সুদেষ্ণা পাল : টিভি চ্যানেলে পরের পর ব্রেকিং.... মুহুর্মুহু নিউজ অ্যালার্ট... আজ দেশের প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতার 'লিড'.... ২০১২ নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে ফাঁসির সাজা বহাল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু এই রায়ের বিন্দুবিসর্গ সে কিছু জানে না। নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই 'নাবালক' এখন দক্ষিণ ভারতে একটি ধাবায় রান্নার কাজ করে। এখন তার বয়স ২৩।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তার সংশোধনের 'দায়িত্ব'-এ থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রয়াসের চেয়ারপার্সন আমোদ কান্থ জানিয়েছেন, "তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে, সবসময় এই আতঙ্কে থাকত সে। এখন এই রায়ের পর, আবার তার খোঁজ শুরু হবে। কিন্তু বর্তমানে সে যেখানে রয়েছে, সেখানে জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি সেভাবে দেখতে পারবে না। তার মালিকও তার অতীত সম্বন্ধে জানে না। এমনকী, সে নিজেও এই অতীত পিছনে ফেলে এসেছে।" ওই অফিসার বলেন, "২০১৫-র ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পায় সে। তারপর কিছুদিন NGO-তে থাকে সে। এরপরই তাকে দক্ষিণ ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে একটি ধাবায় কাজ করে সে।" তবে সুরক্ষার স্বার্থে ওই 'নাবালক' সম্বন্ধে আর কোন তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি... (গোপনে অবশ্য এখনও তার উপর নজরদারি চালায় গোয়েন্দা সংস্থা)  


২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর রাস্তায় চলন্ত বাসে গণধর্ষিতা হয় নির্ভয়া। অভিযুক্তের দলে ছিল এই 'নাবালক'ও। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছরের কয়েকমাস কম। অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিল সে। বিচারে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড ৩ বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠায়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কিছুদিন একটি NGO-তে থাকে সে। তারপর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ ভারতে। যদিও অভিযোগ, সেদিনের ঘটনায় তার আচরণ ছিল সবচেয়ে বেশি 'হিংস্র'। এমনকী সংশোধনাগার থেকে তার মুক্তি নিয়েও তৈরি হয় বিতর্কও।


আমোদ কান্থ আরও জানান, হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা ওই নাবালক ৯ বছর বয়স থেকেই শিশুশ্রমিক। ১১ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। দিল্লি থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। ৬ জনের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী বড় দিদি। বাড়িতে রয়েছে বিছানায় শয্যাশায়ী বাবা, অসুস্থ মা ও ভাইবোনেরা। এখনও ওই পরিবার ওই গ্রামেই বাস করে। বাড়ি থেকে পালিয়ে টাকা রোজগার করতে দিল্লি চলে আসে সে। সেখানেই রাম সিং ও অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে তার আলাপ হয়। তার কাজ ছিল বাস ধুইয়ে দেওয়া, বাস পরিষ্কার করা। এই কাজের বদলে ওই 'নাবালক'কে খেতে দিত রাম সিংরা। সেদিন, ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বরে রাতেও তাকে 'হুকুম' করা হয়, তাদের 'সঙ্গ' দিতে।


তিনি জানান, নিজেকে নিয়ে 'অত্যন্ত অনুতপ্ত' ছিল সে। সংশোধনাগারে থাকার সময়টায় মাঝে মাঝে শুধুমাত্র মাকে ফোন করত। সংশোধনাগারে যে সকল কাউন্সেলর অফিসাররা তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই একমত যে 'অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ বন্দি' ছিল ওই 'নাবালক'। সংশোধনাগারে আসার পর থেকেই ধার্মিক হয়ে উঠেছিল সে। দিনে ৫ বার করে নামাজ পড়ত। পড়াশোনায় তার উত্সাহ ছিল। কিন্তু নিজের নাম লেখা ছাড়া আর কিছুই জানত না। পড়াশোনার কারণেই প্রথমে তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা ঘরে রাখা হয়েছিল। রান্নায় ভীষণ উত্সাহ ছিল তার। বিভিন্ন সময়েই সংশোধনাগারের রান্নায় 'ফিনিশিং টাচ' দিত সে। অন্য বন্দিরাও তার হাতের তৈরি রান্না খেতে চাইত। তাই মুক্তির পর রান্নার পেশাতেই আজ 'নতুন জীবন' শুরু করেছে সে।


আরও পড়ুন, 'বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ'; নির্ভয়া কাণ্ডে চার অভিযুক্তেরই ফাঁসির 'সুপ্রিম' রায়


আরও পড়ুন, "গোটা দেশ বিচার পেল, আদালতের নির্দেশ দ্রুত কার্যকর হোক"; রায়ে প্রতিক্রিয়া নির্ভয়ার বাবা,মায়ের