বাবরি মসজিদের নীচে প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য, ঠিক কী রয়েছে এএসআই-র সর্বেক্ষণ রিপোর্টে?
নিজস্ব প্রতিবেদন: অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বাবরি মসজিদের নিচে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষ মন্দিরের কি না, তার প্রমাণ নেই। কিন্তু সে খনন কার্যে পাওয়া স্থাপত্যের সঙ্গে, ইসলামের কোনও যোগ নেই।
কিন্তু ঠিক কী মিলেছিল এএসআই-এর খননকার্যে? বাবরের আমলে তৈরি বাবরি মসজিদ। কোনও ফাঁকা জায়গায় মসজিদ তৈরি হয়নি, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেখানে কোনও মন্দিরই ছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য আদালত নিশ্চিত নয়।
বাবরের আমলে তৈরি বাবরি মসজিদ। কোনও ফাঁকা জায়গায় মসজিদ তৈরি হয়নি, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেখানে কোনও মন্দিরই ছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য আদালত নিশ্চিত নয়।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৩ সালে খননকার্য শুরু করে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই। তার আগেও অবশ্য ওই চত্বরে খোঁড়াখুঁড়ি চলে।
১৮৬২-৬৩ সাল থেকেই অযোধ্যা চত্বরে প্রত্নতাত্মিক নিদর্শনের খোঁজ শুরু হয়। প্রথম অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার কানিংহাম। এরপর ১৮৮৯-৯১, ১৯৬৯-৭০ সালেও চলে সর্বেক্ষণ।
১৯৭৫-১৯৭৬ সালে বিবি লালের নেতৃত্বে বিতর্কিত জায়গায় খননকার্য চলে। বিবি লাল ও তাঁর টিম দাবি করে, কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন তারা পেয়েছেন। যার আকার বাবরি মসজিদের থেকেও বিশাল। তাঁরাই প্রথম বেশ কিছু স্তম্ভের সন্ধান পান।
১৯৯২ সালে ওয়াই ডি শর্মা ও কে এম শ্রীবাস্তবের অনুসন্ধানেও মন্দিরের মতো স্থাপত্যের বিষয়টি উঠে আসে।
আদালতের নির্দেশে, ২০০৩ সালে এএসআই গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার বা জিপিআর সমীক্ষা চালায়। ঠিক কী মিলেছিল এই খনন কার্যে?
খ্রীষ্টপূর্বাব্দ ১৩ শতকের নিদর্শন মিলেছিল খনন কার্যে। কুষাণ ও শাং আমল থেকে গুপ্ত যুগের বেশ কিছু নিদর্শন মেলে। ১৫ বাই ১৫ ফুটের একটি মঞ্চ মিলেছিল। তার ওপর ছিল বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। মন্দিরের আদলের স্থাপত্যের হদিশ পায় এএসআই। অনুমান, এই স্থাপত্য সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীর আমলের।
আর এই স্থাপত্যের ওপরেই ১৬ শতকে তৈরি হয় বাবরি মসজিদ। মসজিদের নীচে অন্তত ৫০টি স্তম্ভের খোঁজ পায় এসএসআই। তবে সম্ভাব্য বৌদ্ধ ও জৈন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথাও জানিয়েছিল আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।
তিন রকমের দেওয়ালের হদিশ মিলেছিল। যার বয়সকালও এক এরকম। তারমধ্যে কিছু জিনিস গৌতম বুদ্ধের জন্মেরও ৪০০ বছর আগেকার। দেওয়ালে খোদাই ছিল পদ্ম ও ময়ুর, হাতি, ঘোড়া, কুমিরের মূর্তি। মিলেছিল যজ্ঞ কুণ্ডের মতো জায়গাও।
সুপ্রিম কোর্ট এই নিদর্শনকে সরাসরি মন্দির মানতে নারাজ। আবার এই নিদর্শন, হিন্দু স্থাপত্যের দিকেই ইঙ্গিত করছে। যদিও রিপোর্ট বিকৃতির অভিযোগও আছে। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মুরলীমনোহর যোশী। বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় যাঁর নাম জড়িয়ে। তবে সুপ্রিম কোর্টের কলমের খোঁচায় সেই রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে আর প্রশ্ন রইল না।