পরশুরাম, ধনসম্পদ ও গণেশের যোগাযোগে অমর অক্ষয়তৃতীয়া

Soumitra Sen Thu, 13 May 2021-9:55 pm,

অক্ষয় তৃতীয়া হিন্দুবিশ্বাসে খুবই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন হিমালয়ে কেদারনাথের মন্দির খুলে দেওয়া হয়। সাধারণ বাঙালিঘরে দিনটিকে পুজোপাঠ বা ব্রাহ্মণকে অর্ঘ্য দানের মধ্য় দিয়ে পালিত হয়।  

 

 কিন্তু এদিনটির সত্যকার পরিচয় জানলে অবাক হতে বাধ্য সকলে। পুরাণঘটিত মোটামুটি তিনটি অতি বিশেষ ঘটনার সঙ্গে বিজড়িত দিনটি।  প্রথমত, মনে করা হয়, বিষ্ণুর দশাবতারের ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে তথা এই অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে। এ কারণে কোনও কোনও জায়গায় দিনটি 'পরশুরাম জয়ন্তী' হিসেবেও পালিত হয়।

পরশুরাম খুবই বিতর্কিত চরিত্র। পরশুরামের পিতা জমদগ্নি ও মাতা রেণুকা। জমদগ্নি ব্রাহ্মণ হলেও রেণুকা ক্ষত্রিয়কন্যা। পরশুরাম জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও প্রবল ক্ষাত্রতেজসম্পন্ন ছিলেন। তিনি ২১ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করেছিলেন। তিনি নাকি তাঁর মাকেও হত্যা করেছিলেন। পরে তাঁর মনে এজন্য পরিতাপ আসে এবং তিনি মাতৃহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হতে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। বহু তীর্থে স্নান করে তীর্থজলে তিনি ধুয়ে নেন তাঁর কুঠার। কিন্তু ধুয়ে-ধুয়েও তা থেকে নাকি মাতৃরক্তচিহ্ন মুছে ফেলা যায়নি। অবশেষে কর্ণাটকে তুঙ্গ নদীর জলে স্নান করলে তাঁর কুঠার কলুষমুক্ত হয়। যাই হোক, লোকবিশ্বাস, ব্রহ্মক্ষত্রিয় সেই মহাপরাক্রান্ত পরশুরাম আজও জীবিত। আজও 'অক্ষয়' তাঁর উপস্থিতি।

 

অক্ষয়তৃতীয়া তিথিটির সঙ্গে জড়িত আরও একটি প্রায়-ভুলে-যাওয়া পুরাণনাম। তিনি হলেন কুবের। ঐশ্বর্য ও বৈভবের দেবতা। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গণেশ এবং লক্ষ্মীর সঙ্গে কুবেরেরও পুজো করার চল আছে। বিশ্বাস, এদিন কুবেরের পুজো করলে অনন্ত সম্পদের অধিকারী হয় মানুষ। এ দিন স্বর্ণ ও রত্ন ব্যবসায়ীরা কুবেরের বিশেষ পুজো করেন।

কুবেরের এই বৈভবের পিছনে রয়েছে রামায়ণের কাহিনির সূত্র। কুবেরই স্বর্ণলঙ্কার অধিপতি ছিলেন। রাবণ তাঁকে তাড়িয়ে লঙ্কা দখল করেন। তখনই কুবের মহাদেবের তপস্যা করেন। মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে অনন্ত ঐশ্বর্য দান করেন। পুরাণ মতে, এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই কুবেরকে তাঁর অনন্ত বৈভব দান করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। বিশ্বকর্মা কৈলাসের কাছে অলকায় কুবেরের প্রাসাদ তৈরি করে দেন। 

যদিও কুবেরকে অনেকেই দেবতা বলেন না। শাস্ত্রবিদেরা জানান, অথর্ব বেদে তাঁকে নাকি 'অপদেবতা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ কুবেরকে আবার জ্ঞান ও সুবুদ্ধির দেবতা বলেও উল্লেখ করেন। বৌদ্ধরাও কুবেরকে গুরুত্ব দেন। বৌদ্ধতত্ত্ব অনুসারে কুবেরের নাম 'বৈশ্রবণ'।

তবে অক্ষয়তৃতীয়া দিনটির সঙ্গে বাঙাালি তথা ভারতবাসীর সম্ভবত একটি কারণেই আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়। এই দিনই মহাভারত রচনা শুরু। ব্য়াসদেব এই চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতেই মহাভারতের শ্লোক উচ্চারণ শুরু করেন আর গণেশ তা লিখতে শুরু করেন। তাই লোকবিশ্বাস, যে কোনও কাজ আরম্ভের জন্য এই দিনটিই প্রশস্ত।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link