‘আমার নেতা, আমি কি তোমাকে শেষবার বাবা বলে ডাকতে পারি’?
“আমার নেতা, আপনি শেষবার আমাদের প্রিয় ভ্রাতা বলে সম্বোধন করুন, যা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত আমাদের লড়াইয়ের ময়দানে রাখবে। আমরা আবারও দৌড়াব আমাদের ভাষার জন্য”...
নিজস্ব প্রতিবেদন: সদ্য প্রয়াত পিতার বয়স ৯৩। পুত্র দাঁড়িয়ে ৬৫-তে। সাড়ে ছয় দশক সময়ে কখনই বাবা-কে বাবা বলে ডাকা হয়নি। তাই স্বর্গবাসী পিতার কাছে চিঠি লিখে পুত্র অন্তিম আর্তি জানালেন, “তুমি ছিলে আমার নেতা। আমি কি শেষবার তোমাকে বাবা বলে ডাকতে পারি”? যিনি এই চিঠি লিখলেন, তিনি আর কেও নন, মুথুবেল করুণানিধি স্ট্যালিন। আর যার উদ্দেশে এই চিঠি লেখা হল, তিনি সদ্য প্রয়াত দ্রাবিড়ীয় নেতা মুথুবেল করুণানিধি।
অন্তিম শয্যায় শায়িত পিতা-কে শেষ চিঠি-তে পুত্র লিখলেন, “যাওয়ার সময় তো সবসময়ই আমাকে বলে যেতে, এবার কেন বলে গেলে না”। একই সঙ্গে অশ্রুস্নাত চিঠিতে ডিএমকে সভাপতি স্ট্যালিন তাঁর ‘নেতা’র কাছে আবেদন করলেন, “আমার নেতা, আপনি শেষবার আমাদের প্রিয় ভ্রাতা বলে সম্বোধন করুন, যা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত আমাদের লড়াইয়ের ময়দানে রাখবে। আমরা আবারও দৌড়াব আমাদের ভাষার জন্য”। ওই চিঠিতেই ‘থালাইভা’-র শেষ ঘণ্টাগুলো যেন নির্বিঘ্নে অতিবাহিত হয়, সেজন্য দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী-সহ সমর্থকদের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, স্ট্যালিন হলেন তামিলনাড়ুর ৫ বারের মুখ্যমন্ত্রী মুথুবেল করুণানিধির তৃতীয় সন্তান। তাঁর মা দয়ালু আম্মাল ডিএমকে প্রধান করুণানিধির দ্বিতীয় স্ত্রী।
চিরনিদ্রায় কালাইনার: সমর্থকদের আর্তি, "ওঠো, চলো, গোপালাপুরম চলো..."
১৯৫৩ সালের পয়লা মার্চ মাদ্রাস (আজকের চেন্নাই) শহরে জন্মগ্রহন করেন এমকে স্ট্যালিন। রাশিয়ার অবিসংবাদিত কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ স্ট্যালিন-কে অনুসরণ করেই দয়ালু আম্মালের গর্ভজাত দ্বিতীয় সন্তানের নাম স্ট্যালিন রাখেন করুণানিধি।
বাল্য বয়স থেকেই বাবার পথের অনুগামী হতে খাকেন স্ট্যালিন। রাজনীতির ময়দানে তাঁকে প্রথম দেখা যায়, যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪। ১৯৬৭ সালের তামিলনাড়ু নির্বাচনে প্রচার করেছিলেন বালক স্ট্যালিন। এর ঠিক ছয় বছর পরই ডিএমকে-র জেনারেল কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জরুরী অবস্থা চলাকালীন কারাবন্দিও হয়েছিলেন ‘থালাইভা’ পুত্র।
১৯৮৯-এ ডিএমকে বিধায়ক হিসাবে তামিলনাড়ুর বিধানসভায় প্রথমবার পা রাখেন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার মেয়র পদেও নির্বাচিত হন স্ট্যালিন। পরের বার ২০০১-এ তামিল জনতা মেয়র পদে তাঁকেই আবার পুনর্নিবাচিত করে। এরপর করুণানিধি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালের শুরুতে ডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছেন করুণা পুত্র। আর এই সবই হয়েছে, ‘কালাইনার’-এর হাত ধরেই। তাঁর বাবা তাঁর পাশে না থাকলে, পথ না দেখালে এই উচ্চতায় আসতে পারতে না স্ট্যালিন, একথা সর্বজনবিদিত। দক্ষিণ্যের রাজনীতি যে স্রোতে বইছে তাতে অনেকেই মনে করছে, এবার তামিল মসনদে বসবেন স্ট্যালিন-ই। এমন পরিস্থিতি-তে মার্গদর্শকের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না করুণাপুত্র স্ট্যালিন।