সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে মহাবীরের (mahavir) কিছু কিছু কথা পড়লে-শুনলে আশ্চর্য লাগা স্বাভাবিক;  মনে হবে যেন, তিনি আজকের ভারতীয় সমাজের দিকে তাকিয়ে কথাগুলি বলেছেন; মনে হবে যেন, তিনি আজকের রাজনীতির দিকে তাকিয়ে কথাগুলি বলেছেন। যেন বাংলার যুযুধান রাজনীতির (politics) কথা ভেবেই তিনি এই শব্দগুলি সেই ধূসর অতীতে উচ্চারণ করেছেন। 


যেমন, তাঁর 'মহাব্রত' উপদেশের একটা জায়গায় তিনি বলছে-- রেগে গিয়ে বা ভয় পেয়ে, নিজের বা অপরের জন্য়ও কখনও কাউকে মিথ্যা এবং ক্ষতিকর কোনও কথা বলা বা সেসব বলে (পরোক্ষে) কাউকে উত্তেজিত করা উচিত নয়! এটা পড়লেই বাংলার চলতি বিধানসভা নির্বাচনের (wb assembly election) আবহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পারস্পরিক কথাবার্তা বা তাঁদের নিজেদের সমর্থকদের প্রতি উচ্চারিত ফাঁকা অসার শূন্য স্তোকবাক্যের ফুলঝুরির কথা মনে না পড়ে পারে না!


আরও পড়ুন: নিজের Cross পিঠে নিয়ে অমৃতের দিকে হেঁটে গেলেন এক দেবতার ছেলে


ঠিক এইরকম জায়গায়গুলিতে এসেই এই সব প্রাচীন মন, বলা ভাল 'গ্রেট অল্ড মাইন্ড'গুলি আমাদের কাছে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আমরা তখন ভাবতে বসি, কে এই মহাবীর? 


একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিয়ে রাখাই যায়। মহাবীর ছিলেন ২৪ তম তীর্থঙ্কর। বৈশালীর কুণ্ডগ্রামে জন্ম, এখনকার বিহারের (bihar) পাটনার সন্নিহিত। প্রায় ৩০০০ বছর আগে, যিশুজন্মের (jesus) ৬০০ বছরেরও আগে তাঁর জন্ম। কথিত আছে, মহাবীর জন্মের আগে তাঁর মা ত্রিশলা ১৪টি পবিত্র স্বপ্ন দেখেছিলেন। ইতিহাসের কালপর্বের দিক থেকে মহাবীর গৌতম বুদ্ধের (goutama buddha) সমসাময়িক, তবে বুদ্ধের চেয়ে একটু 'সিনিয়র'। মহাবীরের জন্মের পরে তাঁর বাবা-মায়ের জীবনে বিশেষ সমৃদ্ধি এসেছিল বলে তাঁরা ছো়টবেলায় তাঁর নাম রেখেছিলেন 'বর্ধমান'। ছোটবেলা থেকেই বর্ধমান হয়তো অজান্তেই নানা ভাবে তাঁর বিশেষত্বের ছাপ রাখছিলেন। যেমন, একদিন বাচ্চারা সকলে খেলছিল। এমন সময়ে সেখানে একটা বিষধর সাপ চলে এল। বর্ধমানের বন্ধুরা ভয় পেয়ে দৌড়ল। কিন্তু বর্ধমান গেল না, শুধু তা-ই নয়, সে সাপটিকে ধরে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল! 


এটা যেন একটা প্রতীক। এতে যেন বোঝা গেল, এই বালকটি ভবিষ্যতে সমস্ত ভয়-বাধা-বিঘ্নকে জয় করে, সেগুলিকে পরিত্যাগ করে দূরে ছুঁড়ে ফেলে এগিয়ে যাবে। 


এগিয়ে তো অবশ্যই গিয়েছিলেন তিনি। সংসার ত্যাগ করেন ৩০ বছর বয়সে। তবে তার আগে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন যশোদা। এক সন্তানও ছিল তাঁদের। কিন্তু সব ত্যাগ করে তিনি শ্রমণ হয়ে গেলেন। মহাবীর এক যুগ কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তার পরে জ্ঞানলাভ করেছিলেন। এক মহাপণ্ডিত ইন্দ্রভূতি গৌতম প্রথম তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অত বছর আগে মহবীর মেয়েদের তাঁর ধর্মীয় অনুশাসনে জায়গা করে দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্ঘে এমনকী মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থাও ছিল! আজকে দাঁড়িয়ে এ তথ্য আমাদের খুবই আশ্চর্য করে এই জন্য যে,  তখনও কী আধুনিক ছিল মহাবীরের মন! বিহারের পাওয়াপুরীতে ৭২ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান।


কিন্তু মৃত্যুর আগে ৩০ বছর ধরে তিনি অক্লান্ত প্রচার করেছেন। নির্বাণই (nirvana) তাঁর অন্তিম উপজীব্য। তবে তার আগে তিনি কতগুলি ধাপের কথা বলেন; যেমন, সত্য, অস্তেয় (চুরি না করা), ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ (অনাসক্তি)। তিনি কর্মত্যাগের কথা বলেছেন, তারও আগে বলেছেন আসক্তি ত্যাগের কথা। এ বিষয়ে মহাবীর দারুণ আলোকপাত করেছেন; তিনি বলেন, কোনও জিনিস কাছে রাখলেই যে তার আসক্তিতে বুঁদ হয়ে রইল মানুষ তা নয়, বরং যা কাছে নেই তার প্রতি টান অনুভব করাটাই আসক্তি। সেটাকে দূর করতে হবে। 


মহাবীর অবশ্য অহিংসাকেই (non-violence) সব কিছুর উপর ঠাঁই দিয়েছিলেন। অন্যের যে কোনও ধরনের ক্ষতি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার কথা বলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি 'নির্গ্রন্থে'র কথা উল্লেখ করেছিলেন। তুমি যেমন অন্য কারও থেকে ব্যথা পেতে চাও না, তেমনই অন্যেরাও তোমার থেকে ব্যথা পেতে চায় না!


বলেছিলেন আরও এক আশ্চর্য কথা। বাইরের শত্রুর সঙ্গে লড়ে কী করবে? বরং নিজের আত্মর (self) সঙ্গে লড়ো, লড়ে  তাকে জয় করো! তার পর জ্ঞানলাভ-মুক্তি-নির্বাণের পথ! যদি মানতে পারতাম! 


আরও পড়ুন: আস্তাবলের খড়ের গন্ধে জন্ম নিচ্ছেন এক জ্যোতির্ময় শিশু