মুসলিমদের নিয়ে গোলওয়ালকরের বিতর্কিত বক্তব্য বাদ দিল আরএসএস
নিজের ভাষণে দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকরের নাম একবারও মুখে আনলেন না মোহন ভাগবত।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে কি সত্যিই বদলে যাচ্ছে আরএসএস? নয়াদিল্লিতে 'আরএসএস-এর দৃষ্টিতে ভবিষ্যত্ ভারত' শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভাগবতের মুখে একবারও শোনা গেল না দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর নাম। এমনকি প্রশ্নোত্তরপর্বে মোহন ভাগবত জানিয়ে দিলেন, গোলওয়ালকরের অনেক কথাই বর্তমান সময়ের সঙ্গে মেলে না। তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর। সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিই। স্বয়ংসেবকদের কাছে 'গুরুজি' নামে খ্যাত গোলওয়ালকর। নয়াদিল্লির সম্মেলনে সেই 'গুরুজি'র কথা একবারও মুখেই আনলেন মোহন ভাগবত। গোলওয়ালকরের কট্টরপন্থী ভাবনাচিন্তার সঙ্গে কি তবে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করল আরএসএস? উঠছে প্রশ্ন। এমনকি 'গোলওয়ালকরের ভাবনা'র নয়া সংস্করণ থেকে বিতর্কিত অংশ বাদও দিয়েছে আরএসএস। মুসলিম, বামপন্থী ও খৃষ্ট্রানদের দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু বলে অভিহিত করেছিলেন দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক। কিন্তু গোলওয়ালকরের 'Bunch of thought'-এর নতুন সংস্করণে বাদ গিয়েছে এই বক্তব্য। এনিয়ে মোহন ভাগবতের ব্যাখ্যা, পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে অনেক কথা বলা হয়। কোনও প্রসঙ্গে একটি বক্তব্য শাশ্বত নয়। শ্রী গুরুজির শ্বাশত মতই নতুন সংস্করণে রেখেছি। সেখানে তাত্ক্ষণিক প্রসঙ্গের উপরে বক্তব্যগুলি মুছে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত বিচারধারাই রয়েছে নতুন সংস্করণে। স্বাধীনতার পর দেশভাগের প্রেক্ষাপটে 'অভ্যন্তরীণ' শত্রু মন্তব্যটি গোলওয়ালকর করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সঙ্ঘ মতার্দশের অধ্যাপক রাকেশ সিনহা। তাঁর কথায়, দেশভাগের পরই অন্ধ্রপ্রদেশে বাম হিংসা শুরু হয়।
এর আগে ভিনজাতে বিবাহ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে গোলওয়ালকরের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন ভাগবত। কিন্তু নয়াদিল্লির দুদিনের সম্মেলনে ১০২ বার ৩২ জন ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করেছেন সরসঙ্ঘচালক। সবচেয়ে বেশি ৪৫ বার আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের কথা বলেছেন ভাগবত। এছাড়া মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বীর সাভারকর, এমএন রায়, মোতিলাল নেহরু, জওহরলাল নেহরু, বুদ্ধ, জরাথ্রুষ্ট, রামকৃষ্ণ পরমহংস, দয়ানন্দ সরস্বতী, বিবেকানন্দ, গুরু নানক ও শিবাজির কথাও উল্লেখ করেছেন সরসঙ্ঘচালক। তবে আশ্চর্যজনকভাবে একবারও হেডগেওয়ারের নাম নেননি ভাগবত।
সঙ্ঘের ব্যাপ্তির পিছনে গোলওয়ালকরের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। ১৯৪০ সালে সঙ্ঘের দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৭৩ পর্যন্ত পদে ছিলেন গোলওয়ালকর। মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেন তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল। পরে পটেলের সঙ্গে আলোচনার করে নিষেধাজ্ঞা তোলেন গোলওয়ালকর। নিষেধাজ্ঞার পর গোলওয়ালকরের নেতৃত্বে সমাজের সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে সঙ্ঘ। এমনকি ভারতীয় জন সঙ্ঘ (পরে বিজেপি), ছাত্র সংগঠন (এবিভিপি), শ্রমিক সংগঠন (বিএমএস) ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-র মতো সংগঠনের সূচনা হয় তাঁর আমলে।
আরও পড়ুন- মুসলিমদের সঙ্গে নিয়ে চলাই আসল হিন্দুত্ব, বললেন মোহন ভাগবত