সিনে- `মা`: বাংলা ছবির বিখ্যাত মায়েরা

Sun, 09 May 2021-3:15 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন- বাংলা ছবিতে আমরা বেশ কয়েকজন এমন মা দেখেছি, যাঁরা দশক পার করেও থেকে গেছেন দর্শকের মনে। 'মা' শব্দটি উচ্চারণ করলে ঠিক যে যে অনুভূতি ভিতরে অনুরণিত হয়, এই অভিনেতারা তাঁদের অভিনয়ের সূক্ষ্মতা দিয়ে ধরেছেন সেই বৈশিষ্ট্য। বাংলা ছবির আইকনিক মা নিঃসন্দেহে সর্বজয়া। 'পথের পাঁচালি' ছবিতে এই সর্বজয়া চরিত্রটি কোমলে-কঠোরে যেভাবে চিত্রনাট্যে তৈরি করেছেন সত্যজিৎ, পর্দায় তাকে তেমনই বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তুলেছেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর কাস্টিং নিয়ে পরে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকের মতেই, দক্ষিণ কলকাতার বালিগ়্জের উচ্চশিক্ষিত করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছুতেই নিশ্চিন্দিপুরের গরীব বাড়ির বৌ হিসাবে মানায় নি। কিন্তু এত বছর পরেও বাংলা ছবিতে মা শব্দটি উচ্চারণ করলে প্রথমেই মনে পড়ে সর্বজয়াকে। বিশেষত, দুর্গাকে কোলে নিয়ে বসে থাকা এই দৃশ্য ভুলতে পারবেন না আন্তর্জাতিক ছবির দর্শকও।

ছবি- মেঘে ঢাকা তারা। ৩ ছেলেমেয়ের মা চরিত্রে গীতা দে।  ছিন্নমূল জীবন, অনটন, ছেলের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার শখ, ছোটমেয়ের পড়াশোনা, এই সবের ভরসা বড়মেয়ে নীতা।  তাই নীতার আয়ের উপর নির্ভর করেই ছোট মেয়েকে ঠেলে দেন নীতারই প্রেমিকের দিকে। ছবির একটা অংশে বড় নিষ্ঠুর, কুটিল লাগে গীতা দে অভিনীত চরিত্রটিকে। কিন্তু দুর্বিষহ জীবনের যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এই মা আঁকেন, তা টাইমলেস।

'মার মতোই আবার পালিয়ে যাবি না তো রে দিদি?' ঋত্বিক ঘটকের 'সুবর্ণরেখা' ছবির কথা মনে হলেই এই কথাগুলো কানে রিনরিন করে বাজে। সীতার মাতৃরূপ ছবিতে এমনভাবে প্রকাশিত হয়, তা ভারতীয় ছবিতে অবিস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে। ঋত্বিক তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে দেশভাগ, আদর্শবাদ, দুর্নীতি, শিল্প ও জীবনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, শিল্পের পরিধি ও শ্রেণি সংগ্রামের বিষয়টি তুলে ধরেছেন 'সুবর্ণরেখা' ছবিতে। এই ছবিতে মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রটির 'মা' হয়ে ওঠা ভুলতে পারবেন না দর্শক।

বাংলা ছবির এক জাঁদরেল মা। উত্তম-সুচিত্রা যুগ থেকে বাংলা ছবির আইকনিক মা হয়ে ওঠেন ছায়া দেবী। 'সপ্তপদী'র রিনা ব্রাউন আসলে  যে আই-র গর্ভজাত, তিনি তো ছায়া দেবীই। আবার 'সাত পাকে বাঁধা' ছবিতে সম্পূর্ণ বিপরীত এক মা, যিনি মেয়ের সংসার গুছিয়ে দিতে গিয়ে তার ক্ষতি ডেকে আনেন। বাংলা ছবিতে এমন আজস্র চরিত্রে অভিনয় তাঁকে এক মায়ের অবয়ব দিয়েছে।

বাংলা ছবির আরেক আটপৌরে মা গীতা সেন। কখনও উচ্চকিত নন, অথচ ছবির মধ্যে ফল্গুধারার মত তাঁর উপস্থিতি। 'একদিন প্রতিদিন' ছবিতে মেয়ের বাড়িতে না ফেরা যে মাকে কীভাবে অসহায় করে তুলতে পারে, গীতা সেনের অভিনয়ের কারণেই এই ছবি বারবার ফিরে দেখতে হয়।

নীহার রঞ্জন গুপ্তের লেখা 'উত্তর ফাল্গুনি'। জীবনের ঘোর দুর্বিপাকে পড়ে দেবযানী হয়েছিলেন পান্নাবাঈ। কিন্তু কন্যা সুপর্ণার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন মা দেবযানী। তাঁকে বড় করে তোলেন দেবযানীর প্রেমিক মণীশ। মা-মেয়ের দ্বৈত চরিত্রে সুচিত্রা সেনের অভিনয় তাঁকে কাল্ট করে দিল।  নায়িকা থেকে অভিনেত্রী হিসাবে তাঁর উত্তরণ ঘটালো এই ছবিটিই।

উচ্চাকাঙ্খী মা। নৃত্যশিল্পী। সঙ্গীত-নাটক অকাদেমি পান আর তাঁর রূপ-গুণ-খ্যাতি ক্রমশ দূরে ঠেলতে থাকে তাঁক কন্যাকে। ডাক্তার মেয়ের উন্নাসিকতাকে পাত্তা দেন না, অথচ অগোচরে থেকে যাওয়া মনের দুঃখ খুব সহজেই ছুঁয়ে ফেলেন মাতৃত্ব দিয়ে। এমন চরিত্র আইকনিক হবে না! আর বলাই বাহুল্য, এই  'মা' চরিত্রটিকে অমর করে দিলেন অপর্ণা সেন।

অপর্ণা সেনের 'পারমিতার একদিন' ছবির সনকার কথাও বলতেই হবে আজকের দিনে। শাশুড়ি মা হয়েও পারমিতার জীবনে যেভাবে ত্রাতার ভূমিকায় তিনি দাঁড়ান, তা ব্যতিক্রমী। এমন মায়েরা উদাহরণ হিসাবে বারবার ফিরে আসুন, বাংলা ছবিতে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link