেরি করেননি।


এ হেন কমলাদেবীর জন্ম ম্যাঙ্গালোরে ১৯০৩ সালের ৩ এপ্রিল। বাবা আন্নানথায়া ধারেশ্বর, মায়ের নাম গিরিজাবা। কমলাদেবী ভাল ছাত্রীও ছিলেন। ছোট থেকেই ছিলেন দৃঢ়চেতা। তাঁর বাবা-মা'র মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রামাবাই রানাডে এবং অ্যানি বেসন্তের মতো বিশিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যা কমলাদেবীকে ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উৎসাহী করে তুলেছিল।


১৯১৭ সালে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় কমলাদেবীর। কিন্তু বিয়ের দু'বছর পরেই বিধবা হন। তার পরে চেন্নাইয়ে রানি মেরি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে সুহাসিনী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কমলার পরিচয় হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী সুহাসিনী ছিলেন সরোজিনী নাইডুর ছোট বোন। এই সুহাসিনীই তাঁর ভাই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কমলাদেবীর পরিচয় করিয়ে দেন। হারীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি-নাট্যকার-অভিনেতা। ২০ বছরের কমলাদেবীর বিয়ে হয় হারীন্দ্রনাথের সঙ্গে। প্রসঙ্গত, এই হারীন্দ্রনাথই সত্যজিৎ রায়ের 'সোনার কেল্লা'য় সিধু জ্যাঠার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।  


তখন কমলাদেবী লন্ডনে। সময়টা ১৯২৩ সাল। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারলেন। এবং অবিলম্বে দেশের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত গান্ধী সংগঠন সেবাদলে যোগদানের মানসে ভারতে ফিরলেন। এই দলের মাধ্যমেই তিনি নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে একত্রিত করেন। শুরু হল তাঁর 'দেশের কাজ'।


১৯২৬ সালে কমলাদেবী মাদ্রাজের প্রাদেশিক বিধানসভায় অংশ নেওয়ার কথা ভাবেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি 'অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্সে'র প্রতিষ্ঠাতা মার্গারেট ই ক্যাসিন্সের সঙ্গে দেখা করেন। ঠিক হয়, ভোটে লড়বেন কমলা। যদিও খুব বেশি দিন প্রচার করতে পারেননি তিনি। এবং ৫৫টি ভোটের পার্থক্যে হেরেও গিয়েছিলেন। তবুও তিনি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কেননা, তিনিই ছিলেন বিধানসভা ভোটে লড়তে নামা প্রথম কোনও ভারতীয় মহিলা। পরবর্তী কালে কমলাদেবী এই 'অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্সে'র কাজকর্মের সঙ্গেও বিপুল ভাবে জড়িয়ে পড়েন।


সব মিলিয়ে দেশগঠনের লক্ষ্যে, নারীর উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা জীবন ধরে বিচিত্র কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলেন কমলাদেবী। ১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রয়াত হন। কিন্তু ক্রমশ বিস্মৃতির অতলে চলে গিয়েছে তাঁর নাম। স্বাধীনতা-৭৫-এর আবহে তাঁর মতো এক নারীকে স্মরণ হোক আমাদের অন্যতম আশু কর্তব্য।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Tagore Death Anniversary: 'সমুখ দিয়ে স্বপনসম/যেয়ো না মোরে হেলায় ঠেলে'