Chekhov-Rolland: বিশ্বসাহিত্যের দুই জ্যোতিষ্কের নাম জ্বলজ্বল করে ২৯ জানুয়ারির আকাশে!

Soumitra Sen Sat, 29 Jan 2022-2:49 pm,

আধুনিক ছোটগল্পের মহাশিল্পীদের কথা উঠলেই গি দ্য মপাসাঁ, ও হেনরি এবং আন্তন চেখভের নাম উঠবেই। এই তিনজনেরই লেখা বহু দিন ধরে সমাদৃত, বহুলপঠিত। পৃথিবীতে বহু সুদক্ষ ছোটগল্পলেখক আছেন, কিন্তু কেন এঁরা সেরা? আসলে এঁদের লেখার মডেলের কারণেই এঁরা সেরা। এই তিন স্রষ্টাই নিজস্ব মডেলের ছোটগল্প লিখেছেন এবং নিজস্ব মডেলেই সার্থক শিল্প সৃষ্টি করতে পেরেছেন। বাকি তাবত লেখকেরা সেই মডেল মেনে নিয়েই উৎকৃষ্ট গল্প লিখেছেন। 

এহেন মহাশিল্পী আন্তন পাভলোভিচ চেখভের জন্ম ১৮৬০ সালে, দক্ষিণ রাশিয়ায়। বাবা রুশ, মা ইউক্রেনীয়। অল্প বয়সেই প্রতিভাধর লেখক হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে। মস্কোয় চেখভ  ডাক্তারি পড়েন। রাশিয়ায় কলেরা মহামারি দেখা দিলে বছরখানেক ডাক্তারিও করেন। কিন্তু ডাক্তারি চেখভের পোষাল না। তাছাড়া ততদিনে লেখক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাকি জীবনটা তাই লিখেই চালিয়ে দিলেন।

পৃথিবীতে ছোটগল্পের সব চেয়ে প্রচলিত মডেলটি সম্ভবত মপাসাঁর। মপাসাঁর গল্পের শেষে ক্লাইম্যাক্স থাকে। সমস্ত বর্ণনা গল্পটাকে ক্লাইম্যাক্সের দিকে নিয়ে যায়। মোটামুটি এটাই ছোটগল্পের জনপ্রিয়তম পন্থা। আর চেখভ? তিনি এক্ষেত্রে মপাসাঁর একেবারে বিপরীত। তাঁর গল্প ক্লাইম্যাক্সবিহীন। নিস্তরঙ্গ কিন্তু একই সঙ্গে প্রচণ্ড বাস্তবমুখী সমস্যার কাহিনি। চেখভের মুন্সিয়ানা হচ্ছে সাদামাটা, বিশেষত্বহীন জীবনকেই ছোটগল্পে তুলে আনা। ৯০৪ সালে চেখভের মৃত্যু। শোনা যায়, তলস্তয় পর্যন্ত বলেছিলেন-- চেখভ মেয়ে হলে ওকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিতাম!

এই ২৯ জানুয়ারির জাতক রোমা রঁলাও। ১৮৬৬ সালে তাঁর জন্ম। তিনি বিশ্বসাহিত্য সংস্কৃতির এক অনন্য পুরুষ। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে ঘোরতর যুদ্ধবিরোধী রোম্যাঁ রোলাঁ সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সমিতিতে ছিলেন। যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিসমাপ্তি তাঁকে বেদনার্ত করে তুলেছিল। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মনীষী, লেখক, শিল্পী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর সংবলিত শান্তিবাদী এক ইস্তাহার প্রকাশ করেন, যাতে বিশ্বের বিবেক জাগ্রত হয়। তাঁর এই উদ্যোগ ইংল্যান্ড ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেছিল। কিন্তু জার্মানিতে হিটলারের উত্থানে শান্তিবাদীদের প্রয়াস ব্যর্থ হয়। 

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে রোলাঁ গভীরভাবে আকৃষ্ট হন ভারতীয় দর্শনের প্রতি। তিনি মনে-প্রাণে ব্যক্তিত্ববাদী মানবিকতায় পক্ষপাতী ছিলেন। ভারতীয় দর্শন ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রচুর চর্চা করেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভারতীয় দর্শন ও ভারতের অধ্যাত্মবাদের প্রতি তার অসীম আগ্রহ তৈরি হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। স্বামী বিবেকানন্দর কারণেই রোলাঁ ভারতের বেদান্ত দর্শনে প্রভাবিত হন।

রোঁলা এক খাঁটি ভারতমুগ্ধ। তিনি প্রবল ভাবে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের রচনার মাধ্যমেই মূলত তিনি ভারত ভারতীয় দর্শন ভারতীয় সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। পরে-পরে রবীন্দ্রনাথ মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শন ও কর্ম নিয়েও গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ এবং গান্ধীর উপর তাঁর মূল্যবান রচনাও আছে। রোলাঁ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link