দরকারেই পাশে ছিলেন `সুষমাজি`, জিতেছিলেন মন, হয়ে উঠেছিলেন `সুপার মম`
উত্তরে সুষমা স্বরাজ মজা লিখেছিলেন, `আমি-ই করি, আমার ভূত নয়।`
নিজস্ব প্রতিবেদন : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাঁকে ভূষিত করেছিল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক (Best Loved Politician) হিসেবে। আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন জননেত্রী। সবার প্রিয় 'ম্যাম'। পাসপোর্ট থেকে ভিসা সমস্যা? বিদেশে গিয়ে আটকে পড়েছেন? হানিমুনে একা যেতে হচ্ছে? দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় টুইট করেছেন তাঁদের প্রিয় 'সুষমাজি'কে। আর তাঁদের কাউকেই নিরাশ করেননি ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। শুধু দেশের মানুষ নয়, সুষমা স্বরাজের 'দেখভাল' থেকে বঞ্চিত হননি এদেশে ঘুরতে আসা ভিনদেশিরাও। দেশের মানুষের সাহায্যার্থে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি ছিল তাঁর। দেশের সুনাম রক্ষায় তিনি যেন ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী। চলুন, একনজরে ফিরে দেখা যাক 'সুপার মম' সুষমা স্বরাজকে-
কৈলাস মানস সরোবরে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন এক ষাটোর্ধ্ব দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী, দুজনকে আলাদা আলাদা দলে নির্বাচন করায় মুশকিলে পড়ে সোজা সুষমা স্বরাজকে টুইট করনে চন্দর নন্দী। যার জবাবে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে দিয়ে আশ্বস্ত করেন সুষমা স্বরাজ। 'তোমাদেরকে আলাদা করে কম্পিউটার অপরাধ করেছে,' সুষমা স্বরাজের করা সেই টুইট ভাইরাল হতে সময় নেয়নি।
ভিসা না পাওয়ায় বিয়ে 'আটকে যেতে' বসেছিল এক তরুণীর। সঙ্গে সঙ্গে টুইট সুষমা স্বরাজকে। সমস্যার কথা জানা মাত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী।
তিনি ছিলেন বিদেশমন্ত্রী। বিদেশের দরবারে ভারতের সুনাম রক্ষার গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। তাই এদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি নাগরিকদের প্রতি অন্যায়ও তিনি বরদাস্ত করেননি। উত্তরপ্রদেশে এক সুইস যুগল নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় দোষীরা যাতে শাস্তি পান, তারজন্য কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। দোষীদের গ্রেফতারি নিশ্চিত করার সাথে সাথে আক্রান্ত সুইস যুগলের চিকিত্সাতেও ছিল তাঁর কড়া নজর।
ভারতে ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক ডাচ যুবতী। ফেসবুকে ঘটনার কথা পোস্ট করে জানায় ওই যুবতীর পরিবার। একথা জানা মাত্রই আসরে নামেন সুষমা স্বরাজ। খুঁজে বের করা হয় ওই কিশোরীকে।
এতো গেল নমুনা মাত্র। এরকম উদাহরণের সংখ্যা ভূরি ভূরি। ২০১৭ অক্টোবরে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ তখন চড়ছে। দুই দেশের মধ্যে জারি 'বিবৃতি য়ুদ্ধ'। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও মানবিকতাকেই সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দুই পাকিস্তানি নাগরিককে অবিলম্বে ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। উদারতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মন জিতে নিয়েছিলেন পাকবাসীর।
গত বছর দীপাবলির সময়েও কাল বিলম্ব না করে এক পাক শিশুর মেডিক্যাল ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। সন্তানের চিকিত্সার জন্য ভিসা মঞ্জুরের আবেদন জানিয়ে অসহায় বাবা টুইট করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রীকে। আবদুল্লাহ নামে ওই পাক শিশুকে 'দীপাবলি উপহার' দিতে দেরি করেননি সুষমা স্বরাজ। টুইটা পাওয়ার পরই ইসলামাবাদ হাইকমিশনকে নির্দেশ দেন তিনি। টুইট বার্তায় ওই শিশুর বাবাকে তিনি লেখেন, "The treatment of your child must not suffer for want of medicine. I have asked Indian High Commission to issue medical visa. @ChachaKashif."
ভারতে নয়ডায় হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ মা। এদিকে ছেলে পাকিস্তানে। ভিসা সমস্যায় আটকে পড়ে অসহায় ছেলে সাহায্য চেয়ে টুইট করেন ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমাকে। ফাহাদ ইজাজের "For God's sake, please help me. My mother is admitted to Fortis Noida. She is unwell. Please give me visa," এই টুইট দেখামাত্রই জবাব দেন সুষমা। ছেলের আর্তি নজর এড়ায়নি আরেক 'মা'র। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর পৌনে ৬টা সুষমা লেখেন,"You will get a visa to see your ailing mother."
এরকমই দিনের ২৪ ঘণ্টা সবার সব প্রয়োজনে পাশে থেকেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বলি, একবার এক নেটিজেন মজা করে লিখেছিলেন, সারাদিন সবার এত টুইটের জবাব নিশ্চয়ই সুষমা স্বরাজ নিজে করেন না। যার উত্তরে সুষমা স্বরাজ মজা লিখেছিলেন, "আমি-ই করি, আমার ভূত নয়।"
আরও পড়ুন, সুষমা স্বরাজকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: চোখের জল বাধ মানল না মোদীর
বিদেশ মন্ত্রকের মতো গুরুদায়িত্ব সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগেও তাঁর কোনও খামতি ছিল না। আর তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার প্রিয় 'সুষমাজি'। মঙ্গলবার রাত ৯টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুষমা স্বরাজ। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ দেশ। বিহ্বল রাজনৈতিক মহল।