নির্ণয় ভট্টাচার্য্য


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মুহূর্তে সমীকরণ বদলে যাওয়াটাই যেন বিহার রাজনীতির আদত সমীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করে বিরোধী মোর্চার কাছে 'বিশ্বাস ঘাতক' হয়ে যাওয়া এবং লালুর কথায় 'ঐতিহাসিক ভুল' করা নীতিশ এবার জানিয়ে দিলেন, আগামী ২৭শে অগস্ট লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ডাকা 'বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও' কর্মসূচীতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি যোগ দিতে ইচ্ছুক।  


মুখে 'সুসম্পর্কে'র কথা বললেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গেরুয়া প্রার্থী কোবিন্দকে সমর্থনের মধ্য দিয়ে নীতিশের জেডিইউ-এর 'ক্রমবর্ধমান বিজেপি প্রীতি' রাজনৈতিক মহলের জল্পনা বাড়াচ্ছিল। আর সেই জল্পনায় ঘৃতাহুতি দিয়ে জেডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক শ্যাম রজক গত শনিবার জানিয়ে দেন যে তাঁরা আরজেডির মিছিলে (পড়ুন, 'বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও') যোগ দেবেন না। কিন্তু দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিজমুখে বার্তা দেন যে, বিজেপি বিরোধিতাতে তিনি অনড় রয়েছেন। এমনকি তিনি মনেও করেন না যে, বিজেপি দেশের সমস্যার কোনও সমাধান করতে পারবে বলে। ফলে, আরজেডির ডাকা বিজেপি বিরোধী কর্মসূচীতে আমন্ত্রিত হলে তিনি নিশ্চিত ভাবেই যোগ দেবেন।


তবে এদিনের বৈঠকে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া ধেয়ে আসে জেডিইউ প্রধানের কাছ থেকে। তিনি বলেন, বর্তমানে কংগ্রেস গান্ধীজির পথ থেকে সরে এসেছে, এমনকি নেহেরুর ভাবধারা থেকেও তার বিচ্যুতি সুস্পষ্ট। নীতিশের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে বিজেপিকে জব্দ করতে জেডিইউ-কে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর বিরোধী জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন কংগ্রেসের কাছে, কিন্তু কংগ্রেস তা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার মূল্যও চোকাতে হয়েছে লজ্জাজনক পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে। মনে করা হচ্ছে, নিজের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যে তোপ তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছিল এদিন তারই 'প্রতিদান' দিলেন এই দক্ষ রাজনীতিক।


কিন্তু, লালুর প্রতি হঠাত্ এমন 'বন্ধুত্বের বার্তা' কেন?


লালুপ্রসাদ ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিক দিক থেকে দুর্নীতিতে জড়ালেও এই মুহূর্তে বিহার বিধানসভায় বেশি সংখ্যক বিধায়কের হাতেই লণ্ঠন, তাই নীতিশের দিক থেকে লালুর প্রতি এই বার্তা 'প্রত্যশিত' বলে মনে করছেন অনেকেই। এদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নীতিশের ভোল বদলে যতই জল ঘোলা হোক, দিল্লির বিরোধী বৈঠক থেকে বেরিয়েই বিহার শরিফের যাদব কুলপতি জানিয়ে দেয়েছিলেন যে, তাঁর দল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকার থেকে সমর্থন তুলবে না। এমতাবস্থায়, কম সংখ্যক বিধায়ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা নীতিশের পক্ষে এই বার্তা দেওয়া ছাড়া অন্য উপায়ও নেই। অন্যদিকে, নীতিশ যদি লালুর হাত ছেড়ে আবারও বিজেপির হাত ধরতে চান, সেক্ষেত্রে 'বিজেপির হাতের পুতুল' হয়ে যাওয়ার সম্ভবনার পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয় আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে 'গুজরাট দাঙ্গায় অশুচি' মোদীর নাম এনডিএ চূড়ান্ত করতেই জোট ছিন্ন করে বেড়িয়ে এসেছিলেন নীতিশ। এখন শুধু সেই 'সমস্যা' প্রাসঙ্গিক রয়েছে তাই নয়, বরং 'গোরক্ষক', 'গোমাংস' ইস্যুতে তা বেড়েছে বহুগুণ। সব মিলিয়ে, লালুর প্রতি নীতিশের এই বার্তা আপাতত রাজনৈতিক ভাবে অনিবার্যই ছিল। (আরও পড়ুন- ভোল পাল্টে কোবিন্দের সমর্থনে নীতিশও, বিজেপির দলিত তিরে বিদ্ধ জাতীয় রাজনীতি)