বাবার `পরকীয়ার রায়` পাল্টে দিলেন বিচারপতি ছেলে
পরকীয়া ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে বাবার রায়ের উল্টো পথে হাঁটলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বাবার দেখানো পথে চলে ছেলে। প্রচলিত এই ধারণা পাল্টে দিলেন সন্তান। বিচারপতি বাবার রায় বদলে দিলেন ছেলে। ৩৩ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি ওয়াইভি চন্দ্রচূড় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ বলে রায় দেন। তাঁর ছেলে ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের রায়ে পরকীয়ার গা থেকে মুছে গেল অপরাধের তকমা। এক বছর আগে, গোপনীয়তার অধিকার নিয়েও, সিনিয়র চন্দ্রচুড়ের রায় খারিজ করে দেন জুনিয়র চন্দ্রচূড়।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫। সবচেয়ে বেশিদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে থাকার রেকর্ড যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড়ের। তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় এখন শীর্ষ আদালতে। ১৯৮৫ সালে প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসে ওয়াইভি চন্দ্রচূড় রায় দেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ। কারণ, সমাজের স্বার্থে কয়েকটি ক্ষেত্রে অন্তত পরকীয়া সম্পর্কে শাস্তি হওয়া উচিত। এই ধারা না থাকলে পরকীয়ায় সমাজ ছেয়ে যাবে। বিবাহের স্থায়িত্ব নষ্ট হওয়া কখনই আদর্শ পরিস্থিতি নয়।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে বাবার রায় বদলে দিলেন ছেলে। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রায় দিলেন, বিবাহের মানে এই নয় যে, মহিলাকে স্বামীর কাছে যৌন স্বাধীনতা বন্ধক রাখতে হবে। বিবাহ হয়েছে বলেই কোনও মহিলার বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক ও পছন্দের অধিকারে সীমারেখা টানা যায় না। জুনিয়র চন্দ্রচূড়ের মতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অতীতের ধ্বংসাবশেষ। মহিলার নিজের পছন্দই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর আকাঙ্খা ও যৌন আচরণকে আলাদা রাখা যায় না। ৪৯৭ ধারা মহিলাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা ভঙ্গ করে। মহিলারা স্বামীর সম্পত্তি বলে বিবেচিত হন। তাই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অসাংবিধানিক।
১ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। তখনও দেখা যায় একই ছবি। সালটা ১৯৭৬। জরুরি অবস্থায় হাত পড়ে মৌলিক অধিকারে। তখন ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নে এডিএম জব্বলপুর বনাম শিবকান্ত শুক্ল মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি ওয়াইভি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত হয় পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। ওয়াইভি চন্দ্রচূড় রায় দেন, আগমার্কা ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে কিছু হয় না। ব্যক্তি স্বাধীনতা কার্যকর করতে গিয়ে বোঝা সম্ভব নয় যে তা সংবিধানে দেওয়া অধিকার নাকি তা প্রাক সংবিধানিক। জরুরি অবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হতেই পারে।
গত বছর ব্যক্তিগত পরিসরকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দিয়ে গিয়ে জুনিয়র চন্দ্রচূড় রায় দেন, এডিএম জব্বলপুর মামলার রায়ে গুরুতর খামতি ছিল। জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কোনও সভ্য দেশ এর দখল নিতে পারে না। পরপর দু-বার ছেলের রায়ে খারিজ বাবার দেওয়া রায়। এমন উদাহরণ অতি বিরল বলেই মনে করছে প্রবীণ আইনজ্ঞ মহল।