সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা। ১৯৪৮ সালেই গান্ধীমৃত্যুর মতো ভয়ানক রাষ্ট্রিক ক্ষতি। কিন্তু সদ্য়-স্বাধীনতাজয়ী এক নব্য জাতি হিসেবে ভারতের প্রবল জীবনীশক্তি কখনওই ম্রিয়মাণ হওয়ার নয়। হয়ওনি। ভারত যে-মহনীয়তা, যে-উদারতার জন্য বিশ্বে চির-পরিচিত, সেই ঋদ্ধ, প্রাচীন, অতীতের আলোয় উজ্জ্বল মহান ভারতেরই নিভৃত ছায়া এই জাতির অন্তরে সদা নিহিত। সেই অভ্যন্তরীণ শক্তিই জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে নব্য ভারতকে বারবার প্রেরণা জুগিয়েছে। আর সেই পথেই ১৯৫০ সালে এল প্রজাতন্ত্র দিবস।


এই নতুন ভারত হল সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র। ভারত শাসন উপলক্ষে ১৯৩৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকারের আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।


এর ঠিক দুমাস আগে, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক ভারতের সংবিধান অনুমোদিত হয়। ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে সংবিধান কার্যকর করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ১৯৩০ সালে ওই একই দিনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক পূর্ণ স্বরাজের সংকল্প ঘোষিত ও গৃহীত হয়েছিল।


১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়। এই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত, প্রায় সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলন। অবশ্য শুধু গান্ধী নন, ভারতের স্বাধীনতালাভের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন তাবড় তাবড় নেতা। যাই হোক, স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয় ব্রিটেনের সংসদে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হওয়ার মাধ্যমে। এর ফলে ব্রিটিশ-ভারত ভেঙে গিয়ে 'কমনওয়েলথ অফ নেশনস'-এর অন্তর্গত অধিরাজ্য হিসেবে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়।


ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনও বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ এবং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন গভর্নর জেনারেল। তখনও দেশে কোনো স্থায়ী সংবিধান ছিল না। ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল ঘটিয়েই খানিকটা জোড়াতালির মধ্যে দিয়েই দেশ শাসনের কাজ চলছিল। ১৯৪৭ সালের ২৮ আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি অম্বেডকর। ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়। চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে ২ বছর, ১১ মাস, ১৮ দিন সময়-পর্বে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশন ডাকে। এই সমস্ত অধিবেশনে জনসাধারণেরও প্রবেশের অধিকার ছিল। শেষমেশ ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহীত হবার পর ঠিক করা হয় ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালনের দিনটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েই ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারতের সংবিধান কার্যকর হবে এবং সেদিন থেকেই আধুনিক বিশ্বের সমাজ-ইতিহাসে এদেশ প্রজাতান্ত্রিক ভারত বা Republic of India হিসেবে পরিচিত হবে। 


একেবারে শেষ ধাপে একরাশ বিতর্ক ও সামান্য কিছু সংশোধনের পরে ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদের ৩০৮ জন সদস্য চূড়ান্ত সংবিধানের হাতে-লেখা দু'টি নথিতে (একটি ইংরেজি ও অপরটি হিন্দি) স্বাক্ষর করেন। আর এর দু'দিন পরে সারা দেশে এই সংবিধান কার্যকর হয়। আর এই তর্ক-বিতর্কের পরিসরটাই ভীষণ ভাবে ভারতীয়। 'এক্সচেঞ্জ অফ আইডিয়াজ' হল ভারতের যে কোনও কাজের মর্মবাণী। যে ভাব ইদানীং রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।


তবে ফল্গুধারার মতো আজও সেই গণপ্রজাতন্ত্রী ভাবধারা-প্রবাহই ভেসে চলেছে ভারতে। আরও অনাগত ভবিষ্যতেও ভেসে চলবে। বিশ্বের অনেক অনেক দেশের অনেক অনেক বৈভব, কিন্তু আপাত-দরিদ্র ভারত এক মহা-ধনে ধনী-- তা হল এ দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীন চিন্তাকে 'স্পেস' দেওয়ার ঔদার্য। 


শুধু সেইটুকুর জন্যই ২৬ জানুয়ারি এক মহান দিন হিসেবে প্রতিভাত হয়। এ দেশের মহামনীষীরা বলে গিয়েছেন, ভবিষ্যতের ভারত অতীতের মহান ভারতকেও অতিক্রম করে যাবে। সাধুবাক্য ঋষিবাক্য মিথ্যে হওয়ার নয়। তাই নিশ্চয়ই হবে। আর তা হয়তো হবে চিন্তা ও বাক্ স্বাধীনতার এই মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনার আলো-উদ্ভাসিত পথ ধরেই। 


আপাতত সেই অনাগত ঔজ্জ্বল্যের দিকে তাকিয়েই বসে থাকা আর নতুন করে প্রজ্ঞার প্রতিজ্ঞা গ্রহণেরই দিন হোক এই প্রজাতন্ত্র দিবস।


Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)  


আরও পড়ুন: Swami Vivekananda: 'এসো, মানুষ হও'! দেশের আত্মাকে ধরে টান দিলেন স্বামীজি!