রাহুল গান্ধী কি দেশে সমান্তরাল সরকার চালাতে চাইছেন? সিধুকাণ্ডে তোপ বিজেপির
সম্বিত প্রশ্ন তোলেন, `কংগ্রেস কি দেশে সমান্তরাল সরকার চালাতে চাইছে`? সিধু ভারতকে অবমাননা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন বিজেপি-র এই মুখপাত্র।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিধু বিতর্কে উত্তাল দেশ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরান খানের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে ঘরে বাইরে আক্রমণের মুখে প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা কংগ্রেসের মন্ত্রী নভজোত্ সিং সিধু। এবার সেই বিতর্কেই ভিন্ন মাত্রা দিল বিজেপি-র মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের তোলা প্রশ্ন। মঙ্গলবার সম্বিত প্রশ্ন তোলেন, "কংগ্রেস কি দেশে সমান্তরাল সরকার চালাতে চাইছে"? সিধু ভারতকে অবমাননা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন বিজেপি-র এই মুখপাত্র। এদিকে, আবার সিধুর পাশে দাঁড়িয়ে এই বিতর্কের পালে হাওয়া দিয়েছেন স্বয়ং ইমরান খান।
সমালোচকদের চোখে সিধুর 'অপরাধ' কী কী?
* সিধু বলেছেন, ইমরানের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে পাকিস্তানে গিয়ে তিনি যা আপ্যায়ন ও ভালবাসা পেয়েছেন, তা এর আগে কখনও পাননি।
* সিধু পাক সেনা প্রধান জেনারেল বাজোয়ার সঙ্গে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়েছেন।
* ইমরানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সিধুকে মাসুদ খানের পাশের আসনে বসতে দেখা যায়। এই মাসুদ খান হলেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট।
আত্মপক্ষ সমর্থনে কী বলছেন সিধু?
*সিধুর সাফ দাবি, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে মোট দশবার আমন্ত্রণ আসে। কিন্তু, তিনি পাকিস্তানে যাবেন কি না, সে বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নেননি। বরং, সরকারের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করেছেন। পাকিস্তান তাঁর ভিসা মঞ্জুর করার ২ দিন পর রাতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজে তাঁকে ফোন করেন ও অনুমতি দেন।
*পাকিস্তান সফর সেরে এসে 'আবেগাপ্লুত' এই প্রাক্তন ক্রিকেটার জানান, পাকিস্তানের আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় তিনি সত্যিই মুগ্ধ। তিনি এত ভালবাসা কখনও পাননি।
* সিধুর দাবি, পাক সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়া নিজেই তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন এবং জানান, কৈশরে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। এরপরই তাঁরা সৌজন্য বশতঃ আলিঙ্গন করেন।
* মাসুদ খানের পাশে বসার ব্যাপারেও 'সৌজন্যে'র যুক্তি দেখিয়েছেন সিধু। তাঁর দাবি, তিনি সেখানে অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন। তিনি যাতে মাসুদ খানের পাশে বসেন, সেই ব্যবস্থাই করেছিল পাক প্রশাসন। এক্ষেত্রে অন্যথা করলে, সেটাই 'অভদ্রতা' হত।
এছাড়া সিধু দাবি করেন, কারতারপুরে গুরুদ্বার করিডর পুনরায় খোলা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে পাক সেনা প্রধানের। ২০১৯ সালে গুরু নানকের ৫৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কারতারপুরে গুরুদ্বার দরবার সাহেব করিডর খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাভেদ। কথিত আছে, এখানেই শেষ জীবনটা কাটিয়েছেন গুরুনানক। সিধু বলেন, “সেই স্বপ্ন সত্যিই হতে চলেছে।”
ইমরান খান কী বলছেন?
সদ্য পাক প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেওয়া প্রাক্তন পাক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান মঙ্গলবার বলেন, "সিধু আমার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসায় আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি এ দেশে শান্তির দূত হয়ে এসেছিলেন এবং পাক জনতা তাঁকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। যাঁরা সিধুর সমালোচনা করছেন, তাঁরা আসলে উপমহাদেশে শান্তির বাতাবরণের ক্ষতি করছেন।"
তবে ইমরান বা সিধু যাই বলুক, বিজেপি তাতে দমছে না। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সিধুর এমন কার্যকলাপের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কটাক্ষের সুরে এদিন সম্বিত পাত্র জানতে চেয়েছেন, রাহুল বলুক যে পাকিস্তানে গিয়ে কংগ্রেস নেতারা কী এমন পায় যা ভারতে কখনও পাওয়া যায় না? এরপরই কংগ্রেসের 'সাবেক পাকিস্তান প্রেম' নিয়ে খোঁচা দিয়ে সম্বিত বলেন, কংগ্রেস চিরকাল পাকিস্তানের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চেয়েছে। এদিকে আবার বজরং দল সিধুর মাথার দাম হেঁকেছে ৫ লক্ষ টাকা। বজরং দলের আগরা জেলা সভাপতি সঞ্জয় জাটেকে একটি ৫ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক চেক দেখিয়ে ভিডিওয় বলতে দেখা যায়, "বিশ্বাসঘাতক সিধুকে যে মারতে পারবে, তাঁকে এই চেক দেওয়া হবে"।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে সিধু বিতর্কে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না মিললেও প্রথম দিন থেকেই সিধুর 'আলিঙ্গনে'র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। তিনি স্পষ্ট বলেন, পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সিধুর ব্যক্তিগত, এক্ষেত্রে দলের কোনও মত ছিল না। সিধু যে ক্যাবিনেটের সদস্য, সেই ক্যাবিনেটেরই মুখ্যমন্ত্রী এমন সমালোচনা করার পরও এই প্রাক্তন ক্রিকেটার নিরুত্তাপ। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তাত্পর্যপূর্ণভাবে সিধু বলেন, "ক্যাপ্টেন সাহেব (ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং)-সহ কংগ্রেসের বহু নেতাই এ বিষয়ে কথা বলেছেন। দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, ফলে সকলেই মত প্রকাশ করতে পারেন"।