Mohenjo-daro: এক বাঙালির হাত ধরে ১০০ বছর আগে মাটির তলা থেকে উঁকি দিল সিন্ধু সভ্যতার স্মৃতি!
ঠিক একশো বছর আগে অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের হরপ্পা অঞ্চলে শুরু হল প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। খোঁজ পাওয়া গেল কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এক নগরসভ্যতার। পরের বছর খননকাজ শুরু হল সিন্ধুপ্রদেশের মহেঞ্জোদরোতে। দেশভাগের পর এ দু'টি অঞ্চল এখন পাকিস্তানে। সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সভ্যতা ইতিহাসের পাতায় সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত।
হরপ্পা, মহেঞ্জোদরো আবিষ্কারের মাধ্যমে ভারতীয় সভ্যতার ঊষাকাল এক ধাক্কায় পিছিয়ে গেল তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগে। আর এই সভ্যতা আবিষ্কারের কৃতিত্ব যাঁদের, সেই তালিকায় জন মার্শাল, দয়ারাম সাহানি, মার্টিমার হুইলারের সঙ্গে সসম্মানে স্থান করে নিলেন এক বাঙালি ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো নামগুলি শুনলেই বাঙালির সবার আগে যাঁর নাম মনে আসে তিনি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ থেকে একশো বছর আগে যিনি আবিষ্কার করেন সিন্ধু সভ্যতার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর মহেঞ্জোদরো।
১৯২১-'২২ নাগাদ রাখালদাস যখন মহেঞ্জোদরোতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন তার ঠিক একবছর আগে দয়ারাম সাহানি খনন করেন হরপ্পা। হরপ্পা থেকে কিছু শিলমোহর এর আগেও পাওয়া গিয়েছিল বটে কিন্তু সেগুলো যে প্রাচীন পৃথিবীর বৃহত্তম ও ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম এক সভ্যতার অঙ্গ, সেই উপলব্ধিতে পৌঁছনোর সূচনা হয়েছিল আজ থেকে একশো বছর আগেকার ওই হরপ্পা খনন থেকেই।
দু'টি মাত্র কেন্দ্র দিয়ে যে সভ্যতা বিশ্ব দরবারে আত্মপ্রকাশ করেছিল সেই সংখ্যাটা আজ শতবর্ষ পার করে তিন হাজার ছাড়িয়েছে। বহরে ছাড়িয়েছে ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। বালুচিস্তান, সিন্ধ, পাঞ্জাব, কাশ্মীর, গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা ছাড়িয়ে উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত ব্যাপ্ত এই সভ্যতার আবিষ্কারের প্রাথমিক বিস্ময় এখনও কাটেনি।
সিন্ধু নদ ও তার বিভিন্ন উপনদীর ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার প্রথম পরিচয় ছিল সিন্ধু সভ্যতা হিসেবেই। কিন্তু গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান যত এগতে থাকল, তত দেখা গেল এই সভ্যতার এক বিরাট বড় অংশ বাঁধা রয়েছে ইদানীং-বিলুপ্ত প্রাচীন সরস্বতী ও তার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত নদীগুলির সভ্যতায়।
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের একশো বছর পার করে ক্রমশ বোঝা যাচ্ছে, আমাদের নিজস্ব অতীতটা একটু একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একশো বছরের হিসেবটা কেবলমাত্র একটা সংখ্যা। পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে একটু-একটু করে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাকে বুঝে নেওয়ার জন্য একশো বছর শুধুই একটা হিসাব মাত্র।