Darjeeling Tea: ধুঁকতে-থাকা চা-শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস
দার্জিলিং থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। সবুজ চোখজুড়নো এক চা-বাগান। ১৫০ বছরের প্রাচীন Selim Hill Tea Garden। ৯৭৩ একর জুড়ে বিস্তৃত। যার মধ্যে ৪৫০ একরে চা ঝোপ।
এই ভূ-সম্পত্তিটি এখন মাত্র তেইশের এক তরুণের হেফাজতে। নাম স্পর্শ আগরওয়াল (Sparsh Agarwal)। Selim Hill Tea Garden হল ৭৪টি সেই বিরল চা-বাগান যেখানে দার্জিলিং চা উত্পন্ন হয়। কিন্তু এই অঞ্চলের অধিকাংশ চা-বাগানই যেমন ধুঁকছে, সেলিম হিল চা-বাগানের অবস্থাও প্রায় তেমনই ছিল।
বহুবার তারা চেষ্টা করেছে ঘুরে দাঁড়াতে। নানা পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শেষমেশ। অবশেষে তাদের সমস্ত নতুন পরিকল্পনায় জল ঢালল করোনা। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের জেরে তারা তাদের ফার্স্ট ফ্লাশ ও সেকেন্ড ফ্লাশ কোনওটিরই রফতানি করতে পারল না। অথচ এই দুটি রফতানি থেকেই লাভ বিপুল। বাগান প্রায় বিক্রি করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
এদিকে স্পর্শ কোনও দিনই তাঁর পারিবারিক ব্যবসায় মনোযোগী নন। তাঁর আগ্রহ ও চর্চার বিষয়ও ভিন্ন। তাই পরিবারের সঙ্কটের সূত্রে যখন বন্ধুর কাছে তাঁদের চা-বাগান বেচে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুললেন তখনই যেন একটা ম্যাজিক ঘটল।
আসলে ছুটিছাটায় স্পর্শের সঙ্গে তাঁদের চা-বাগানে অনেকেই বেড়াতে এসেছেন। সেখানকার মধুর স্মৃতি আছে তাঁদের। বন্ধুর চা-বাগান বিক্রি হয়ে যাওয়ার কষ্টটা তাঁদেরও ছুঁয়ে গেল। তাই তাঁরাও বন্ধুর সঙ্গে তাঁর চা-বাগান বাঁচানোর যুদ্ধে সামিল হতে চাইলেন।
স্পর্শের সঙ্গে জুটে গেলেন দুই বন্ধু। Ishaan Kanoria এবং Anant Gupta। একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার, অন্যজন Social Sciences-য়ে স্নাতক। তাঁরা একযোগে একটা চেষ্টায় সামিল হলেন।
নানা চেষ্টার মধ্যে একটি হল Dorje Teas-এর প্রতিষ্ঠা। আর সেটাই Darjeeling tea-র বাজারটাকেই যেন বদলে দিল! ক্রেতাদের অফার দেওয়া হল মাত্র ২১০০ টাকায় সারা বছরের জন্য তাজা এবং অর্গানিক চা।
তাঁদের পরামর্শদাতার ভূমিকায় ছিলেন কিংবদন্তি রাজা ব্যানার্জি। বছর ৭৪-এর Rajah Banerjee, দার্জিলি চা-ব্যসার এক পরিচিত মুখ। একদা মকাইবাড়ি টি এস্টেটেও যুক্ত ছিলেন। অর্গানিক চা আন্দোলনেরও মুখ তিনি।
আস্তে আস্তে ধুঁকতে থাকা ঝুঁকে-পড়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াল চা সেলিম হিল বাগান। সেখানে বইল খুশির হাওয়া। শুধু তো চা-চাষই নয়, সেখানে থাকেন অনেক স্থানীয় মানুষ। তাঁদের মধ্যে জনাতিনশোই কাজ করেন সেলিম হিল চা-বাগানে। এই সেলিম হিল তো প্রাকৃতিক সম্পদেও পূর্ণ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই স্থান স্থানীয় সাংস্কৃতিক উত্থানের জন্য শক্ত মাটি জোগায় বইকি!