নিজস্ব প্রতিবেদন: আমি আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত, পুলিস চাইলেই আমাকে গ্রেফতার করতে পারে। তাঁর নামে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি হতেই জানিয়ে দিলেন তরুণতুর্কী পতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল। পাশাপাশি বিজেপির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া গুজরাটের বছর চব্বিশের প্রত্যয়ী হার্দিক বলেন, "কারাগারে গেলেও আমার নেতৃত্ব দেওয়া বিক্ষোভ আন্দোলন জারি থাকবে।"


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রসঙ্গত, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে পতিদার বা প্যাটেল সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবিতে চলা 'হিংসাত্মক' আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হার্দিক সহ আরও ছয় জনের নামে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে পুলিসের খাতায়। ২০১৫ সালে পতিদার আন্দোলনের 'উপকেন্দ্র' উত্তর গুজরাটের মেহসানা জেলার ভিসানগর সিটিতে বিজেপি আইনপ্রণেতার অফিসে ভাঙচুরে চালানোর অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার শর্তে (হাজিরা) জামিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য অভিযুক্তরা সেই নির্দেশ মেনে চললেও হার্দিক প্যাটেল বুধবার আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁর উপর চটে গিয়ে গুজরাট হাইকোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। উল্লেখ্য এর আগেও দু'বার আদালতে উপস্থিত হননি হার্দিক। তাঁর আইনজীবী বারংবার আদালতের কাছে মক্কেলের শারীরিক উপস্থিতি থেকে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানায়। গুজরাটের মেহসানা জেলাতে হিংসা ছাড়ানোর অভিযোগে প্রবেশের অধিকার হারায় হার্দিক। পরে এই নিষেধাজ্ঞা আলগা করার আবেদন হার্দিক জানালেও আদালত তা খারিজ করে দেয়।


এদিকে হার্দিক গ্রেফতার হবেন জেনেই 'এনডিটিভি'-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, "এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিজেপি আমায় কতটা ভয় পাচ্ছে।" যদিও শীর্ষ পুলিসকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ হাতে আসলে তবেই গ্রেফতার করবেন হার্দিককে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, কারণ হার্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তো জারি করেছে আদালত। তাহলে কেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে এর জন্য দুষছেন হার্দিক ও তাঁর শিবির? এই প্রশ্নে হার্দিক ঘনিষ্ঠ দীনেশ বামভানিয়া গলায় সমালোচনার সুর। তিনি বলেন, "বিজেপির দ্বিচারিতা করছে"। আদালত যে সব মামলায় হার্দিক এবং অন্যান্য প্যাটেল নেতাদের বিচার করছে, স্বাভাবিকভাবেই সেগুলি সব পুলিসের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে। আর তাতেই বিজেপি প্রশাসনের 'কারসাজি'র অভিযোগ বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে দীনেশের স্পষ্ট মত, "একদিকে রাজ্যের বিজেপি সরকার বলছে যে তারা প্যাটেল নেতাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবে আর অন্যদিকে এইসব (আদালতের নির্দেশ দেখিয়ে গ্রেফতারির তোড়জোড়) করছে"। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেই প্যাটেল-পতিদার সম্প্রদায়ের নেতৃত্বকে নিয়ে সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে হার্দিক প্যাটলের উপস্থিতিতেই একটি সভা করেন গুজরাটের উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল। আর তারপর আবারও সেই আদালতের নির্দেশকে শিখণ্ডী করেই গ্রেফতারির চোখরাঙানি, এটা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কী?


আরও পড়ুন- হার্দিক প্যাটেলের বিরুদ্ধে জারি জামিন অযোগ্য পরোয়ানা


সুদীর্ঘকাল বিজেপির সমর্থক হিসাবে পরিচিত গুজরাটের প্যাটেল সম্প্রদায় বেশ কিছু কাল যাবত্ শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ায় সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনই জন্ম দেয় তরুণ প্যাটেল নেতা হার্দিকের। বছর দুয়েক আগে ওই আন্দোলন চরম রূপ নিলে বিভিন্ন হিংসার ঘটনায় নাম জড়ায় হার্দিক প্যাটেলের। ছয় মাসের জন্য তাঁর গুজরাটে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আর তারপর সাম্প্রতিককালে ভোটমুখী গুজরাটে আবারও খবরে আসেন পতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল। অন্য দিকে আসন্ন ভোটে নিজের রাজ্যেই মোদী-শাহ জুটিকে পর্যুদস্ত করতে আদাজল খেয়ে নামে রাহুলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। প্রাথমিকভাবে হার্দিক তাদের সমর্থনের কথাও বলেন এবং গুজরাট কংগ্রেসের প্রধানও জানিয়ে দেন, হার্দিক চাইলে তারা তাঁকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দিতে প্রস্তুত। এর মধ্যেই আবার পাঁচতারা হোটেলে রাহুল-গান্ধীর সঙ্গে হার্দিকের বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে চর্চা শুরু হয় গুজরাটে। যদিও রাহুল বা হার্দিক কেউই এই বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করেননি। কিন্তু, বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস-হার্দিক সমঝোতা যে হচ্ছেই সে খবরে সিলমোহর দিচ্ছে গুজরাট রাজনীতির কারবারিরা। ফলে, ভোটের প্রাক্কালে হার্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাকে হাতিয়ার করে পুলিসের এই অতিসক্রিয় হয়ে ওঠাকে নিখাদ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই আবহে, "আমি গ্রেফতার বরণ করতে প্রস্তুত" বলে হার্দিকও যে 'শহিদ' হওয়ার মাধ্যমে সহনাভূতির ভোট আদায় করে গেরুয়া শিবিরকে দুর্বল করতে চাইছেন সে বিষয়েও একমত ওয়াকিবহাবল মহল।