Behala Accident: ২৫ অগাস্ট জন্মদিনে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রিন্সেপ ঘাট ঘুরতে যাওয়া হল না ছোট্ট সৌরনীলের!
অয়ন ঘোষাল ও রণয় তিওয়ারি: ২১ দিন পর, ২৫ অগাস্ট-ই ছিল সৌরনীলের জন্মদিন। স্কুলের রেজিস্ট্রারে তেমনটাই লেখা। কিন্তু শুক্রবারের অভিশপ্ত সকাল মা-বাবার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে ছোট্ট সৌরনীলকে। চোখের সামনে নিজের সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেছেন বাবা সরোজ কুমার সরকার। ঘাতক লরি তাঁর পায়ের উপর দিয়েও চলে গিয়েছে। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিদ্যাসাগর হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে এসএসকেএম-এ। বর্তমানে তিনি পিজির ট্রমাকেয়ারে আছেন। স্থিতিশীল আছেন। এক্সরে সহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ওদিকে মা দীপিকা সরকার স্কুলেই আছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হতভাগ্য মা।
বেহালা চৌরাস্তায় অবস্থিত বড়িশা হাইস্কুল। সেই স্কুলেরই দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল নবপল্লী রবীন্দ্রনাথ টেগোর রোডের বাসিন্দা সৌরনীল। আজ স্কুলে পরীক্ষা ছিল। স্কুলে আসার সময়ই সকাল ৭টা ১০ নাগাদ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্কুলের সামনেই ছোট্ট সৌরনীলকে পিষে দিয়ে যায় দ্রুতগতিতে ধাবমান একটি লরি। এই ঘটনায় স্কুলের এক শিক্ষক কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেছেন, 'দৌড়ে ছুটে গিয়ে দেখি বাচ্চাটি স্পট ডেড। বাবাকে আমরা-ই উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠাই। মাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে টিচার্স রুমে বসাই। তারমধ্যে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে থাকে পুলিস! স্কুলের অন্য বাচ্চারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বার বার পুলিসকে বলা সত্ত্বেও স্কুলের সামনে কোনও ট্রাফিক দেয়নি! সকালবেলা স্কুলে ঢোকা যায় না এমন অবস্থা থাকে!' (ছবিতে স্কুলের কম্পিউটারে সৌরনীলের নাম)
এদিনও ঘাতক লরিটির চালক লাল সিগন্যাল ভেঙে দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। দুর্ঘটনার বেশ খানিকক্ষণ পর ঘাতক লরি ও লরিচালককে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে আটক করে পুলিস। দুর্ঘটনাস্থলের পর থেকে বিদ্যাসাগর সেতু পর্যন্ত যতগুলি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, সেইসব ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজে লরিটির গতিবিধি ট্র্যাক করে লরিটিকে ধরা হয়। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে সাউথ ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ডের সঙ্গে বেহালা, ঠাকুরপুকুর, পর্ণশ্রী ও হরিদেবপুর থানা বৈঠকে বসবে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ ডায়মণ্ডহারবার রোড যে যে থানাগুলির আওতায় পড়ছে, তারা প্রত্যেকেই বৈঠকে বসবে। কঠোর করা হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। এমনটাই জানা গিয়েছে পুলিস সূত্রে।
ক্লাস টিচার মমতা ঘোষ বলেন, '২৫ আগস্ট সৌরনীলের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে বাবা, মায়ের সঙ্গে প্রিন্সেপ ঘাটে ঘুরতে যাবে বলে জানিয়েছিল সৌরনীল। অত্যন্ত মিশুকে ও পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিল সে। কোনও বিষয়ে ডাউট হলে, ভালো করে বুঝে নিত। শরীর খারাপ না হলে স্কুল কামাই একদম-ই করত না।' কথা বলতে বলতে গলা বুজে আসে সৌরনীলের ক্লাস টিচার মমতা ঘোষের। ছোট্ট সৌরনীলের মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া গোটা স্কুল জুড়ে। অন্যদিন ক্লাসরুমগুলো বাচ্চাদের কোলাহলে যেভাবে গমগম করে, সৌরনীলের মৃত্যুতে আজ তা পুরো নিস্তব্ধ। (ছবিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সৌরনীলের বানানো অরিগ্যামি)
ক্লাস টিচার মমতা ঘোষ আরও জানান, 'বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সৌরনীল। গোটা পরিবারটাই শেষ হয়ে গেল।' শোকস্তব্ধ সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। ওদিকে এদিন ঘটনার পর রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বেহালা চৌরাস্তা। পুলিসের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়, আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।