Durga Puja 2023: দান্তাওরাং, দান্তাবেরাং! ২৫০ বছর ধরে পুজো শিলাদুর্গার...
ভারতের প্রাচীন জনজাতিদের মধ্যে ধিমাল অন্যতম। এই মুহুর্তে যদিও বা তা লুপ্তপ্রায়, তবুও নিজের ঐতিহ্য শিল্প ও সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে আছেন তাঁরা। কালের নিয়মে যা হারিয়ে যাওয়ার কথা, যা ধুলো হয়ে ইতিহাস হয়ে যাওয়ার কথা, তা বাঁচিয়ে রেখেছেন।
নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র যেমন-- চোঙ্গা মিরদং, পাশিংকো দোতারা, পাশিংকো ঢোল, তুনজাই, গুমরা, মুচুঙ্গা, তুমনা-- এসব বাজিয়েই এখানে চারদিন ধরে চলে পুজো। সঙ্গে ট্র্যাডিশনাল পোশাকে নানা রকম গান-নাচ। সারা বছর ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি বা দৈনন্দিক জীবনের দুঃখ-কষ্ট-প্রেম-প্রার্থনার মতো বিষয়গুলি তাঁরা গানে ও নাচে তুলে ধরেন।
পুরনো নিয়মনিষ্ঠা মেনে এবারেও যথারীতি শুরু হয়ে গেল দান্তাওরাং বা দান্তাবেরাংয়ের পুজো। সারা গ্রামে একটিই মন্দির। সেখানেই নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচ-গান শুরু হল। শুরু হল শীলারূপী দুর্গাপুজো। ধিমাল জনজাতির প্রধান গর্জেনকুমার মল্লিক জানান, গত প্রায় ২০ বছর ধরে গ্রামের অন্যান্য জনজাতির অনুরোধে একই মন্দিরে চলছে দুর্গামূর্তির পুজো। বেশিরভাগই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের অনুরোধ, পুজো যাতে একসঙ্গে করা হয়। সব নিয়ম একই থাকছে। শুধু দান্তাওরাং ও দান্তাবেরাংয়ের পাশাপাশি মায়ের মূর্তিও স্থাপন করা হয়।
দুর্গার যেন অন্যরকম রূপ ধিমাল জনজাতির মধ্যে পরিস্ফুট। মা একই, শুধু রূপ আলাদা। প্রার্থনা এক, ভাষা আলদা। আনন্দ এক, পদ্ধতি আলাদা। এঁদের অনুভূতির কাছে বিগ বাজেটের আলোর রোশনাইও ফিকে।
জনজাতির প্রধান গর্জেনকুমার মল্লিক জানান-- আমরা অসম থেকে গভীর জঙ্গল হয়ে আজকে এই নকশালবাড়ির ইন্দো-নেপাল সীমান্তে এসে ঠেকেছি। আমাদের জনজাতির বহু মানুষ নেপালে রয়েছেন। আমাদের দুর্গা পুজো মানেই প্রকৃতির পুজা৷ একই নিয়মে পুজা হয় কিন্তু আড়ম্বরহীন অন্যান্যদের কাছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের শিলার পাশাপাশি মুর্তি পুজাও হয়৷ যে পরিবেশে আমরা থাকি তা এখন মিশ্র পরিবেশ৷ তাদের অনুরোধেই ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মায়ের মুর্তি বেদিতে উঠে৷ কিন্তু আমাদের পুজা শুরু হয়ে গিয়েছে।
গ্রামবাসী প্রতিমা সিংহ মল্লিক জানান, আমাদের শিলায় পুজো হয়। এটাই আমাদের পরম্পরা। নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আমরা আজ থেকেই গান-বাজনার মাধ্যমে দশমী পর্যন্ত কাটিয়ে দেব।
এঁদের পুজোয় কোনও ব্রাহ্মণ লাগে না। প্রকৃতি মায়ের পুজো তাঁরা নিজেরাই করেন। গ্রামবাসী মনীষা মল্লিক জানান-- নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা পুজো করি। নাচ-গানের মাধ্যমে আনন্দ করি। আমাদের আর শহরের পুজো দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে হয় না।