নিজস্ব প্রতিবেদন: শেষ মুহূর্তে ছুটি পাওয়ায় প্রায় দৌড়তে দৌড়তে স্টেশনে ঢুকেছে মৈনাক। ছুটির কোনও নাম গন্ধ না থাকায় টিকিট কাটার কথা ভুলেও ভাবেনি বছর তিরিশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মৈনাক মুখার্জি। অগত্যা যশবন্তপুরের (যশবন্তপুর এক্সপ্রেস) জেনারেল কম্পার্টমেন্টই ভরসা মানিকতলার মুখুজ্যে বাড়ির কণিষ্ঠ সন্তানের। পৌঁছতে পৌঁছতে যতই অষ্টমীর দুপুর হয়ে যাক, পুজোর মুখে ছুটি বলে কথা, তাও আবার পড়ে পাওয়া ছুটি...কুছ পরোয়া নেই। জেনারেলেই যাবে মানিকতলার মৈনাক। বিভীষিকাময় কাজের শহর থেকে দুগ্গা দুগ্গা করে ট্রেন ছাড়ল। কিন্তু দুর্গতি পিছু ছাড়ল কই!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জেনারেলে উঠে কোনও রকমে ঠাসাঠাসি করে ব্যাগপত্তর রেখে বসার একটা ব্যবস্থা করা গেল বটে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝাঁঝাল অ্যামোনিয়ার সুবাস মৈনাককে অবস্থান বদলাতে উদ্বুদ্ধ করল। ঠেলাঠেলি করে কিছুটা এগোলেন আবার। মোটামুটি বেটার জায়গা দেখে দাঁড়ালেন। কিন্তু ওই, টকের ভয়ে পালিয়ে এসে এ যেন তেঁতুল তলায় বাস। সৌজন্যে, বৃষ্টিভেজা প্লাস্টিকের জুতা পরিহিত এক মেহনতি সহযাত্রী। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারও ঠাঁই বদলের ভাবনা। অবশেষে খানিকক্ষণ পর বোধোদয়, সব জায়গাই সমান সুরভিত। অতএব শরীরকে বৃথা ক্লান্ত করে লাভ নেই। তার চেয়ে ঘ্রাণেন্দ্রিয় অত্যন্ত সজাগ এটুকু ভেবেই খুশি হয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরাকে বিবেচক পদক্ষেপ বলে মেনে নিল।


সে যাত্রায় হাওড়ায় নেমে নানাবিধ ট্রেনজ বা রেলজ দুর্গন্ধ থেকে উদ্ধার পেয়েছিল মৈনাক। কিন্তু কিছুদিন পর কনফার্মড টিকিটে কর্মস্থলে ফেরার সময়ে তথাকথিত বিলাসবহুল কম্পার্টমেন্টেও বিবিধ সৌরভ তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার দিন তিনেকের মধ্যেই সুখবরটা পেলেন মৈনাক।


আসলে মৈনাক মুখার্জ্জির এই অভিজ্ঞতা শুধু জেনারেল কম্পার্টমেন্ট বা দুরপাল্লার ট্রেনেই সীমাবদ্ধ নয়। লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করা যাত্রীরাও গন্ধ সন্ত্রাসের দৈনিক শিকার। আর এবার সেই গন্ধ সন্ত্রাসের মোকাবিলাতেই এগিয়ে এলেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। ৫ অক্টোবর জারি করা এক সার্কুলারে তিনি জানিয়েছেন, "ট্রেনের কটু গন্ধ তাড়াতে সুগন্ধী ও সংক্রমণ নিরোধক তরল স্প্রে করতে হবে। রেলের সব অফিসেও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে"। ওই নির্দেশিকা অনুসারে লেবু বা আনারসের গন্ধযুক্ত তরল সুগন্ধী ব্যবহারের সুপারিশও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই খবর মুখের হাসি চওড়া করেছে আপামর ট্রেন যাত্রীরই। কিন্তু এর মধ্যেও লোকাল ট্রেনের বেশকিছু যাত্রী প্রশ্ন করছেন, ভেন্ডারের ছানা-সহ অন্যান্য জিনিসের কটু গন্ধ কি ঢাকতে পারবে নতুন সুগন্ধী?