নিজস্ব প্রতিবেদন: উন্নয়ন, উন্নয়ন ও উন্নয়ন। জম্মু-কাশ্মীরে আগামী দিনে স্বপ্নের ফেরি করলেন নরেন্দ্র মোদী। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, অনুচ্ছেদ ৩৭০ উঠে যাওয়ায় লাভবান হবেন কাশ্মীরি যুবক-যুবতীরা। মুফতি ও আবদুল্লাদের নাম নিয়ে মোদী বলেন,'কয়েক দশকের পারিবারিক রাজনীতি বঞ্চিত করেছে কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের।'


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?


জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কোনও জিনিস চলতে থাকলে সেটাকে চিরকালীন ধরে নেওয়া হয়। তেমনটাই ছিল অনুচ্ছেদ ৩৭০। 



বাবা সাহেব আম্বেদকর, সর্দার পটেল ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অটল জি-র মতো কোটি কোটি দেশভক্তের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।



একটা পরিবার হিসেবে দেশের স্বার্থে একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়েছেন জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখের ভাই-বোনেরা। তাঁদের উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই ব্যবস্থাকেই তুলে দেওয়া হয়েছে।



জম্মু-কাশ্মীরের সেই গতিতে উন্নয়ন হয়নি। নতুন সিদ্ধান্ত বর্তমানকে শুধরে দেবে। সুরক্ষিত হবে ভবিষ্যত্।


সংসদে আইন তৈরি হয় দেশের ভালোর জন্য। সব সরকারই করে। এটা নিরন্তন চলতে থাকে। সংসদে অনেক আলোচনা হতে থাকে। বাইরেও চর্চা হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যে আইন হয়, তা গোটা দেশের ভালো করে। কেউ কল্পনা করতে পারবেন, এত আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু একটা অংশে লাগু হবে না! আগের সরকার একটা আইন তৈরি করে প্রশংসা কুড়োত। কিন্তু দাবি করতে পারতো না, ওই আইন জম্মু-কাশ্মীরেও লাগু হবে। 


দেড় কোটির বেশি লোক বঞ্চিত থেকে যেতেন। দেশের অন্য রাজ্যে বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকার আছে, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বাচ্চারা বঞ্চিত। দেশের অন্যত্র মহিলারা যে অধিকার পান, সেই অধিকার নেই কাশ্মীরি মহিলাদের। অন্য রাজ্যে সাফাই কর্মীদের জন্য সাফাই কর্মচারি আইন রয়েছে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের সাফাই কর্মীরা বঞ্চিত ছিলেন। দলিতদের উপরে অত্যাচার রোখার জন্য কঠোর আইন রয়েছে দেশে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে ছিল না। অন্য রাজ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য সংখ্যালঘু আইন রয়েছে। কিন্তু এমনটা ছিল না কাশ্মীরে। পুলিস-প্রশাসনও বঞ্চিত হয়েছে।      



কাশ্মীরে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে উত্সাহ দেওয়া হবে। সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হতে পারবেন স্থানীয়রা। প্রধানমন্ত্রীর স্কলারশিপ যোজনা পাবেন কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা। যত বেশি সম্ভব পড়ুয়ারা লাভবান হতে পারেন, তা নিশ্চিত করব। 


জম্মু-কাশ্মীরের রাজস্ব ঘাটতি অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রভাব লঘু করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। 


কয়েক দিনের জন্য জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যপাল শাসন চালু হয়েছে। প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। রাজ্যপালের শাসনে প্রশাসনিক কাজ ভালো হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। কাগজে থাকা যোজনাগুলি এবার বাস্তবের মাটিতে দেখা যাচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনে নতুন কর্মসংস্কৃতি এসেছে। ফলাফল, এইমস আইআইটি। বিদ্যুত প্রকল্প, সড়ক, রেলপথ ও বিমান বন্দরের আধুনিকীকরণ হচ্ছে। 



সেই রাজ্যে লক্ষ লক্ষ ভাইবোনেরা লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের অধিকার পেতেন। কিন্তু বিধানসভা, পঞ্চায়েতে ভোটদান করতে পারতেন না। ভোটে লড়তেও পারতেন না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেশের অন্য প্রান্তে ভোটদানের অধিকার থাকলেও জম্মু-কাশ্মীরে নেই। এভাবেই অন্যায় চলতে থাকত। 


আরও একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। আপনাদের জনপ্রতিনিধি আপনারাই নির্বাচন করবেন। যেমন যিনিই বিধায়ক হোন, নিজের এলাকার উন্নয়ন করুন। 


একটা সময়ে কাশ্মীরে ফিল্মের শ্যুটিং হতো। এবার দুনিয়ার লোকেরা ফিল্মের শ্যুটিং করতে আসবেন। কাশ্মীরের লোকেদের জন্য অনেক সুযোগ আসবে। হিন্দি, তেলুগু ও তামিল ফিল্ম ইন্ড্রাস্টির কাছে আবেদন করব, কাশ্মীরে শ্যুটিংয়ে অগ্রাধিকার দিন। 


প্রযুক্তি সঙ্গে জড়িত লোকেদের আবেদন করব, জম্মু-কাশ্মীরে কীভাবে প্রযুক্তির বিস্তার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। কাশ্মীরের যুবকরা ইংরেজি ভাষা জানেন, জ্ঞানবুদ্ধি রয়েছে। বিপিও সেন্টার হবে সেখানে। প্রযুক্তির বিস্তার হলে জীবন আরও সহজ হয়ে যাবে। তৈরি হবে সুযোগ। 


জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যুবকরা এবার খেলার দুনিয়ায় সুযোগ পাবেন। তৈরি হবে স্পোর্টস অ্যাকাডেমি ও বিজ্ঞানসম্মত পরিবেশে প্রশিক্ষণ। দুনিয়ায় ভারতের নাম উজ্জ্বল করবেন তাঁরা। 


কেশর, খুবানি হোক বা কাশ্মীরি শাল পরিচিতি পাবে গোটা দুনিয়ায়।  লাদাখের অর্গানিক পণ্য ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বে। সোলো নামে একটি গাছ পাওয়া যায়। ওই গাছ উচ্চতা ও বরফাকৃত পাহাড়ে মানুষদের কাজে আসে। এছাড়াও বহু প্রাকৃতিক পণ্য পাওয়া যায় জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে। সেগুলি সনাক্ত করে বিক্রির ব্যবস্থা হবে।  লাভবান হবেন কৃষকরা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খুলতে ব্যবসায়ীদের আবেদন করব। লাদাখের স্থানীয় পণ্যকে দুনিয়ায় বাজারজাত করা হবে। 


স্পিরিচুয়াল ট্যুরজিম ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে উত্সাহ দেওয়া হবে। সোলার রেডিয়শনে এক নম্বরে লাদাখের ভূমি। কোনওরকম বিভেদ ছাড়া নতুন সুযোগ তৈরি হবে। শিক্ষা, হাসপাতাল, পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ হবে। 



সিদ্ধান্তের পক্ষে আছেন, কারও মতভেদ রয়েছে। গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। মতভেদের সম্মান করছি। আপত্তিকে সম্মান করি। বিতর্ক হচ্ছে, তার জবাব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক দায়িত্ব। দেশহিতকে সর্বোপরি রাখুন। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের নতুন দিশা দিতে সাহায্য করুন। দেশের আবেগকে মর্যাদা দিন। সংসদে কে সমর্থন দিয়েছে, কে দেইনি সে সবকে ছাড়িয়ে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। 


দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের সুখ-দুঃখের সঙ্গে আমরাও জড়িত। অনুচ্ছেদ ৩৭০ থেকে মুক্তি পেতেই হতো। তেমনই এটাও ঠিক কয়েকটি পদক্ষেপ করা জরুরি ছিল। যা সমস্যা হচ্ছে তার মোকাবিলাও করছেন সেখানকার লোক। সহযোগিতা করছেন তাঁরা। সেখানকার ভাই-বোনেরা জবাব দিচ্ছেন। 


এই সুযোগে সুরক্ষায় মোতায়েন নিরাপত্তাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। জম্মু-কাশ্মীর দেশের মুকুট। পুঞ্চের মৌলবি গুলাম দীন ৬৫ সালের লড়াইয়ে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁকে অশোকচক্র দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। কার্গিলযুদ্ধে সোনম ওয়াংচুক দেওয়া হয়েছে পরমবীর চক্র। সন্ত্রাসবাদীকে মারায় রুকসানা কৌসর পেয়েছিলেন কীর্তিচক্র। পুঞ্চের শহিদ ঔরঙ্গজেব হত্যা করেছে জঙ্গিরা। তাঁর দুই ভাই সেনায় ভর্তি হয়ে দেশের সেবা করছে। সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ে শহিদ হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলিসের বহু আধিকারিক।



সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় জম্মু-কাশ্মীরের দেশভক্তরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরকে আশ্বাস দিচ্ছি, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসবে। ইদের জন্য আপনাদের শুভ কামনা। জম্মু-কাশ্মীরে ইদ উদযাপনে কোনও সমস্যা যাতে নয়, সেই খেয়াল রাখছে সরকার। যারা বাইরে থাকেন, তাঁদের বাড়ি ফিরতে সাহায্য করছে সরকার। 


আরও পড়ুন- শ্রীনগর থেকে অন্তত ৭০ জন জঙ্গি-পাকপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীকে তুলে আনা হল আগরায়